ঢাবিতে জুলাই বিপ্লবের স্মরণে প্রথম আন্তর্জাতিক সম্মেলন

ঢাবি প্রতিনিধি
প্রকাশ: ২৭ জুলাই ২০২৫, ২১: ৩৬

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে জুলাই গণ-অভ্যুত্থান বিষয়ক প্রথম আন্তর্জাতিক সম্মেলন (আইসিজেআর-১) অনুষ্ঠিত হয়েছে।

সম্মেলনে দেশবিদেশের গবেষক ও বিশ্লেষকদের অংশগ্রহণ ও ইতিহাস রক্ষায় জাতীয় অঙ্গীকারের আহ্বান জানানো হয়।

আজ বিশ্ববিদ্যালয়ের নবাব নওয়াব আলী চৌধুরী সিনেট ভবনে দিনব্যাপী আয়োজিত এ সম্মেলনে দেশবিদেশের ১৩টি গবেষণা প্রতিষ্ঠান ও সিভিল সোসাইটি সংগঠন অংশগ্রহণ করে।

ঢাকাভিত্তিক গবেষণা সংস্থা রিসার্চ অ্যান্ড ইন্টিগ্রেটেড থট (আরআইটি) এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগ যৌথভাবে সম্মেলনটির আয়োজন করে।

এতে সহ-আয়োজক হিসেবে অংশ নেয় জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়, ইউনিভার্সিটি অব রেজিনা (কানাডা), নানিয়াং টেকনোলজিক্যাল ইউনিভার্সিটি (সিঙ্গাপুর), কেন্ট স্টেট ইউনিভার্সিটি (যুক্তরাষ্ট্র), দ্য ইন্টারন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব ল অ্যান্ড ডিপ্লোমেসি, বাংলাদেশ ২.০ ইনিশিয়েটিভ (যুক্তরাজ্য), সোচ্চার (যুক্তরাষ্ট্র), ইনসাফ (বাংলাদেশ), সেন্টার ফর পলিসি অ্যান্ড সোশ্যাল রিসার্চ (তুরস্ক), সেন্টার ফর পলিসি অ্যানালিসিস অ্যান্ড অ্যাডভোকেসি (বাংলাদেশ) এবং জাগরণ ফাউন্ডেশন (যুক্তরাজ্য)।

সম্মেলনের শুরুতে পবিত্র ধর্মগ্রন্থগুলো থেকে পাঠ করা হয়। এরপর জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে শহীদ জাহিদুজ্জামান তানভীনের মা বিলকিস জামান ও বাবা শামসুজ্জামান বক্তব্য প্রদান করেন।

সম্মেলনে স্বাগত বক্তব্য দেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ও সম্মেলনটির আহ্বায়ক ড. মো. শরীফুল ইসলাম।

দিনব্যাপী এই সম্মেলনের উদ্বোধনী পর্বে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য (শিক্ষা) অধ্যাপক ড. মামুন আহমেদ সভাপতিত্ব করেন। এতে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন শিল্প মন্ত্রণালয় এবং গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা আদিলুর রহমান খান।

এ সময় আরও উপস্থিত ছিলেন- দৈনিক আমার দেশ পত্রিকার সম্পাদক ড. মাহমুদুর রহমান, আমেরিকার স্টেট ডিপার্টমেন্টের অবসরপ্রাপ্ত কূটনীতিবিদ জন এফ. ডেনিলোইজ, বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ও বিভিন্ন দেশের কূটনীতিকরা।

প্রধান অতিথির বক্তব্যে শিল্প মন্ত্রণালয় এবং গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা আদিলুর রহমান খান বলেন, আমরা আজ যে ফ্যাসিবাদী আওয়ামী শাসনের পতন দেখেছি, সেটার নিষ্ঠুরতা আমাদের বিবেককে সামগ্রিকভাবে ক্ষতবিক্ষত করেছে।

তিনি বলেন, এই শাসনব্যবস্থা রাষ্ট্রকে জনগণের বিরুদ্ধে অস্ত্রে পরিণত করেছিল। শুধু তাই নয় র‌্যাব, পুলিশ ও গোয়েন্দা সংস্থাগুলোকে সন্ত্রাসের হাতিয়ার বানানো হয়েছিল।

গুম-খুন হয়ে উঠেছিল নিত্যদিনের ঘটনা। কবি, শিক্ষক, সাংবাদিক ও ছাত্রনেতাদেরকে অপরাধী হিসেবে জেলে ভরা হয়েছিল। ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মুক্ত চিন্তায় বাধা দেওয়া হতো।

উপদেষ্টা আদিলুর রহমান খান আরও বলেন, আমরা বিকৃত ইতিহাস থেকে সত্যকে উদ্ধার করতে চাই। যারা নিখোঁজ হয়েছেন, তাদের পরিবারের কান্না ও বিশ্ববিদ্যালয়ের দেয়ালে গেঁথে থাকা গুলির চিহ্ন— এ সবই একদিন ন্যায়বিচার নির্মাণকাজের প্রমাণ হয়ে উঠবে।

উপদেষ্টা তার বক্তব্যে জুলাই বিপ্লবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অবদান স্মরণ করে বলেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এবারও সংগ্রামে নেতৃত্ব দিয়েছে। এর শ্রেণিকক্ষগুলো হয়ে উঠেছিল রণকৌশলের কেন্দ্র, ছাত্ররা হয়ে উঠেছিল বিবেকের যোদ্ধা।

তিনি আরো বলেন, আমরা বিদেশি গবেষক, অধ্যাপক ও মানবাধিকার সংগঠনগুলোর কাছে কৃতজ্ঞ, যারা বিপজ্জনক সময়েও বাংলাদেশের পক্ষে দাঁড়িয়েছিলেন।

বক্তব্যের শেষে তিনি এই সম্মেলনকে একটি জাতীয় অঙ্গীকারে পরিণত করতে জুলাই বিপ্লবের দলিলপত্র, ভিডিও ও ফটো নিয়ে একটি আর্কাইভ গড়ে তোলা এবং স্কুলকলেজের পাঠ্যক্রমে জুলাই ইতিহাস সত্যনিষ্ঠভাবে অন্তর্ভুক্ত করার আহ্বান জানান।

সভাপতির বক্তব্যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রো-ভাইস চ্যান্সেলর (শিক্ষা) অধ্যাপক ড. মামুন আহমেদ বলেন, ২০২৪ সালের জুলাই বিপ্লব ছিল জাতির গণজাগরণের একটি অমোঘ মুহূর্ত। এটি কেবল ছাত্রদের প্রতিবাদ ছিল না, বরং এটি ছিল পুরো জাতির বিবেকের পুনর্জাগরণ।

তিনি বলেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছিল সেই জাগরণের প্রেরণা, কেন্দ্রবিন্দু ও নেতৃত্বদাতা। আমাদের শ্রেণিকক্ষ হয়ে উঠেছিল রণকৌশলের মঞ্চ, ক্যাম্পাস পরিণত হয়েছিল ন্যায় ও গণতন্ত্রের জন্য সংগ্রামের দুর্গে।

ড. মামুন আহমেদ আরও বলেন, এই সম্মেলন ইতিহাস রক্ষার দায়িত্ব যেমন পালন করছে, তেমনি ভবিষ্যতের বাংলাদেশ গঠনে এক গবেষণাধর্মী ভিত্তিও স্থাপন করছে।

সমাপনী পর্বে বক্তব্য রাখেন- ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের রুটিন দায়িত্বে নিয়োজিত উপ-উপাচার্য (প্রশাসন) অধ্যাপক ড. সায়মা হক বিদিশা, কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. এম জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী, মালয়েশিয়ার পার্টি কেডিলান রকইয়াট (পিকেআর)-এর ডেপুটি প্রেসিডেন্ট নুরুল ইজজাহ আনোয়ার, প্রধান উপদেষ্টার আন্তর্জাতিক বিষয়ক বিশেষ দূত ড. লুৎফে সিদ্দিকী ও প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী খোদা বকস্ চৌধুরী।

উপাচার্যের রুটিন দায়িত্বে নিয়োজিত উপ-উপাচার্য (প্রশাসন) অধ্যাপক ড. সায়মা হক বিদিশা জুলাই গণ-অভ্যুত্থান বিষয়ে একাডেমিক আলোচনা ও গবেষণা করার ওপর গুরুত্বারোপ করে বলেন, এক্ষেত্রে ইন্ডাস্ট্রি ও একাডেমিয়া যৌথভাবে গবেষণা প্রকল্প গ্রহণ করতে পারে।

কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. এম জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী বৈষম্যহীন ও দুর্নীতিমুক্ত সমাজ গঠনে দেশে প্রাতিষ্ঠানিক সংস্কারের ওপর গুরুত্বারোপ করেন।

সম্মেলন শেষে ছাত্র-শিক্ষক কেন্দ্র (টিএসসি) অডিটোরিয়ামে ‘লাল জুলাই’ নামক একটি মঞ্চ নাটক পরিবেশন করা হয়।

উল্লেখ্য, জুলাই গণ-অভ্যুত্থানকে উপজীব্য করে আগামীকাল ২৮ জুলাই সোমবার বিকাল ৩টায় জীববিজ্ঞান অনুষদের কামাল আহমেদ লেকচার গ্যালারিতে একটি সেমিনার অনুষ্ঠিত হবে।

ad
ad

খবরাখবর থেকে আরও পড়ুন

আরএফএলে নিয়োগ, পদসংখ্যা ৫০

৩ ঘণ্টা আগে

ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে নিয়োগ, পদসংখ্যা ৩

৩ ঘণ্টা আগে

পাঁচ মাস পর কুয়েটে ক্লাস শুরু মঙ্গলবার

এর আগে গত বৃহস্পতিবার (২৪ জুলাই) কুয়েট উপাচার্য হিসেবে নিয়োগ পেয়ে শুক্রবার প্রতিষ্ঠানটিতে যোগ দেন অধ্যাপক ড. মো. মাকসুদ হেলালী। গত শুক্রবার বিকেলে তিনি কুয়েট ক্যাম্পাসে এসে সবকিছু ঘুরে দেখেন। এরপর সন্ধ্যায় দায়িত্ব নিয়ে শনিবার অনানুষ্ঠানিক কার্যক্রম শুরু করেন। তবে অফিশিয়ালি কার্যক্রম শুরু করেন রবিবার

৪ ঘণ্টা আগে

স্বাধীন পুলিশ কমিশন গঠনের প্রস্তাব

প্রস্তাব অনুযায়ী, বাংলাদেশ পুলিশ কমিশন (যা ‘কমিশন’ হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে) গঠিত হবে। আপিল বিভাগের একজন অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতির নেতৃত্বে, যার বয়স ৭২ বছরের কম হবে। কমিশনের সদস্যসচিব হবেন অবসরপ্রাপ্ত একজন অতিরিক্ত মহাপরিদর্শক (অ্যাডিশনাল আইজিপি) পদমর্যাদার পুলিশ কর্মকর্তা, যার বয়স ৬২ বছরের কম হবে।

৫ ঘণ্টা আগে