ডেস্ক, রাজনীতি ডটকম
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে যুক্তরাষ্ট্রের রাজধানী ওয়াশিংটন ডিসি পৌঁছেছেন ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। ট্রাম্প দ্বিতীয় দফায় মার্কিন প্রেসিডেন্ট হিসেবে শপথ নেওয়ার পর এই প্রথম মোদির সঙ্গে তার সাক্ষাৎ হতে যাচ্ছে।
আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমগুলো বলছে, বৈশ্বিক রাজনৈতিক বাস্তবতা নিয়ে আলোচনা হবে দুই নেতার মধ্যে। পাশাপাশি আলোচনায় গুরুত্ব সহকারে উঠে আসতে পারে দ্বিপাক্ষিক ও আন্তর্জাতিক বাণিজ্য। এ ক্ষেত্রে ট্রাম্প প্রশাসনের শুল্ক নীতিকে গুরুত্ব দিয়ে আলোচনায় তুলে আনতে পারেন মোদি। আলোচনা হবে যুক্তরাষ্ট্রের ভিসা নীতি নিয়েও।
বৃহস্পতিবার (১৩ ফেব্রুয়ারি) ট্রাম্প ও মোদির মধ্যে এই বৈঠক হতে যাচ্ছে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে (সাবেক টুইটার) মোদি নিজেই লিখেছেন, প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের সঙ্গে বৈঠকের জন্য অধীরভাবে অপেক্ষা করছি।
ডোনাল্ড ট্রাম্প ও নরেন্দ্র মোদির এই বৈঠক গুরুত্ব পাচ্ছে গোটা বিশ্বেই। ট্রাম্প যখন প্রথমবার মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন তখন মোদিও প্রথম মেয়াদে ভারতের প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করছেন। আরও নানা বিষয়ের সঙ্গে সঙ্গে বিশেষ করে চীনকে মোকাবিলার বিষয়টি এই দুই নেতার ঘনিষ্ঠতা বাড়িয়ে তুলতে ভূমিকা রাখে।
২০১৭ সালে ওয়াশিংটনে প্রথম বৈঠক হয় ট্রাম্প-মোদির। এরপর বিভিন্ন সময়ে আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক বিভিন্ন ফোরামে তাদের দুজন বহুবার দ্বিপাক্ষিক বৈঠক করেছেন। মোদি যেমন যুক্তরাষ্ট্র সফর করেছেন তেমন ট্রাম্পও ভারত সফর করেছেন। তাতে তাদের সম্পর্ক আরও মজবুত হয়েছে।
ওয়াশিংটনে অবস্থিত উইলসন সেন্টারের দক্ষিণ এশিয়া ইনস্টিটিউটের পরিচালক মাইকেল কুগেলম্যানের অভিমত, এই দুজনের নেতার সম্পর্কের রসায়নের নেপথ্যে রয়েছে তাদের অভিন্ন বিশ্বদর্শন ও রাজনৈতিক দৃষ্টিভঙ্গি এবং চীনকে মোকাবিলা করার পারস্পরিক কৌশল। দুই দেশের কাছেই চীন উদ্বেগের কারণ এবং এটি বৃহত্তর মার্কিন-ভারত অংশীদারিকে শক্তিশালী করে তুলেছে।
কুগেলম্যান বলেন, এতে অবাক হওয়ার কিছু নেই যে ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রায়ই ভারতের সমালোচনা করেছেন, কিন্তু তিনি কখনো নরেন্দ্র মোদির সমালোচনা করেননি। আর তাই ভারতের প্রধানমন্ত্রী মোদির সফরের সময় তারা সম্ভবত মার্কিন-ভারত কৌশলগত অংশীদারির পরবর্তী পদক্ষেপগুলো চিত্রায়ন নিয়ে ব্যস্ত থাকবেন।
বিভিন্ন সূত্রের বরাতে এনডিটিভি জানিয়েছে, সফরে ট্রাম্প প্রশাসনের বেশ কয়েকজন সদস্য ছাড়াও শীর্ষ মার্কিন ব্যবসায়ী নেতৃত্ব ও ভারতীয়-আমেরিকান সম্প্রদায়ভুক্ত ব্যক্তিদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করবেন মোদি। পাশাপাশি, স্পেসএক্স ও টেসলার মালিক ইলন মাস্কের সঙ্গেও দেখা করতে পারেন।
মাইকেল কুগেলম্যান বলেন, ভারতের ক্রমবর্ধমান বৈদ্যুতিক যানবাহনের সেক্টরের আয়তন বৃদ্ধির বিষয়ে আগ্রহী নরেন্দ্র মোদি। ইলন মাস্ক যদি ভারতে টেসলার কারখানা স্থাপন করেন, তিনি খুশিই হবেন।
কৌশলগত আলোচনার পাশাপাশি বাণিজ্যের বিষয়টিও এই বৈঠকে গুরুত্ব পেতে পারে বলে জানাচ্ছে এনডিটিভি। এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ট্রাম্পের ক্ষমতা গ্রহণের পর থেকেই এর প্রতিফলন দেখা গেছে। এর প্রেক্ষাপটেই দিল্লির পক্ষ থেকে আমদানি শুল্ক কমানো ও যুক্তরাষ্ট্র থেকে আরও বেশি পরিমাণে তেল আমদানির ইচ্ছা প্রকাশ করা হয়েছে।
মোদির এই যুক্তরাষ্ট্র সফরে আলোচনার অন্যতম বিষয় হতে পারে যুক্তরাষ্ট্রের অভিবাসন ও ভিসা নীতি। কেননা ট্রাম্প ক্ষমতা নেওয়ার পর থেকেই অভিবাসী ইস্যুতে কঠোর হয়ে উঠেছেন। এরই মধ্যে ভারতসহ বিভিন্ন দেশের অভিবাসীদের তিনি যুক্তরাষ্ট্র থেকে বের করে দিয়েছেন। ভিসা নিয়েও নানা ধরনের বিধিনিষেধ জারির পরিকল্পনা রয়েছে তার। জন্মসূত্রে নাগরিকত্বের বিরুদ্ধেও অবস্থান নিয়েছেন ট্রাম্প।
এদিকে এরই মধ্যে কিছু ক্ষেত্রে আমদানি শুল্ক কমানো হয়েছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র থেকে ফেরত পাঠানো ১০৪ জন অনথিভুক্ত ভারতীয়কে ফিরিয়ে নেওয়া হয়েছে। মাইকেল কুগেলম্যান মনে করছেন, এসব আগাম পদক্ষেপের উদ্দেশ্য ডোনাল্ড ট্রাম্পকে ভারতের কাছে সুনির্দিষ্ট দাবি জানানো থেকে বিরত রাখা এবং নতুন ট্রাম্প প্রশাসনের সঙ্গে উত্তেজনার শঙ্কা কমানো।
কুগেলম্যান বলেন, এরপরও অবশ্য প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প বাণিজ্য ঘাটতি কমাতে মোদীকে শুল্ক আরও কমানোর কথা বলতে পারেন। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে দুই দেশের মধ্যে বাণিজ্য ঘাটতি চার হাজার ৬০০ কোটি ডলারের কাছাকাছি পৌঁছেছে।
অভিবাসন ও ভিসা নীতি ইস্যু নিয়ে মাইকেল কুগেলম্যান বলেন, নরেন্দ্র মোদিকে আরও অনথিভুক্ত ভারতীয়দের ফিরিয়ে নেওয়ার কথা বলতে পারেন ট্রাম্প। কিছু তথ্য বিশ্লেষণ বলছে, ভারতীয়রা যুক্তরাষ্ট্রে থাকা নথিপত্রহীন অভিবাসী গোষ্ঠীর তালিকায় তৃতীয় বৃহত্তম গোষ্ঠী এবং এই সংখ্যা সাত লাখ ২৫ হাজারের কাছাকাছি। কাজেই এ বিষয়টি দিল্লির জন্য কঠিন ও স্পর্শকাতর ইস্যু হবে।
গত সপ্তাহে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র থেকে ফেরত পাঠানো ভারতীয় নাগরিকদের হাতকড়া ও পায়ে বেড়ি পরানোর ঘটনাকে ঘিরে ক্ষোভের পরিবেশ তৈরি হয়েছিল। ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর সংসদে জানিয়েছিলেন, দেশে ফেরত পাঠানো অবৈধ অধিবাসীদের সঙ্গে যেন দুর্ব্যবহার করা না হয়, তা নিশ্চিত করতে ভারত সরকার যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে কাজ করছে।
অন্যদিকে ভারতকে আরও বেশি পরিমাণে আমেরিকান তেল কেনার কথা বলতে পারেন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প। ২০২১ সালে মার্কিন তেল রফতানির জন্য ভারতই ছিল শীর্ষ গন্তব্যস্থল। কিন্তু ইউক্রেনে রাশিয়ার আক্রমণ বিশ্বস্তরে তেলের বাজারে বড় পরিবর্তন নিয়ে আসে। দিল্লিকে তার ঘনিষ্ঠ অংশীদার রাশিয়ার কাছ থেকে সস্তায় তেল আমদানির পরিমাণ বাড়ানোর জন্য প্ররোচিত করে। এ ক্ষেত্রে ‘প্রাইস পয়েন্ট’ নির্ধারণ করবে যে ভারত মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র থেকে তেল কিনতে কতটা ইচ্ছুক।
মোদি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে ভারতীয় পরমাণু শক্তিতে বিনিয়োগ করার কথা বলতে পারেন। জ্বালানির প্রতি আন্তর্জাতিক আগ্রহের কথা মাথায় রেখে দিল্লি পারমাণবিক দায় সংক্রান্ত আইন সংশোধন করছে এবং নতুন পারমাণবিক শক্তি মিশনও ঘোষণা করেছে। ভারতের লক্ষ্য ২০৩০ সালের মধ্যে নবায়নযোগ্য শক্তির মাধ্যমে দেশের অর্ধেক শক্তির চাহিদা পূরণ করা।
কুগেলম্যান বলছেন, এ বিষয়টি মাথায় রেখে ডোনাল্ড ট্রাম্পকে পারমাণবিক জ্বালানিতে বিনিয়োগ করতে বলার বিষয়টা একটা গুরুত্বপূর্ণ মাধ্যম হিসেবে কাজ করতে পারে। কারণ ট্রাম্প প্রশাসন সৌর ও বায়ু শক্তিতে বিনিয়োগকে তেমন আকর্ষণীয় বলে না-ও মনে করতে পারে।
এ ছাড়া দুজনের মধ্যে প্রযুক্তি নিয়েও আলোচনা হতে পারে। জো বাইডেনের আমলে ভারত ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের দিক থেকে প্রযুক্তি একটি দ্রুত বর্ধনশীল ক্ষেত্র ছিল। ২০২২ সালে ইনিশিয়েটিভ অন ক্রিটিকাল অ্যান্ড এমার্জিং টেকনোলজিস (আইসিইটি) বাস্তবায়ন করা হয়। আইসিইটিকে ভারত ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র দুপক্ষই কৌশলগত অংশীদারির দিক থেকে একটি নতুন ভিত্তি হিসেবে বিবেচনা করেছে।
প্রযুক্তি সহযোগিতার ক্ষেত্রে আরও একটি বিষয় আলোচনায় থাকতে পারে— এইচওয়ান-বি ভিসা। অত্যন্ত দক্ষ বিদেশি কর্মীদের মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে কাজ করার ক্ষেত্রে এই ভিসার প্রয়োজন। বিপুলসংখ্যক ভারতীয় প্রযুক্তি কর্মীদের এইচওয়ান-বি দেওয়া হয়েছে। কিন্তু প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের প্রভাবশালী সমর্থকদের মধ্যে কেউ কেউ এই সিদ্ধান্তের তীব্র সমালোচনা করেছেন। নরেন্দ্র মোদি এ বিষয়ে ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে কথা বলতে পারেন।
চাবাহার শহরে বন্দর নির্মাণ করতে তেহরানের সঙ্গে অংশীদারি করছে দিল্লি। ইরান ও আফগানিস্তানের ভেতর দিয়ে মধ্য এশিয়ার সঙ্গে যোগাযোগ মজবুত করার উদ্দেশ্যে বৃহত্তর ভারতীয় কৌশলের অংশ হলো এই পরিকল্পনা। কিন্তু গত সপ্তাহে মার্কিন প্রশাসন তেহরানের ওপর ‘সর্বোচ্চ চাপ’ প্রয়োগ করার বিষয়ে প্রেসিডেন্সিয়াল মেমোরেন্ডাম জারি করেছে।
কুগেলম্যান বলেন, ওয়াশিংটনে প্রধানমন্ত্রী মোদি ও প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের কথোপকথনের সময় ইরানের বিষয়টিও আলোচনার বড় বিষয়বস্তু হয়ে উঠতে পারে। যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্সিয়াল মেমোরান্ডাম দিল্লির জন্য কী বার্তা বয়ে আনতে পারে, সে বিষয়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কাছে আরও স্পষ্টতা চাইতে পারেন মোদি।
এ ছাড়া রাশিয়া-ইউক্রেন ইসরায়েল-হামাস যুদ্ধের অবসান ইস্যু আলোচনায় উঠে আসতে পারে ট্রাম্প-মোদি বৈঠকেও। দিল্লি এসব যুদ্ধের অবসান চেয়ে আসছে। কুগেলম্যান বলেন, রাশিয়ার সঙ্গে ভারতের বিশেষ সম্পর্ক ও ইসরায়েলের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক রয়েছে। তাই, নরেন্দ্র মোদি এসব যুদ্ধে মধ্যস্থতাকারীর ভূমিকা পালন করতে চান কি না, সে বিষয়ে কথা তুলতে পারেন ট্রাম্প।
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে যুক্তরাষ্ট্রের রাজধানী ওয়াশিংটন ডিসি পৌঁছেছেন ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। ট্রাম্প দ্বিতীয় দফায় মার্কিন প্রেসিডেন্ট হিসেবে শপথ নেওয়ার পর এই প্রথম মোদির সঙ্গে তার সাক্ষাৎ হতে যাচ্ছে।
আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমগুলো বলছে, বৈশ্বিক রাজনৈতিক বাস্তবতা নিয়ে আলোচনা হবে দুই নেতার মধ্যে। পাশাপাশি আলোচনায় গুরুত্ব সহকারে উঠে আসতে পারে দ্বিপাক্ষিক ও আন্তর্জাতিক বাণিজ্য। এ ক্ষেত্রে ট্রাম্প প্রশাসনের শুল্ক নীতিকে গুরুত্ব দিয়ে আলোচনায় তুলে আনতে পারেন মোদি। আলোচনা হবে যুক্তরাষ্ট্রের ভিসা নীতি নিয়েও।
বৃহস্পতিবার (১৩ ফেব্রুয়ারি) ট্রাম্প ও মোদির মধ্যে এই বৈঠক হতে যাচ্ছে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে (সাবেক টুইটার) মোদি নিজেই লিখেছেন, প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের সঙ্গে বৈঠকের জন্য অধীরভাবে অপেক্ষা করছি।
ডোনাল্ড ট্রাম্প ও নরেন্দ্র মোদির এই বৈঠক গুরুত্ব পাচ্ছে গোটা বিশ্বেই। ট্রাম্প যখন প্রথমবার মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন তখন মোদিও প্রথম মেয়াদে ভারতের প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করছেন। আরও নানা বিষয়ের সঙ্গে সঙ্গে বিশেষ করে চীনকে মোকাবিলার বিষয়টি এই দুই নেতার ঘনিষ্ঠতা বাড়িয়ে তুলতে ভূমিকা রাখে।
২০১৭ সালে ওয়াশিংটনে প্রথম বৈঠক হয় ট্রাম্প-মোদির। এরপর বিভিন্ন সময়ে আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক বিভিন্ন ফোরামে তাদের দুজন বহুবার দ্বিপাক্ষিক বৈঠক করেছেন। মোদি যেমন যুক্তরাষ্ট্র সফর করেছেন তেমন ট্রাম্পও ভারত সফর করেছেন। তাতে তাদের সম্পর্ক আরও মজবুত হয়েছে।
ওয়াশিংটনে অবস্থিত উইলসন সেন্টারের দক্ষিণ এশিয়া ইনস্টিটিউটের পরিচালক মাইকেল কুগেলম্যানের অভিমত, এই দুজনের নেতার সম্পর্কের রসায়নের নেপথ্যে রয়েছে তাদের অভিন্ন বিশ্বদর্শন ও রাজনৈতিক দৃষ্টিভঙ্গি এবং চীনকে মোকাবিলা করার পারস্পরিক কৌশল। দুই দেশের কাছেই চীন উদ্বেগের কারণ এবং এটি বৃহত্তর মার্কিন-ভারত অংশীদারিকে শক্তিশালী করে তুলেছে।
কুগেলম্যান বলেন, এতে অবাক হওয়ার কিছু নেই যে ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রায়ই ভারতের সমালোচনা করেছেন, কিন্তু তিনি কখনো নরেন্দ্র মোদির সমালোচনা করেননি। আর তাই ভারতের প্রধানমন্ত্রী মোদির সফরের সময় তারা সম্ভবত মার্কিন-ভারত কৌশলগত অংশীদারির পরবর্তী পদক্ষেপগুলো চিত্রায়ন নিয়ে ব্যস্ত থাকবেন।
বিভিন্ন সূত্রের বরাতে এনডিটিভি জানিয়েছে, সফরে ট্রাম্প প্রশাসনের বেশ কয়েকজন সদস্য ছাড়াও শীর্ষ মার্কিন ব্যবসায়ী নেতৃত্ব ও ভারতীয়-আমেরিকান সম্প্রদায়ভুক্ত ব্যক্তিদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করবেন মোদি। পাশাপাশি, স্পেসএক্স ও টেসলার মালিক ইলন মাস্কের সঙ্গেও দেখা করতে পারেন।
মাইকেল কুগেলম্যান বলেন, ভারতের ক্রমবর্ধমান বৈদ্যুতিক যানবাহনের সেক্টরের আয়তন বৃদ্ধির বিষয়ে আগ্রহী নরেন্দ্র মোদি। ইলন মাস্ক যদি ভারতে টেসলার কারখানা স্থাপন করেন, তিনি খুশিই হবেন।
কৌশলগত আলোচনার পাশাপাশি বাণিজ্যের বিষয়টিও এই বৈঠকে গুরুত্ব পেতে পারে বলে জানাচ্ছে এনডিটিভি। এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ট্রাম্পের ক্ষমতা গ্রহণের পর থেকেই এর প্রতিফলন দেখা গেছে। এর প্রেক্ষাপটেই দিল্লির পক্ষ থেকে আমদানি শুল্ক কমানো ও যুক্তরাষ্ট্র থেকে আরও বেশি পরিমাণে তেল আমদানির ইচ্ছা প্রকাশ করা হয়েছে।
মোদির এই যুক্তরাষ্ট্র সফরে আলোচনার অন্যতম বিষয় হতে পারে যুক্তরাষ্ট্রের অভিবাসন ও ভিসা নীতি। কেননা ট্রাম্প ক্ষমতা নেওয়ার পর থেকেই অভিবাসী ইস্যুতে কঠোর হয়ে উঠেছেন। এরই মধ্যে ভারতসহ বিভিন্ন দেশের অভিবাসীদের তিনি যুক্তরাষ্ট্র থেকে বের করে দিয়েছেন। ভিসা নিয়েও নানা ধরনের বিধিনিষেধ জারির পরিকল্পনা রয়েছে তার। জন্মসূত্রে নাগরিকত্বের বিরুদ্ধেও অবস্থান নিয়েছেন ট্রাম্প।
এদিকে এরই মধ্যে কিছু ক্ষেত্রে আমদানি শুল্ক কমানো হয়েছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র থেকে ফেরত পাঠানো ১০৪ জন অনথিভুক্ত ভারতীয়কে ফিরিয়ে নেওয়া হয়েছে। মাইকেল কুগেলম্যান মনে করছেন, এসব আগাম পদক্ষেপের উদ্দেশ্য ডোনাল্ড ট্রাম্পকে ভারতের কাছে সুনির্দিষ্ট দাবি জানানো থেকে বিরত রাখা এবং নতুন ট্রাম্প প্রশাসনের সঙ্গে উত্তেজনার শঙ্কা কমানো।
কুগেলম্যান বলেন, এরপরও অবশ্য প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প বাণিজ্য ঘাটতি কমাতে মোদীকে শুল্ক আরও কমানোর কথা বলতে পারেন। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে দুই দেশের মধ্যে বাণিজ্য ঘাটতি চার হাজার ৬০০ কোটি ডলারের কাছাকাছি পৌঁছেছে।
অভিবাসন ও ভিসা নীতি ইস্যু নিয়ে মাইকেল কুগেলম্যান বলেন, নরেন্দ্র মোদিকে আরও অনথিভুক্ত ভারতীয়দের ফিরিয়ে নেওয়ার কথা বলতে পারেন ট্রাম্প। কিছু তথ্য বিশ্লেষণ বলছে, ভারতীয়রা যুক্তরাষ্ট্রে থাকা নথিপত্রহীন অভিবাসী গোষ্ঠীর তালিকায় তৃতীয় বৃহত্তম গোষ্ঠী এবং এই সংখ্যা সাত লাখ ২৫ হাজারের কাছাকাছি। কাজেই এ বিষয়টি দিল্লির জন্য কঠিন ও স্পর্শকাতর ইস্যু হবে।
গত সপ্তাহে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র থেকে ফেরত পাঠানো ভারতীয় নাগরিকদের হাতকড়া ও পায়ে বেড়ি পরানোর ঘটনাকে ঘিরে ক্ষোভের পরিবেশ তৈরি হয়েছিল। ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর সংসদে জানিয়েছিলেন, দেশে ফেরত পাঠানো অবৈধ অধিবাসীদের সঙ্গে যেন দুর্ব্যবহার করা না হয়, তা নিশ্চিত করতে ভারত সরকার যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে কাজ করছে।
অন্যদিকে ভারতকে আরও বেশি পরিমাণে আমেরিকান তেল কেনার কথা বলতে পারেন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প। ২০২১ সালে মার্কিন তেল রফতানির জন্য ভারতই ছিল শীর্ষ গন্তব্যস্থল। কিন্তু ইউক্রেনে রাশিয়ার আক্রমণ বিশ্বস্তরে তেলের বাজারে বড় পরিবর্তন নিয়ে আসে। দিল্লিকে তার ঘনিষ্ঠ অংশীদার রাশিয়ার কাছ থেকে সস্তায় তেল আমদানির পরিমাণ বাড়ানোর জন্য প্ররোচিত করে। এ ক্ষেত্রে ‘প্রাইস পয়েন্ট’ নির্ধারণ করবে যে ভারত মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র থেকে তেল কিনতে কতটা ইচ্ছুক।
মোদি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে ভারতীয় পরমাণু শক্তিতে বিনিয়োগ করার কথা বলতে পারেন। জ্বালানির প্রতি আন্তর্জাতিক আগ্রহের কথা মাথায় রেখে দিল্লি পারমাণবিক দায় সংক্রান্ত আইন সংশোধন করছে এবং নতুন পারমাণবিক শক্তি মিশনও ঘোষণা করেছে। ভারতের লক্ষ্য ২০৩০ সালের মধ্যে নবায়নযোগ্য শক্তির মাধ্যমে দেশের অর্ধেক শক্তির চাহিদা পূরণ করা।
কুগেলম্যান বলছেন, এ বিষয়টি মাথায় রেখে ডোনাল্ড ট্রাম্পকে পারমাণবিক জ্বালানিতে বিনিয়োগ করতে বলার বিষয়টা একটা গুরুত্বপূর্ণ মাধ্যম হিসেবে কাজ করতে পারে। কারণ ট্রাম্প প্রশাসন সৌর ও বায়ু শক্তিতে বিনিয়োগকে তেমন আকর্ষণীয় বলে না-ও মনে করতে পারে।
এ ছাড়া দুজনের মধ্যে প্রযুক্তি নিয়েও আলোচনা হতে পারে। জো বাইডেনের আমলে ভারত ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের দিক থেকে প্রযুক্তি একটি দ্রুত বর্ধনশীল ক্ষেত্র ছিল। ২০২২ সালে ইনিশিয়েটিভ অন ক্রিটিকাল অ্যান্ড এমার্জিং টেকনোলজিস (আইসিইটি) বাস্তবায়ন করা হয়। আইসিইটিকে ভারত ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র দুপক্ষই কৌশলগত অংশীদারির দিক থেকে একটি নতুন ভিত্তি হিসেবে বিবেচনা করেছে।
প্রযুক্তি সহযোগিতার ক্ষেত্রে আরও একটি বিষয় আলোচনায় থাকতে পারে— এইচওয়ান-বি ভিসা। অত্যন্ত দক্ষ বিদেশি কর্মীদের মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে কাজ করার ক্ষেত্রে এই ভিসার প্রয়োজন। বিপুলসংখ্যক ভারতীয় প্রযুক্তি কর্মীদের এইচওয়ান-বি দেওয়া হয়েছে। কিন্তু প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের প্রভাবশালী সমর্থকদের মধ্যে কেউ কেউ এই সিদ্ধান্তের তীব্র সমালোচনা করেছেন। নরেন্দ্র মোদি এ বিষয়ে ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে কথা বলতে পারেন।
চাবাহার শহরে বন্দর নির্মাণ করতে তেহরানের সঙ্গে অংশীদারি করছে দিল্লি। ইরান ও আফগানিস্তানের ভেতর দিয়ে মধ্য এশিয়ার সঙ্গে যোগাযোগ মজবুত করার উদ্দেশ্যে বৃহত্তর ভারতীয় কৌশলের অংশ হলো এই পরিকল্পনা। কিন্তু গত সপ্তাহে মার্কিন প্রশাসন তেহরানের ওপর ‘সর্বোচ্চ চাপ’ প্রয়োগ করার বিষয়ে প্রেসিডেন্সিয়াল মেমোরেন্ডাম জারি করেছে।
কুগেলম্যান বলেন, ওয়াশিংটনে প্রধানমন্ত্রী মোদি ও প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের কথোপকথনের সময় ইরানের বিষয়টিও আলোচনার বড় বিষয়বস্তু হয়ে উঠতে পারে। যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্সিয়াল মেমোরান্ডাম দিল্লির জন্য কী বার্তা বয়ে আনতে পারে, সে বিষয়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কাছে আরও স্পষ্টতা চাইতে পারেন মোদি।
এ ছাড়া রাশিয়া-ইউক্রেন ইসরায়েল-হামাস যুদ্ধের অবসান ইস্যু আলোচনায় উঠে আসতে পারে ট্রাম্প-মোদি বৈঠকেও। দিল্লি এসব যুদ্ধের অবসান চেয়ে আসছে। কুগেলম্যান বলেন, রাশিয়ার সঙ্গে ভারতের বিশেষ সম্পর্ক ও ইসরায়েলের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক রয়েছে। তাই, নরেন্দ্র মোদি এসব যুদ্ধে মধ্যস্থতাকারীর ভূমিকা পালন করতে চান কি না, সে বিষয়ে কথা তুলতে পারেন ট্রাম্প।
দেশটির স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী জানিয়েছেন, কৃষি, বাগান ও খনি খাতসহ মোট ১৩টি উপখাতে বিদেশি শ্রমিক নিয়োগের আবেদন গ্রহণ করা হবে। এর মধ্যে সার্ভিস সেক্টরের হোলসেল এন্ড রিটেল, ল্যান্ড ওয়্যারহাউস, সিকিউরিটি গার্ডস, মেটাল এন্ড স্ক্রাপ ম্যাটেরিয়ালস, রেস্তোরাঁস, লন্ড্রি, কার্গো, এন্ড বিল্ডিং ক্লিনিং খাতে শ্রমিক নিয়
২০ ঘণ্টা আগেআগামী নির্বাচনে নির্বাচন কমিশনকে চার মিলিয়ন ইউরো সহায়তা দেবে ইউরোপীয় ইউনিয়ন। আসছে নির্বাচন আন্তর্জাতিক মানের অবাধ, সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য হবে বলে প্রত্যাশা করি। সেপ্টেম্বরে আমাদের বিশেষজ্ঞ পর্যবেক্ষক দল বাংলাদেশে আসবে।
১ দিন আগেট্রাম্পের সঙ্গে সোমবারের এ বৈঠককে এখন পর্যন্ত ‘সেরা বৈঠক’ মন্তব্য করে জেলেনস্কি বলেছেন, ‘যুক্তরাষ্ট্র শুধু সমন্বয়ই করবে না, নিরাপত্তা নিশ্চয়তার অংশীদারও হবে- স্পষ্ট এমন ইঙ্গিত দিচ্ছে। এটি বড় একটি অগ্রগতি বলে আমি মনে করি।’
১ দিন আগেএই বৈঠকেই গুরুত্ব পায় যুদ্ধবিরতি বা স্থায়ীভাবে যুদ্ধ বন্ধের বিষয়টি। ট্রাম্প সেখানে বলেন- যুদ্ধ বন্ধের আলোচনার আগে যুদ্ধবিরতি জরুরি নয়।
১ দিন আগে