
বিবিসি

ওয়াশিংটন ও মস্কোর মধ্যে সাম্প্রতিক সপ্তাহগুলোতে দ্রুত উত্তেজনা বেড়েছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র রাশিয়ার তেল কোম্পানি রসনেফট ও লুকঅয়েলের ওপর নতুন নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে। অন্যদিকে ক্রেমলিন পরীক্ষা করেছে তাদের নতুন পারমাণবিক শক্তিচালিত বুরেভেস্টনিক ক্রুজ ক্ষেপণাস্ত্র ও পসাইডন আন্ডারওয়াটার ড্রোন।
দুই দেশই বলেছে, তারা পারমাণবিক পরীক্ষা পুনরায় শুরু করতে পারে। দুই দেশ যে কেবল হুমকি দিচ্ছে তা নয়, বরং স্থলভাগেও যুদ্ধ অব্যাহত রয়েছে। বছরের শুরুতে সম্পর্ক উন্নতির সম্ভাবনা থাকলেও এখন পরিস্থিতি নাটকীয়ভাবে পাল্টে গেছে।
ডোনাল্ড ট্রাম্প হোয়াইট হাউজে প্রবেশ করেছিলেন ইউক্রেন যুদ্ধ শেষ ও ‘ভ্লাদিমিরের সঙ্গে শান্তি স্থাপন’ করার প্রতিশ্রুতি দিয়ে। কিন্তু যুদ্ধ এখনো অব্যহত রয়েছে এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও রাশিয়া শান্তি প্রস্তাবের বদলে হুমকি দেওয়া চালিয়ে যাচ্ছে। এ ক্ষেত্রে এটি স্পষ্ট হয়েছে, পুতিনের সঙ্গে ব্যক্তিগত কূটনীতিতে ট্রাম্পের বাজি এখনো কাজ করেনি।
ট্রাম্পের দ্বিতীয় মেয়াদের শুরুর দিকে কিছুটা অগ্রগতির আংশিক ইঙ্গিত পাওয়া গিয়েছিল। রাশিয়ার পূর্ণমাত্রার আক্রমণের পর প্রথমবার ওয়াশিংটন ও মস্কো সরাসরি আলোচনা করে। দুই প্রেসিডেন্ট নিয়মিত ফোনে কথা বলেন এবং গত আগস্টে আলাস্কায় বৈঠক করেন। এ মুহূর্তে দুপক্ষের একমাত্র সাফল্য— সংলাপ অন্তত চলছে।
মার্কিন জাতীয় নিরাপত্তা কাউন্সিলের ইউরোপ ও রাশিয়াবিষয়ক সাবেক সিনিয়র ডিরেক্টর অ্যান্ড্রু পিক বলেন, ‘আমরা অন্তত শান্তি প্রক্রিয়া নিয়ে কথা বলছি— এটাই বড় অগ্রগতি। অবস্থান তুলে ধরা, মতবিনিময় করা— এটাই কূটনীতির ভিত্তি।
ট্রাম্প ব্যক্তিগত সম্পর্কের ওপরই বেশি ভরসা করেছেন। তিনি তার পুরনো নিউইয়র্ক রিয়েল এস্টেট ব্যবসায়িক ঘনিষ্ঠ বন্ধু স্টিভ উইটকফকে বিশেষ দূত হিসেবে পুতিনের সঙ্গে দেখা করার জন্য বেশ কয়েকবার পাঠিয়েছেন। প্রতিটি সফরের পর দুপক্ষই জানায়, তারা ‘সমঝোতার কাছাকাছি’ চলে এসেছে।
কিন্তু পররাষ্ট্র নিয়ে যারা কাজ করেন সেসব মহলে উইটকফের কূটনৈতিক অভিজ্ঞতা নিয়ে সন্দেহ আছে। নাম প্রকাশ না করার শর্তে ইউরোপের দুই কূটনীতিক বিবিসিকে জানান, উইটকফ প্রায়ই পুতিন ছাড় দেবেন— এমন ভুল ধারণা ধরে নিয়ে মস্কো যেতেন। কিন্তু পরে হোয়াইট হাউজ দেখত বাস্তবতা তার উলটো।
রাশিয়ার একজন সাবেক জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা বিবিসিকে বলেন, উইটকফ রাশিয়ার অবস্থানের সূক্ষ্মতা বুঝতে পারতেন না এবং ক্রেমলিনকে মার্কিন নীতি ব্যাখ্যা করার ক্ষেত্রেও অসঙ্গত ছিলেন। ফলে উভয় পক্ষই প্রায়ই বিপরীত উদ্দেশ্য নিয়ে কথা বলছিল।
এ বিভ্রাট আলাস্কার পুতিন-ট্রাম্প বৈঠকে সবার সামনেই প্রকাশ পায়। সম্মেলন হঠাৎ সংক্ষিপ্ত করা হয়, কোনো স্পষ্ট ব্যাখ্যা ছাড়াই। পরে ট্রাম্প ও পুতিন যখন একটি যৌথ সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত হন, তখন তারা যুদ্ধ শেষের জন্য কোনো সুনির্দিষ্ট পদক্ষেপের ঘোষণা দেননি।
পুতিনের দিক থেকে ন্যূনতম প্রতিশ্রুতিও না পাওয়া ট্রাম্পকে বৈঠকের আয়োজক হিসেবে কঠিন অবস্থায় ফেলে। পর্দার আড়ালে কী হয়েছে তা দুই পক্ষই স্পষ্ট করেনি। ফলে সাংবাদিকরা গোপন সূত্রে তথ্য সংগ্রহের চেষ্টা করেন।
ফিন্যান্সিয়াল টাইমস জানায়, ট্রাম্প ইউক্রেনে যুদ্ধবিরতির বিনিময়ে নিষেধাজ্ঞা শিথিল ও বাণিজ্য বাড়ানোর প্রস্তাব দেন। পুতিন তা সরাসরি প্রত্যাখ্যান করেন এবং ইউক্রেনের আত্মসমর্পণ ও পুরো ডনবাসের নিয়ন্ত্রণ দাবি করেন। তিনি উলটো এক ‘ঐতিহাসিক বক্তৃতা’ দেন, যা ট্রাম্পকে ক্ষুব্ধ করে বলে ওই প্রতিবেদনে উল্লেখ আছে।
ইউরোপের এক কূটনীতিক বিবিসিকে বলেন, ‘আমেরিকানরা আলাস্কায় অগ্রগতির ঘাটতি দেখে সত্যিই হতাশ হয়েছিল।’ আরেকজন বলেন, তারা ভুল বুঝেছিল যে রাশিয়ার জন্য যুদ্ধ আসলে কী অর্থ বহন করে।
বাইডেন প্রশাসনের সময়ে মার্কিন জাতীয় নিরাপত্তা কাউন্সিলের সাবেক রাশিয়া উপদেষ্টা এরিক গ্রিন বলেন, ‘সম্ভাব্য ছাড় ও বিনিময় নিয়ে অনেক ভুল বোঝাবুঝি ছিল। অঞ্চল ছাড়াও নিরাপত্তা নিশ্চয়তার বিষয় ছিল, আর ট্রাম্প প্রশাসনের কিছু মানুষ বুঝতে পারেনি পুতিন যুদ্ধের মূল কারণ বলতে কী বোঝাচ্ছেন।
ট্রাম্প নিজেও এ নিয়ে হতাশ হয়েছিলেন। অক্টোবরের নিষেধাজ্ঞা ঘোষণার সময় সেই তীব্র হতাশার কথা গোপন করেননি তিনি। বলেন, ‘প্রতিবার ভ্লাদিমিরের সঙ্গে আলোচনা করি, ভালো কথা হয়, কিন্তু কিছুই এগোয় না।’
মস্কোতে রাশিয়ার সরকারি অবস্থান সাম্প্রতিক মাসগুলোতে খুব একটা বদলায়নি। যুদ্ধ শেষ করতে হলে পুতিনের শর্তগুলো হলো—
রাশিয়া বলছে, একটি পূর্ণাঙ্গ রাজনৈতিক চুক্তির পরই যুদ্ধ থামবে। ওয়াশিংটন ও কিয়েভের কাছে এটি অগ্রহণযোগ্য। তাদের মতে, আগে যুদ্ধবিরতি হতে হবে।
অ্যান্ড্রু পিক বলেন, অগ্রগতি করতে হলে তিন বিষয়ে সমঝোতা জরুরি— ভূখণ্ড, ইউক্রেনের রাজনৈতিক ভবিষ্যৎ ও ইউক্রেনের নিরাপত্তা ব্যবস্থা। এসব বিষয়ের কোনোটিতেই প্রায় কোনো অগ্রগতি হয়নি বলে মনে করছেন তিনি।
ট্রাম্প শুরুতে ভূখণ্ডের বিষয়ে আপসের ক্ষেত্রে নমনীয় ছিলেন। এপ্রিলেই তিনি বলেছিলেন, ‘ক্রিমিয়া রাশিয়ার মতোই থাকবে’ এবং তার দল ২০১৪ সালে এ অঞ্চলের অধিগ্রহণের স্বীকৃতির সম্ভাবনাও পরখ করেছিল বলে মিডিয়া রিপোর্টে উল্লেখ আছে।
অক্টোবরে ভলোদিমির জেলেনস্কির সঙ্গে বৈঠকেও ট্রাম্প ‘অঞ্চল বিনিময়’ প্রস্তাব তোলেন বলে রয়টার্স জানায়।
রাশিয়াও কিছুটা নমনীয়তার ইঙ্গিত দিয়েছিল। তুরস্কের পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেছিলেন, দক্ষিণ ইউক্রেনের বর্তমান ফ্রন্টলাইন ধরে মস্কো হয়তো সমঝোতা করতে পারে। তবে তিনি এটাও বলেন, রাশিয়া এখনো খনিজ সম্পদে সমৃদ্ধ ডনবাস অঞ্চলের পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ চায় যেখানে তারা আংশিক হামলা করেছে।
ক্রেমলিন জানিয়েছে, চলমান আলোচনার মধ্যে ভূখণ্ড সংক্রান্ত বিষয়সহ কোনো বিস্তারিত বিবরণ প্রকাশ করবে না। কিন্তু কূটনীতিকরা জোর দিয়ে বলেন, ইউক্রেনের ভূমির ওপর নিয়ন্ত্রণ সবচেয়ে জটিল বিষয় নয়।
ইউরোপের এক জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা বিবিসিকে বলেন, ট্রাম্প তার ব্যবসায়িক মানসিকতায় ‘রিয়েল এস্টেট ডিল’ চেয়েছিলেন। কিন্তু পুতিনের কাছে বিষয়টি শুধু ভূখণ্ডের বিষয় নয়— এটি ইউক্রেনের ওপর সার্বভৌমত্বের বিষয়।
অর্থাৎ কিয়েভের কাছে মূল বিষয় হলো রাজনৈতিক দিকনির্দেশনা ও সামরিক সক্ষমতার নিয়ন্ত্রণ। মস্কো যথাযথ ‘নিরপেক্ষতা’ ও ইউক্রেনের সশস্ত্র বাহিনীর ব্যাপক হ্রাস চায়। অন্যদিকে কিয়েভ যুক্তরাষ্ট্র ও ন্যাটোর কাছ থেকে পোক্ত নিরাপত্তার নিশ্চয়তা দাবি করে।
পিক বলেন, নিরাপত্তা নিশ্চয়তায় রাশিয়া একেবারেই নমনীয় না। তারা ২০২২ সালেও এ বিষয়ে অনড় ছিল, এখনো তাই আছে। এখানে ব্যবধান ভূখণ্ডের প্রশ্নের চেয়ে অনেক বড়।
এই শরতে বুদাপেস্টে শীর্ষ সম্মেলন আয়োজনের ব্যর্থ প্রচেষ্টা অচলাবস্থাকে আরও স্পষ্ট করে তুলেছে। অক্টোবরের মাঝামাঝি সময়ে ফোনালাপের পর ট্রাম্প ও পুতিন মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও ও রাশিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই ল্যাভরভকে প্রস্তুতির দায়িত্ব দেন।
দুই পররাষ্ট্রমন্ত্রী একবার কথা বলেছিলেন, কিন্তু কোনো বৈঠক এখন পর্যন্ত হয়নি। ব্লুমবার্গ জানায়, রুবিও বুঝতে পারছেন মস্কোর অবস্থান বদলায়নি।
ফিনান্সিয়াল টাইমস জানায়, রাশিয়া আবারও তাদের বিশাল দাবিগুলো পুনরাবৃত্তি করে একটি স্মারকলিপি পাঠিয়েছে, যা মার্কিন কর্মকর্তাদের আরও হতাশ করেছে।
১২ নভেম্বর রুবিও বলেন, ‘আমরা কেবল বৈঠকের জন্য বৈঠক চালিয়ে যেতে পারি না।’ পরদিন ল্যাভরভ বলেন, ‘রাশিয়া আলোচনায় অনিচ্ছুক— এ অভিযোগ স্পষ্ট মিথ্যা। মস্কো দ্বিতীয় ট্রাম্প-পুতিন বৈঠকের জন্য প্রস্তুত, যদি তা আলাস্কা শীর্ষ সম্মেলনের সুপরিকল্পিত ফলাফলের ওপর ভিত্তি করে হয়।’
এদিকে ইউক্রেন ও ইউরোপীয় মিত্ররা ট্রাম্পের সঙ্গে পুনরায় যোগাযোগ স্থাপন করতে বেশ জোরেশোরেই চেষ্টা চালিয়েছে। শুরুতে ট্রাম্প সরাসরি পুতিনের সঙ্গে আলোচনা করতে চাইছিলেন কিয়েভকে পাশ কাটিয়ে, যা ইউক্রেন ও ইউরোপকে উদ্বিগ্ন করে। এরপর ট্রাম্প ইউক্রেন বিষয়ে স্বর নরম করেন।
রাশিয়ার বিপরীতে, ইউক্রেন ওয়াশিংটনের সঙ্গে নমনীয় থেকেছে, যুদ্ধবিরতি ও মস্কোর সঙ্গে সম্ভাব্য আলোচনার মার্কিন প্রস্তাবকে স্বাগত জানিয়েছে। কিয়েভ ও তার মিত্রদের জন্য, লক্ষ্য ছিল সহজ।— ট্রাম্পকে বোঝানো যে পুতিনের কাছে আত্মসমর্পণ ইউরোপীয় ও মার্কিন নিরাপত্তাকে ক্ষতিগ্রস্ত করবে।
একজন ইউরোপীয় কূটনীতিক বিবিসিকে বলেন, আমরা জানতাম যে তিনি অবশেষে বুঝতে পারবেন রাশিয়া সৎ বিশ্বাসে আলোচনা করছে না। আমাদের কাজ ছিল সময় কেনা এবং এটি কাজ করেছে।
মস্কো অবশ্য ইউরোপকে দোষারোপ করছে। ল্যাভরভ বলেন, ‘ইউরোপীয়রা ঘুমোচ্ছে না, তারা এই প্রশাসনকে চাপ দিচ্ছে।’
আলাস্কা সামিটের তিন মাস পরও ক্রেমলিন ও হোয়াইট হাউস কোনো সমঝোতার কাছাকাছি নেই। অক্টোবরে ট্রাম্পের প্রেসিডেন্সিতে প্রথম বড় নিষেধাজ্ঞা ঘোষণা করা হয়, রাশিয়ার বৃহৎ তেল কোম্পানিগুলোকে লক্ষ্য করে।
মার্কিন ট্রেজারি সেক্রেটারি স্কট বেসেন্ট বিবিসি পার্টনার সিবিএসকে বলেন, আমরা যা করছি সবই পুতিনকে আলোচনার টেবিলে আনবে।
তবে পুতিন নিষেধাজ্ঞাকে ‘দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের জন্য ক্ষতিকর’ বলে বর্ণনা করেন। তিনি এ-ও বলেন, রাশিয়া ‘চাপের মুখে নীতি বদলাবে না।’
কিছুদিন পরই মস্কো একটি পারমাণবিক সক্ষম ক্ষেপণাস্ত্র পরীক্ষা চালায়, যা ইঙ্গিত দেয় যে আলোচনা নয়, বরং নতুন করে শক্তির প্রদর্শন চলছে।

ওয়াশিংটন ও মস্কোর মধ্যে সাম্প্রতিক সপ্তাহগুলোতে দ্রুত উত্তেজনা বেড়েছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র রাশিয়ার তেল কোম্পানি রসনেফট ও লুকঅয়েলের ওপর নতুন নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে। অন্যদিকে ক্রেমলিন পরীক্ষা করেছে তাদের নতুন পারমাণবিক শক্তিচালিত বুরেভেস্টনিক ক্রুজ ক্ষেপণাস্ত্র ও পসাইডন আন্ডারওয়াটার ড্রোন।
দুই দেশই বলেছে, তারা পারমাণবিক পরীক্ষা পুনরায় শুরু করতে পারে। দুই দেশ যে কেবল হুমকি দিচ্ছে তা নয়, বরং স্থলভাগেও যুদ্ধ অব্যাহত রয়েছে। বছরের শুরুতে সম্পর্ক উন্নতির সম্ভাবনা থাকলেও এখন পরিস্থিতি নাটকীয়ভাবে পাল্টে গেছে।
ডোনাল্ড ট্রাম্প হোয়াইট হাউজে প্রবেশ করেছিলেন ইউক্রেন যুদ্ধ শেষ ও ‘ভ্লাদিমিরের সঙ্গে শান্তি স্থাপন’ করার প্রতিশ্রুতি দিয়ে। কিন্তু যুদ্ধ এখনো অব্যহত রয়েছে এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও রাশিয়া শান্তি প্রস্তাবের বদলে হুমকি দেওয়া চালিয়ে যাচ্ছে। এ ক্ষেত্রে এটি স্পষ্ট হয়েছে, পুতিনের সঙ্গে ব্যক্তিগত কূটনীতিতে ট্রাম্পের বাজি এখনো কাজ করেনি।
ট্রাম্পের দ্বিতীয় মেয়াদের শুরুর দিকে কিছুটা অগ্রগতির আংশিক ইঙ্গিত পাওয়া গিয়েছিল। রাশিয়ার পূর্ণমাত্রার আক্রমণের পর প্রথমবার ওয়াশিংটন ও মস্কো সরাসরি আলোচনা করে। দুই প্রেসিডেন্ট নিয়মিত ফোনে কথা বলেন এবং গত আগস্টে আলাস্কায় বৈঠক করেন। এ মুহূর্তে দুপক্ষের একমাত্র সাফল্য— সংলাপ অন্তত চলছে।
মার্কিন জাতীয় নিরাপত্তা কাউন্সিলের ইউরোপ ও রাশিয়াবিষয়ক সাবেক সিনিয়র ডিরেক্টর অ্যান্ড্রু পিক বলেন, ‘আমরা অন্তত শান্তি প্রক্রিয়া নিয়ে কথা বলছি— এটাই বড় অগ্রগতি। অবস্থান তুলে ধরা, মতবিনিময় করা— এটাই কূটনীতির ভিত্তি।
ট্রাম্প ব্যক্তিগত সম্পর্কের ওপরই বেশি ভরসা করেছেন। তিনি তার পুরনো নিউইয়র্ক রিয়েল এস্টেট ব্যবসায়িক ঘনিষ্ঠ বন্ধু স্টিভ উইটকফকে বিশেষ দূত হিসেবে পুতিনের সঙ্গে দেখা করার জন্য বেশ কয়েকবার পাঠিয়েছেন। প্রতিটি সফরের পর দুপক্ষই জানায়, তারা ‘সমঝোতার কাছাকাছি’ চলে এসেছে।
কিন্তু পররাষ্ট্র নিয়ে যারা কাজ করেন সেসব মহলে উইটকফের কূটনৈতিক অভিজ্ঞতা নিয়ে সন্দেহ আছে। নাম প্রকাশ না করার শর্তে ইউরোপের দুই কূটনীতিক বিবিসিকে জানান, উইটকফ প্রায়ই পুতিন ছাড় দেবেন— এমন ভুল ধারণা ধরে নিয়ে মস্কো যেতেন। কিন্তু পরে হোয়াইট হাউজ দেখত বাস্তবতা তার উলটো।
রাশিয়ার একজন সাবেক জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা বিবিসিকে বলেন, উইটকফ রাশিয়ার অবস্থানের সূক্ষ্মতা বুঝতে পারতেন না এবং ক্রেমলিনকে মার্কিন নীতি ব্যাখ্যা করার ক্ষেত্রেও অসঙ্গত ছিলেন। ফলে উভয় পক্ষই প্রায়ই বিপরীত উদ্দেশ্য নিয়ে কথা বলছিল।
এ বিভ্রাট আলাস্কার পুতিন-ট্রাম্প বৈঠকে সবার সামনেই প্রকাশ পায়। সম্মেলন হঠাৎ সংক্ষিপ্ত করা হয়, কোনো স্পষ্ট ব্যাখ্যা ছাড়াই। পরে ট্রাম্প ও পুতিন যখন একটি যৌথ সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত হন, তখন তারা যুদ্ধ শেষের জন্য কোনো সুনির্দিষ্ট পদক্ষেপের ঘোষণা দেননি।
পুতিনের দিক থেকে ন্যূনতম প্রতিশ্রুতিও না পাওয়া ট্রাম্পকে বৈঠকের আয়োজক হিসেবে কঠিন অবস্থায় ফেলে। পর্দার আড়ালে কী হয়েছে তা দুই পক্ষই স্পষ্ট করেনি। ফলে সাংবাদিকরা গোপন সূত্রে তথ্য সংগ্রহের চেষ্টা করেন।
ফিন্যান্সিয়াল টাইমস জানায়, ট্রাম্প ইউক্রেনে যুদ্ধবিরতির বিনিময়ে নিষেধাজ্ঞা শিথিল ও বাণিজ্য বাড়ানোর প্রস্তাব দেন। পুতিন তা সরাসরি প্রত্যাখ্যান করেন এবং ইউক্রেনের আত্মসমর্পণ ও পুরো ডনবাসের নিয়ন্ত্রণ দাবি করেন। তিনি উলটো এক ‘ঐতিহাসিক বক্তৃতা’ দেন, যা ট্রাম্পকে ক্ষুব্ধ করে বলে ওই প্রতিবেদনে উল্লেখ আছে।
ইউরোপের এক কূটনীতিক বিবিসিকে বলেন, ‘আমেরিকানরা আলাস্কায় অগ্রগতির ঘাটতি দেখে সত্যিই হতাশ হয়েছিল।’ আরেকজন বলেন, তারা ভুল বুঝেছিল যে রাশিয়ার জন্য যুদ্ধ আসলে কী অর্থ বহন করে।
বাইডেন প্রশাসনের সময়ে মার্কিন জাতীয় নিরাপত্তা কাউন্সিলের সাবেক রাশিয়া উপদেষ্টা এরিক গ্রিন বলেন, ‘সম্ভাব্য ছাড় ও বিনিময় নিয়ে অনেক ভুল বোঝাবুঝি ছিল। অঞ্চল ছাড়াও নিরাপত্তা নিশ্চয়তার বিষয় ছিল, আর ট্রাম্প প্রশাসনের কিছু মানুষ বুঝতে পারেনি পুতিন যুদ্ধের মূল কারণ বলতে কী বোঝাচ্ছেন।
ট্রাম্প নিজেও এ নিয়ে হতাশ হয়েছিলেন। অক্টোবরের নিষেধাজ্ঞা ঘোষণার সময় সেই তীব্র হতাশার কথা গোপন করেননি তিনি। বলেন, ‘প্রতিবার ভ্লাদিমিরের সঙ্গে আলোচনা করি, ভালো কথা হয়, কিন্তু কিছুই এগোয় না।’
মস্কোতে রাশিয়ার সরকারি অবস্থান সাম্প্রতিক মাসগুলোতে খুব একটা বদলায়নি। যুদ্ধ শেষ করতে হলে পুতিনের শর্তগুলো হলো—
রাশিয়া বলছে, একটি পূর্ণাঙ্গ রাজনৈতিক চুক্তির পরই যুদ্ধ থামবে। ওয়াশিংটন ও কিয়েভের কাছে এটি অগ্রহণযোগ্য। তাদের মতে, আগে যুদ্ধবিরতি হতে হবে।
অ্যান্ড্রু পিক বলেন, অগ্রগতি করতে হলে তিন বিষয়ে সমঝোতা জরুরি— ভূখণ্ড, ইউক্রেনের রাজনৈতিক ভবিষ্যৎ ও ইউক্রেনের নিরাপত্তা ব্যবস্থা। এসব বিষয়ের কোনোটিতেই প্রায় কোনো অগ্রগতি হয়নি বলে মনে করছেন তিনি।
ট্রাম্প শুরুতে ভূখণ্ডের বিষয়ে আপসের ক্ষেত্রে নমনীয় ছিলেন। এপ্রিলেই তিনি বলেছিলেন, ‘ক্রিমিয়া রাশিয়ার মতোই থাকবে’ এবং তার দল ২০১৪ সালে এ অঞ্চলের অধিগ্রহণের স্বীকৃতির সম্ভাবনাও পরখ করেছিল বলে মিডিয়া রিপোর্টে উল্লেখ আছে।
অক্টোবরে ভলোদিমির জেলেনস্কির সঙ্গে বৈঠকেও ট্রাম্প ‘অঞ্চল বিনিময়’ প্রস্তাব তোলেন বলে রয়টার্স জানায়।
রাশিয়াও কিছুটা নমনীয়তার ইঙ্গিত দিয়েছিল। তুরস্কের পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেছিলেন, দক্ষিণ ইউক্রেনের বর্তমান ফ্রন্টলাইন ধরে মস্কো হয়তো সমঝোতা করতে পারে। তবে তিনি এটাও বলেন, রাশিয়া এখনো খনিজ সম্পদে সমৃদ্ধ ডনবাস অঞ্চলের পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ চায় যেখানে তারা আংশিক হামলা করেছে।
ক্রেমলিন জানিয়েছে, চলমান আলোচনার মধ্যে ভূখণ্ড সংক্রান্ত বিষয়সহ কোনো বিস্তারিত বিবরণ প্রকাশ করবে না। কিন্তু কূটনীতিকরা জোর দিয়ে বলেন, ইউক্রেনের ভূমির ওপর নিয়ন্ত্রণ সবচেয়ে জটিল বিষয় নয়।
ইউরোপের এক জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা বিবিসিকে বলেন, ট্রাম্প তার ব্যবসায়িক মানসিকতায় ‘রিয়েল এস্টেট ডিল’ চেয়েছিলেন। কিন্তু পুতিনের কাছে বিষয়টি শুধু ভূখণ্ডের বিষয় নয়— এটি ইউক্রেনের ওপর সার্বভৌমত্বের বিষয়।
অর্থাৎ কিয়েভের কাছে মূল বিষয় হলো রাজনৈতিক দিকনির্দেশনা ও সামরিক সক্ষমতার নিয়ন্ত্রণ। মস্কো যথাযথ ‘নিরপেক্ষতা’ ও ইউক্রেনের সশস্ত্র বাহিনীর ব্যাপক হ্রাস চায়। অন্যদিকে কিয়েভ যুক্তরাষ্ট্র ও ন্যাটোর কাছ থেকে পোক্ত নিরাপত্তার নিশ্চয়তা দাবি করে।
পিক বলেন, নিরাপত্তা নিশ্চয়তায় রাশিয়া একেবারেই নমনীয় না। তারা ২০২২ সালেও এ বিষয়ে অনড় ছিল, এখনো তাই আছে। এখানে ব্যবধান ভূখণ্ডের প্রশ্নের চেয়ে অনেক বড়।
এই শরতে বুদাপেস্টে শীর্ষ সম্মেলন আয়োজনের ব্যর্থ প্রচেষ্টা অচলাবস্থাকে আরও স্পষ্ট করে তুলেছে। অক্টোবরের মাঝামাঝি সময়ে ফোনালাপের পর ট্রাম্প ও পুতিন মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও ও রাশিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই ল্যাভরভকে প্রস্তুতির দায়িত্ব দেন।
দুই পররাষ্ট্রমন্ত্রী একবার কথা বলেছিলেন, কিন্তু কোনো বৈঠক এখন পর্যন্ত হয়নি। ব্লুমবার্গ জানায়, রুবিও বুঝতে পারছেন মস্কোর অবস্থান বদলায়নি।
ফিনান্সিয়াল টাইমস জানায়, রাশিয়া আবারও তাদের বিশাল দাবিগুলো পুনরাবৃত্তি করে একটি স্মারকলিপি পাঠিয়েছে, যা মার্কিন কর্মকর্তাদের আরও হতাশ করেছে।
১২ নভেম্বর রুবিও বলেন, ‘আমরা কেবল বৈঠকের জন্য বৈঠক চালিয়ে যেতে পারি না।’ পরদিন ল্যাভরভ বলেন, ‘রাশিয়া আলোচনায় অনিচ্ছুক— এ অভিযোগ স্পষ্ট মিথ্যা। মস্কো দ্বিতীয় ট্রাম্প-পুতিন বৈঠকের জন্য প্রস্তুত, যদি তা আলাস্কা শীর্ষ সম্মেলনের সুপরিকল্পিত ফলাফলের ওপর ভিত্তি করে হয়।’
এদিকে ইউক্রেন ও ইউরোপীয় মিত্ররা ট্রাম্পের সঙ্গে পুনরায় যোগাযোগ স্থাপন করতে বেশ জোরেশোরেই চেষ্টা চালিয়েছে। শুরুতে ট্রাম্প সরাসরি পুতিনের সঙ্গে আলোচনা করতে চাইছিলেন কিয়েভকে পাশ কাটিয়ে, যা ইউক্রেন ও ইউরোপকে উদ্বিগ্ন করে। এরপর ট্রাম্প ইউক্রেন বিষয়ে স্বর নরম করেন।
রাশিয়ার বিপরীতে, ইউক্রেন ওয়াশিংটনের সঙ্গে নমনীয় থেকেছে, যুদ্ধবিরতি ও মস্কোর সঙ্গে সম্ভাব্য আলোচনার মার্কিন প্রস্তাবকে স্বাগত জানিয়েছে। কিয়েভ ও তার মিত্রদের জন্য, লক্ষ্য ছিল সহজ।— ট্রাম্পকে বোঝানো যে পুতিনের কাছে আত্মসমর্পণ ইউরোপীয় ও মার্কিন নিরাপত্তাকে ক্ষতিগ্রস্ত করবে।
একজন ইউরোপীয় কূটনীতিক বিবিসিকে বলেন, আমরা জানতাম যে তিনি অবশেষে বুঝতে পারবেন রাশিয়া সৎ বিশ্বাসে আলোচনা করছে না। আমাদের কাজ ছিল সময় কেনা এবং এটি কাজ করেছে।
মস্কো অবশ্য ইউরোপকে দোষারোপ করছে। ল্যাভরভ বলেন, ‘ইউরোপীয়রা ঘুমোচ্ছে না, তারা এই প্রশাসনকে চাপ দিচ্ছে।’
আলাস্কা সামিটের তিন মাস পরও ক্রেমলিন ও হোয়াইট হাউস কোনো সমঝোতার কাছাকাছি নেই। অক্টোবরে ট্রাম্পের প্রেসিডেন্সিতে প্রথম বড় নিষেধাজ্ঞা ঘোষণা করা হয়, রাশিয়ার বৃহৎ তেল কোম্পানিগুলোকে লক্ষ্য করে।
মার্কিন ট্রেজারি সেক্রেটারি স্কট বেসেন্ট বিবিসি পার্টনার সিবিএসকে বলেন, আমরা যা করছি সবই পুতিনকে আলোচনার টেবিলে আনবে।
তবে পুতিন নিষেধাজ্ঞাকে ‘দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের জন্য ক্ষতিকর’ বলে বর্ণনা করেন। তিনি এ-ও বলেন, রাশিয়া ‘চাপের মুখে নীতি বদলাবে না।’
কিছুদিন পরই মস্কো একটি পারমাণবিক সক্ষম ক্ষেপণাস্ত্র পরীক্ষা চালায়, যা ইঙ্গিত দেয় যে আলোচনা নয়, বরং নতুন করে শক্তির প্রদর্শন চলছে।

মঙ্গলবার ছত্তিশগড় রাজ্যের বিজাপুর জেলায় আইনশৃঙ্খলাবাহিনীর সঙ্গে মাও বিদ্রোহীদের সংঘর্ষ হয়েছে। ছত্তিশগড়ের জ্যেষ্ঠ পুলিশ কর্মকর্তা সুন্দররাজ পাট্টিলিনগম টেলিফোনে এএফপিকে বলেছেন, নিরাপত্তা বাহিনীর সঙ্গে সংঘর্ষের পর আমরা এখন পর্যন্ত জঙ্গল থেকে ছয় মাওবাদীর লাশ উদ্ধার করেছি।
২ দিন আগে
স্যার কিয়ার স্টারমারের প্রতি অনুগতদের মধ্যে আশঙ্কা দেখা দিয়েছে যে তার পদ হয়তো হুমকির মুখে পড়তে পারে। ধারণা করা হচ্ছে, আগামী পাক্ষিকের বাজেট ঘোষণার পরপরই এই সংকট দেখা দিতে পারে।
২ দিন আগে
এমএসএফ-এর দাবি, এই কড়াকড়ির কারণে জরুরি চিকিৎসা প্রয়োজন এমন নারীরা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন এবং নতুন নিয়ম কার্যকর হওয়ার পর হাসপাতালের জরুরি রোগী ভর্তি ২৮ শতাংশ কমে গেছে। যদিও তালেবানের 'প্রচার ও নৈতিকতা রক্ষা মন্ত্রণালয়' জোর করে বোরকা পরানোর বিষয়টি অস্বীকার করে শুধু 'হিজাব' পরিধানের কথা বলছে। সংবাদমাধ্
২ দিন আগে
পাকিস্তানের রাজধানী ইসলামাবাদে জেলা ও দায়রা আদালত ভবনের বাইরে আত্মঘাতী বোমা হামালায় ১২ জন নিহত ও অন্তত ২৭ জন আহত হয়েছেন। মঙ্গলবার ইসলামাবাদ পুলিশের জ্যেষ্ঠ এক কর্মকর্তা দেশটির সংবাদমাধ্যম ডন নিউজকে এই তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
৩ দিন আগে