বিচিত্র

হাঙর কতাটা ভয়ানক প্রাণী?

ডেস্ক, রাজনীতি ডটকম
আপডেট : ২৪ এপ্রিল ২০২৫, ২৩: ২২
হাঙর মোটেও ভয়ানক প্রাণী নয়

স্টিভেন স্পিলবার্গের বিখ্যাত ‘জস’ সিনেমাটি যারা দেখেছেন, তাদের অনেকের মনেই হাঙর মানেই যেন এক রক্তপিপাসু দানবের ছবি ফুটে ওঠে। সিনেমার বিশাল চোয়ালওয়ালা হাঙর যেন শুধু মানুষের রক্তের গন্ধ পেলেই ছুটে আসে। এই ছবির প্রভাব এতটাই গভীর ছিল যে হাঙর নিয়ে মানুষের মনে ভয় একপ্রকার স্থায়ী জায়গা করে নেয়। কিন্তু সত্যি কি হাঙর তেমনই ভয়ংকর প্রাণী?

বিজ্ঞান ও গবেষণা বলছে, আমাদের এই ভয় অনেকাংশেই ভিত্তিহীন। যুক্তরাষ্ট্রের ন্যাশনাল ওশেন সার্ভিস (National Ocean Service)–এর বিজ্ঞানীরা জানিয়েছেন, বাস্তব জীবনের হাঙর সিনেমার হাঙরের মতো হিংস্র বা ভয়ংকর নয়। তারা বলছেন, হাঙর মূলত নিজের খাদ্যের প্রয়োজনেই শিকার করে। মানুষ তাদের নিয়মিত শিকারের তালিকায় নেই।

পৃথিবীতে প্রায় ৪০০টিরও বেশি প্রজাতির হাঙর রয়েছে। কিন্তু এর মধ্যে হাতে গোনা কয়েকটি প্রজাতি—যেমন গ্রেট হোয়াইট শার্ক (Great White Shark), বুল শার্ক (Bull Shark) ও টাইগার শার্ক (Tiger Shark) কিছু সময় মানুষকে আক্রমণ করেছে। তবে বিজ্ঞানীরা বলেন, বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই এগুলো "ভুল পরিচয়ের কারণে" ঘটে।

বিখ্যাত সামুদ্রিক জীববিজ্ঞানী ম্যাসাচুসেটসের ফিশারিজ বিভাগে ড. গ্রেগ স্কমাল হাঙর গবেষক হিসেবে কাজ করেন, তিনি বলেন, “মানুষ হাঙরের প্রাকৃতিক খাদ্য নয়। তারা সাধারণত সিল বা কচ্ছপ শিকার করে। অনেক সময় সার্ফ বোর্ডে থাকা মানুষকে সিল মনে করে আক্রমণ করে। সেটা একটা দুঃখজনক দুর্ঘটনা, ইচ্ছাকৃত শিকার নয়।”

হাঙরের শরীর গঠিত হয় শক্তিশালী মাংসপেশী ও ধারালো দাঁত দিয়ে, যা তাকে দক্ষ শিকারিতে পরিণত করে। তবে তার চেয়েও আশ্চর্যের বিষয় হলো, হাঙরের ঘ্রাণশক্তি। বিজ্ঞানীরা বলছেন, তারা এক ফোঁটা রক্ত কয়েকশ মিটার দূর থেকেও টের পায়। কিন্তু এর মানে এই নয় যে তারা রক্ত দেখলেই হিংস্র হয়ে ওঠে।

ড. স্যামুয়েল গ্রাবার (Dr. Samuel Gruber), যিনি হাঙরের আচরণ নিয়ে দীর্ঘদিন গবেষণা করেছেন, বলেন, “ঘ্রাণ বা শব্দ দ্বারা হাঙর শিকারের উপস্থিতি বোঝে ঠিকই, কিন্তু তারা অনেক কিছু পর্যবেক্ষণ করে তারপর সিদ্ধান্ত নেয়। মানুষকে দেখে তারা সাধারণত আগ্রহ হারিয়ে ফেলে।”

ইন্টারন্যাশনাল শার্ক অ্যাটাক ফাইল (ISAF) এর তথ্য অনুযায়ী, প্রতিবছর সারা বিশ্বে গড়ে ৭০-৮০টি হাঙরের আক্রমণের ঘটনা ঘটে। তার মধ্যে মৃত্যুর ঘটনা হয় মাত্র ৫-১০টি। তুলনা করে দেখা যায়, বছরে শুধু মশার কামড়ে ৭ লাখের বেশি মানুষ মারা যায়, বা কুকুরের কামড়ে মারা যায় ২৫,০০০-এর বেশি মানুষ। সেদিক থেকে হাঙরের ভয় অনেকটাই অতিরঞ্জিত।

হাঙরের খাদ্যাভ্যাস প্রজাতিভেদে ভিন্ন। ছোট হাঙর ছোট মাছ, কাঁকড়া ও জলজ পোকামাকড় খায়। বড় হাঙর ডলফিন, সিল বা এমনকি মৃত তিমিও খেতে পারে। হ্যামারহেড শার্ক নামক এক ধরনের হাঙর তো সামুদ্রিক ঘাসও খায়! তাই তাদের সবাইকে এক কাতারে ফেলে “রক্তপিপাসু” বলা অবিচার।

এখানে আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো—হাঙরের জন্য সবচেয়ে বড় হুমকি আসলে মানুষই। প্রতিবছর লাখ লাখ হাঙর মানুষ শিকার করে, বিশেষ করে চীনে হাঙরের স্যুপের জন্য। পরিবেশবিদরা বলছেন, এর ফলে অনেক হাঙর প্রজাতিই বিলুপ্তির পথে।

পরিবেশবাদী সংগঠন মেরিন কনজারভেশন সোসাইটির সদস্য ড. লুসি ক্লার্ক বলেন, “আমরা যদি এই শিকার বন্ধ না করি, তাহলে কিছু হাঙর প্রজাতি এক দশকের মধ্যেই পৃথিবী থেকে হারিয়ে যেতে পারে।”

হাঙর আমাদের ভয়ের কারণ হওয়ার বদলে প্রকৃতির ভারসাম্য রক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। তারা সামুদ্রিক খাদ্যচক্রের শীর্ষে থেকে দুর্বল ও অসুস্থ প্রাণীগুলো খেয়ে সমুদ্রের জীববৈচিত্র্য বজায় রাখে। তাই হাঙরকে ভয় পাওয়ার বদলে বুঝে নেওয়া জরুরি। তারা সিনেমার ‘দানব’ নয়, বরং প্রকৃতির একটি অপূর্ব সৃষ্টি। যেমনটা ড. স্কমাল একবার বলেছিলেন, “যত বেশি জানবেন, তত কম ভয় পাবেন। আর হাঙরের ক্ষেত্রে সেটা একেবারেই সত্য।”

সূত্র: বিবিসি ফোকাস

ad
ad

খবরাখবর থেকে আরও পড়ুন

ওসমান হাদির মৃত্যুতে যা বলল জাতিসংঘ

তিনি বলেন, গত বছর বাংলাদেশে ছাত্র-জনতার গণআন্দোলনের বিশিষ্ট নেতা শরিফ ওসমান বিন হাদির হত্যাকাণ্ডে তিনি গভীরভাবে মর্মাহত। তিনি উল্লেখ করেন, গত সপ্তাহে গুলিবিদ্ধ হয়ে আহত হওয়ার পর গতকাল সিঙ্গাপুরে চিকিৎসধীন অবস্থায় মৃত্যুবরণ করেন হাদি।

৫ ঘণ্টা আগে

সীমান্তে অতন্দ্র প্রহরীর দায়িত্ব পালন করছে বিজিবি: প্রধান উপদেষ্টা

প্রধান উপদেষ্টা বলেন, বিশেষ করে জুলাই গণঅভ্যুত্থানের পর দেশের সার্বভৌমত্ব ও সীমান্তের নিরাপত্তা রক্ষায় বিজিবি সীমান্ত উত্তেজনা ও পুশইন রোধসহ বিভিন্ন নিরাপত্তা ঝুঁকি মোকাবিলায় পেশাদারিত্ব বজায় রেখে কাজ করে যাচ্ছে।

৬ ঘণ্টা আগে

উদীচীর কার্যালয়ে ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, সন্ধ্যা ৭টার দিকে একদল লোক এসে কার্যালয়টি ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করে। আগুন লাগার পর কার্যালয়ের ভেতরে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। খবর পেয়ে ফায়ার সার্ভিসের ৫টি ইউনিট ঘটনাস্থলে পৌঁছে আগুন নিয়ন্ত্রণে কাজ করছে। ঘটনার পর আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের সতর্ক উপস্থিতি দেখা গেছে।

৬ ঘণ্টা আগে

শাহবাগে অবস্থান কর্মসূচি আজকের মতো সমাপ্ত ঘোষণা

রাত সাড়ে নয়টার দিকে এই ঘোষণার পর মঞ্চে থাকা নেতারা শাহবাগ ত্যাগ করলেও এখনও অনেকেই ওই এলাকায় অবস্থান করছেন। কোনো স্লোগান বা বক্তব্য অবশ্য দেওয়া হচ্ছে না।

৬ ঘণ্টা আগে