ঢাবি প্রতিনিধি
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) ও হল সংসদ নির্বাচনের ১৩ দিন পর নির্বাচনকে ঘিরে নানা অসঙ্গতি ও অনিয়মের ১১টি অভিযোগ উত্থাপন করেছে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল সমর্থিত প্যানেল। এ সময় তদন্তপূর্বক উত্থাপিত অভিযোগগুলোর সত্য উন্মোচনের আহ্বান জানানো হয়।
সোমবার (২২ সেপ্টেম্বর) সকালে বিশ্ববিদ্যালয়ের মধুর ক্যান্টিনে ছাত্রদল সমর্থিত প্যানেল আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এই অভিযোগ তোলা হয়। সংবাদ সম্মেলনে শিক্ষার্থীদের পাশে থাকার অঙ্গীকার ব্যক্ত করেন ছাত্রদল মনোনীত প্যানেল থেকে অংশ নেওয়া ডাকসুর সাধারণ সম্পাদক (জিএস) প্রার্থী তানভীর বারী হামিম।
তিনি বলেন, ‘তফসিল ঘোষণার পরেও নানা অনিয়ম পরিলক্ষিত হওয়ায় আমরা যথানিয়মে তাদের নিকট সকল অভিযোগ জানিয়ে সমাধান চেয়েছি, কিন্তু একটি অনিয়মেরও কোনো সমাধান না দিয়ে আমাদের শিক্ষকেরা সেই বিশ্বাসের মর্যাদা রক্ষা করতে পুরোপুরি ব্যর্থ হয়েছেন। নানা প্রতিবন্ধকতার বেড়াজাল ভেদ করে শিক্ষার্থীদের কল্যাণে কাজ করে যাচ্ছি এবং শিক্ষার্থীদের আস্থা অর্জনে আমাদের পথচলা অব্যাহত রয়েছে। তাই প্রচারণা চলাকালে আমরা শিক্ষার্থীদের কাছে প্রতিজ্ঞা করেছিলাম যে জয়-পরাজয় যাই হোক না কেন, আমরা তাদের ছেড়ে যাব না।’
বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ও কমিশনকে অভিযোগ জানিয়েও প্রতিকার পাননি বলে উল্লেখ করেন প্যানেলটি থেকে অংশ নেওয়া সহ-সভাপতি (ভিপি) প্রার্থী আবিদুল ইসলাম খান।
তিনি বলেন, ‘নির্বাচন শেষ হয়েছে প্রায় দুই সপ্তাহ হতে চলল। আমরা আমাদের জায়গা থেকে যে অভিযোগগুলো এসেছে, যে প্রমাণ আমরা পেয়েছি, সেগুলো সম্পর্কে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় নির্বাচন কমিশন এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কাছে আমরা লিখিত আবেদন জানিয়েছি। লিখিত আবেদন জানানোর পর আমরা দেখতে পাচ্ছি যে সেখানে কালক্ষেপণ হচ্ছে। আমাদের এড়িয়ে চলার চেষ্টা করা হচ্ছে। যার ফলশ্রুতিতে নিয়মের মধ্য দিয়ে একটি সময় পার করার পর যে অভিযোগগুলো তাদের জানিয়েছি, সেগুলো আপনাদের জানানো প্রয়োজন বোধ করছি।’
প্যানেলটির পক্ষ থেকে উত্থাপিত ১১টি অভিযোগ হলো-
১. ভোটারকে নির্দিষ্ট প্যানেলের পক্ষে ভোট দেওয়া ব্যালট পেপার সরবরাহ এবং ভোটার উপস্থিত হওয়ার আগেই ভোটার তালিকায় উপস্থিতির স্বাক্ষর দেওয়াসহ নানাবিধ জালিয়াতির সংবাদ নির্বাচন চলাকালীন গণমাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছে। বিভিন্ন কেন্দ্রে ভোটার উপস্থিতি ও ভোট প্রদানের হারে অসামঞ্জস্য পরিলক্ষিত হওয়ায় বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল সমর্থিত প্যানেলের প্রার্থীরা সহ অধিকাংশ প্যানেল এবং একাধিক স্বতন্ত্র প্রার্থী ইতোমধ্যে ভোটার উপস্থিতির তালিকা এবং ভোটকেন্দ্রের সিসিটিভি ফুটেজ চেয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন বরাবর আবেদন করেছেন। কিন্তু ঢাবি প্রশাসন সে বিষয়ে বারবার আশ্বাস দিলেও কার্যকর কোনো পদক্ষেপ গ্রহণ না করে কালক্ষেপণ করছে।
২. ২০১৯ সালের সর্বশেষ ডাকসু ও হল সংসদ নির্বাচনে ব্যালট পেপারে ক্রমিক নম্বর না থাকায় ছাত্রলীগ নীরবে ভোট কারচুপির সুযোগ তৈরি করতে পেরেছিল। কিন্তু দুঃখজনকভাবে, এবারের নির্বাচনে ব্যবহৃত ব্যালট পেপারেও কোনো ক্রমিক নম্বর ছিল না। এছাড়া ছাপানো ব্যালট পেপারের সংখ্যা, ভোটকেন্দ্রে সরবরাহকৃত, ব্যবহৃত ও বাতিল হওয়া ব্যালট পেপারের সংখ্যা এবং ভোটগ্রহণ শেষে ফেরতকৃত ব্যালট পেপারের সংখ্যা কোথাও প্রকাশ করা হয়নি। এমনকি বারবার জানতে চাওয়ার পরেও এসংক্রান্ত তথ্য কেন্দ্রে দায়িত্বরত পোলিং এজেন্টদের জানানো হয়নি। ফলাফল প্রকাশের পর উল্লিখিত অভিযোগগুলো নিয়মানুসারে চিফ রিটার্নিং অফিসার বরাবর দায়ের করতে গেলে তিনি এসব বিষয়ে ঢাবি প্রশাসনের সঙ্গে যোগাযোগের পরামর্শ দেন। পরবর্তীতে ব্যালট পেপার সংক্রান্ত ইস্যুতে একাধিক প্রার্থী ও পোলিং এজেন্ট কর্তৃক যথাযথ প্রক্রিয়ানুসারে অভিযোগ দায়ের করার পরও ঢাবি প্রশাসন তদন্তের মাধ্যমে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ না করে নানা অজুহাতে কালক্ষেপণ করছে।
৩. নির্বাচনে ব্যবহৃত ব্যালট পেপার কোনো প্রেস থেকে ছাপানো হয়েছে, সে বিষয়ে কোনো তথ্য প্রকাশ করা হয়নি। অনিরাপদ ছাপাখানা থেকে ফাঁস হওয়া নকল ব্যালটের মাধ্যমে ভোট কারচুপির অভিযোগ ইতোমধ্যে এসেছে। উল্লেখ্য, ৭ সেপ্টেম্বর, ২০২৫ তারিখে নীলক্ষেতের গাউসুল আজম মার্কেটের একটি ছাপাখানায় ডাকসু ও হল সংসদ নির্বাচনের বিপুল সংখ্যক ব্যালট পেপার অরক্ষিত অবস্থায় পাওয়া যায়, যেখানে ঢাবি প্রশাসনের কোনো নজরদারি ছিল না বলে নিশ্চিত হওয়া গেছে।
৪. ডাকসু নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়ার চার দিন পর, তথা ১৩ সেপ্টেম্বর, ২০২৫, শনিবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন কর্তৃক প্রকাশিত বিজ্ঞপ্তি অনুসারে ভোট গণনা মেশিন এবং সফটওয়্যারের নির্ভুলতা ও বিশ্বাসযোগ্যতা যাচাইয়ের সময় নির্দিষ্ট কয়েকজন শিক্ষক ও টেকনিশিয়ান উপস্থিত থাকলেও ভোটার ও প্রার্থীদের এ বিষয়ে মোটেই অবহিত করা হয়নি। ভোট গণনার বিষয়ে ইতিমধ্যে নানা অভিযোগ ও বিতর্ক সামনে এসেছে, কিন্তু একটি কার্যকর গণনা প্রক্রিয়া নিশ্চিত করা গেলে এ ধরনের বিতর্ক তৈরি হতো না।
৫. প্রত্যেক প্রার্থীর কাছ থেকে প্রতিটি কেন্দ্রের জন্য একজন করে পোলিং এজেন্ট নেওয়ার বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করলেও ভোটের আগের মধ্যরাতে পোলিং এজেন্টদের তালিকা প্রকাশ করা হয়, যেখানে প্রার্থীদের প্রস্তাবিত বিভিন্ন কেন্দ্রের পোলিং এজেন্টদের বাদ দেওয়া হয়। কোনো প্রক্রিয়ার মাধ্যমে পোলিং এজেন্টদের বাছাই করা হয়েছে, তা প্রকাশ করা হয়নি।
৬. ভোটগ্রহণের আগে পোলিং এজেন্টদের আইডি কার্ড সরবরাহ করার কথা থাকলেও তা যথাসময়ে সরবরাহ করা হয়নি। যে কারণে অনেক পোলিং এজেন্ট যথাসময়ে ভোটকেন্দ্রের সম্মুখে উপস্থিত হয়েও ভোটকেন্দ্রে প্রবেশ করতে পারেননি। এবং অনেক ভোটকেন্দ্রে পোলিং এজেন্টের অনুপস্থিতিতে পক্ষপাতদুষ্ট অবস্থায়ই ভোটগ্রহণ শুরু হয়।
৭. একটি নির্দিষ্ট প্যানেল বাদে সব প্রার্থী ও প্যানেলকে জানানো হয়েছে যে ৮টি কেন্দ্রে ভোটগ্রহণ হবে। কিন্তু ভোটের দিন দেখা যায়, ৮টি ভোটিং এলাকায় মোট ১৮টি কেন্দ্রে ভোটগ্রহণ করা হচ্ছে। যে কারণে ঐ নির্দিষ্ট প্যানেল ব্যতীত অন্য কোনো প্রার্থী বা প্যানেল ১৮টি কেন্দ্র অনুসারে পোলিং এজেন্ট নিয়োগ করতে পারেনি।
৮. ডাকসু ও হল সংসদ নির্বাচনে কোনো প্রক্রিয়া অনুসরণ করে পোলিং অফিসার নিয়োগ দেওয়া হয়েছে, সে বিষয়ে অস্পষ্টতা রয়েছে। চিফ রিটার্নিং অফিসার কর্তৃক পোলিং অফিসার নিয়োগ করার কথা থাকলেও তাদের ঢাবি প্রশাসন কর্তৃক নিয়োগ দেওয়া হয়েছে বলে তিনি জানিয়েছেন। নির্বাচনী আচরণবিধি সম্পর্কে ন্যূনতম ধারণা না থাকায় অধিকাংশ পোলিং অফিসার নির্বাচনী আচরণবিধি সম্পর্কে সাংবাদিকদের ভুল তথ্য দিয়ে প্রার্থীদের বিরুদ্ধে আচরণবিধি লঙ্ঘনের ভুয়া অভিযোগ তুলে নির্বাচনকে প্রভাবিত করেছেন।
৯. নিরাপত্তা ও ভোট সংশ্লিষ্ট দায়িত্বে থাকা কতিপয় অতি উৎসাহী বিএনসিসি, রোভার স্কাউট ও গার্লস গাইড সদস্যের ভূমিকা ইতিমধ্যে প্রশ্নবিদ্ধ হয়েছে। নির্বাচনের দিন ক্যাম্পাসের প্রবেশমুখে নিরাপত্তার দায়িত্বরত কতিপয় বিএনসিসি, রোভার স্কাউট ও গার্লস গাইড সদস্যের সহায়তায় একটি নির্দিষ্ট গোষ্ঠীকে ক্যাম্পাসে অবাধে প্রবেশের সুযোগ দেওয়া হয়েছে বলে শিক্ষার্থীদের পক্ষ থেকে একাধিক অভিযোগ এসেছে এবং একাধিক বহিরাগত শিবিরকর্মীকে শিক্ষার্থীরা হাতেনাতে ধরে প্রক্টর অফিসে সোপর্দ করেছে।
১০. ভোটগণনার সময়ে পোলিং এজেন্টদের কার্যত নিষ্ক্রিয় ভূমিকা পালন করতে বাধ্য করা হয়েছে। ভোটগণনা প্রক্রিয়ার সঙ্গে পোলিং এজেন্টদের যথাযথভাবে যুক্ত না করায় এবং গণনাপ্রক্রিয়ায় ত্রুটি থাকার প্রতিবাদে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল সমর্থিত প্যানেলের সব পোলিং এজেন্ট সহ অধিকাংশ প্রার্থীর পোলিং এজেন্ট রেজাল্ট শিটে স্বাক্ষর না করেই ভোটকেন্দ্র ত্যাগ করেন।
১১. ডাকসু ও হল সংসদ নির্বাচনে অস্বচ্ছ ব্যালট বাক্স ব্যবহার করার কারণে বিভিন্ন অভিযোগ ও বিতর্ক তৈরি হয়েছে। তাছাড়া অধিকাংশ বুথে নির্বাচনের দিন বেলা ১১:৩০টার পর থেকে মার্কার পেন না থাকায় ভোটারদের বলপেন দিয়ে ব্যালট পেপারে ক্রস চিহ্ন দিতে হয়েছে। বলপেনে ক্রস চিহ্ন দেওয়া ভোটগুলো ওএমআর মেশিন সঠিকভাবে রিড করতে পারেনি বলে অনেক ভোট গণনা করা হয়নি বলে পোলিং এজেন্টরা লক্ষ্য করেছেন। একটি নির্দিষ্ট সময়ের পরের ভোটগুলোতে বলপেন ব্যবহার করে পরিকল্পিতভাবে ভোট নষ্ট করার হীন চেষ্টা ছিল কি না, তা নিয়ে অধিকাংশ প্রার্থীর মনে শঙ্কা তৈরি হয়েছে। এ ছাড়া ভোটার চিহ্নিত করার জন্য আঙুলে যে মার্কারের কালি ব্যবহার করা হয়েছে, সেটি অস্থায়ী কালি হওয়ার কারণে একই ব্যক্তি একাধিক ভোট দিয়েছে কি না, সে বিষয়ে শিক্ষার্থীদের মনে সন্দেহ দেখা দিয়েছে।
ভিপি পদপ্রার্থী আবিদুল ইসলাম খান আরও বলেন, ‘আইন ও বিধি অনুসারে উপরোক্ত অনিয়ম ও অসঙ্গতিসমূহের বিষয়ে বারবার সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে অবগত করে সমাধানের অনুরোধ করলেও তারা কোনো কার্যকর পদক্ষেপ নেননি, বরং ইচ্ছাকৃতভাবে কালক্ষেপণ করেছেন। যার ফলে ডাকসু ও হল সংসদ নির্বাচন ২০২৫ ইতিহাসের পাতায় একটি নেতিবাচকভাবে প্রশ্নবিদ্ধ নির্বাচন হিসেবে ঠাঁই পাওয়ার দিকে এগিয়ে যাচ্ছে বলে আমরা মনে করি।’
এ সময় তিনি উল্লিখিত অনিয়ম ও অসঙ্গতিসমূহের বিষয়ে যথাযথ তদন্তপূর্বক সকলের সামনে সত্য উন্মোচন করা হবে বলে আশা প্রকাশ করেন।
’২৫-এর ডাকসু ও হল সংসদ নির্বাচনকে ছাত্রদলের পক্ষ থেকে বৈধতা দেওয়ার সুযোগ নেই। এক প্রশ্নের জবাবে এ প্রসঙ্গে আবিদুল ইসলাম খান বলেন, ‘ফলাফল প্রত্যাখ্যান কি প্রত্যাখ্যান না, তার চেয়ে বড় কথা হচ্ছে ২০১৯ সালের যে ডাকসু নির্বাচন হয়েছে, সেই নির্বাচন নিয়েও এখন পর্যালোচনা হচ্ছে। সুতরাং ২০২৫ সালে ডাকসু নির্বাচনে যে অসঙ্গতি এবং অনিয়ম ও কারচুপির অভিযোগ এসেছে, সেগুলো নিয়েও পর্যালোচনা চলতে থাকবে যতক্ষণ না পর্যন্ত সুষ্ঠু নির্বাচন এবং প্রশাসন তার অবস্থান পরিষ্কার করতে পারবে। তাছাড়া এই নির্বাচনকে আমাদের জায়গা থেকে বৈধতা দেওয়ার কোনো সুযোগ নেই।’
এর আগে গত ৯ সেপ্টেম্বর অনুষ্ঠিত ডাকসু নির্বাচনে শীর্ষ তিনটি পদসহ ২৩টি পদে জয়ী হয় ইসলামী ছাত্রশিবিরের নেতৃত্বাধীন ঐক্যবদ্ধ শিক্ষার্থী জোট এবং বাকি পাঁচটি পদে জয় পান স্বতন্ত্র প্রার্থীরা।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) ও হল সংসদ নির্বাচনের ১৩ দিন পর নির্বাচনকে ঘিরে নানা অসঙ্গতি ও অনিয়মের ১১টি অভিযোগ উত্থাপন করেছে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল সমর্থিত প্যানেল। এ সময় তদন্তপূর্বক উত্থাপিত অভিযোগগুলোর সত্য উন্মোচনের আহ্বান জানানো হয়।
সোমবার (২২ সেপ্টেম্বর) সকালে বিশ্ববিদ্যালয়ের মধুর ক্যান্টিনে ছাত্রদল সমর্থিত প্যানেল আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এই অভিযোগ তোলা হয়। সংবাদ সম্মেলনে শিক্ষার্থীদের পাশে থাকার অঙ্গীকার ব্যক্ত করেন ছাত্রদল মনোনীত প্যানেল থেকে অংশ নেওয়া ডাকসুর সাধারণ সম্পাদক (জিএস) প্রার্থী তানভীর বারী হামিম।
তিনি বলেন, ‘তফসিল ঘোষণার পরেও নানা অনিয়ম পরিলক্ষিত হওয়ায় আমরা যথানিয়মে তাদের নিকট সকল অভিযোগ জানিয়ে সমাধান চেয়েছি, কিন্তু একটি অনিয়মেরও কোনো সমাধান না দিয়ে আমাদের শিক্ষকেরা সেই বিশ্বাসের মর্যাদা রক্ষা করতে পুরোপুরি ব্যর্থ হয়েছেন। নানা প্রতিবন্ধকতার বেড়াজাল ভেদ করে শিক্ষার্থীদের কল্যাণে কাজ করে যাচ্ছি এবং শিক্ষার্থীদের আস্থা অর্জনে আমাদের পথচলা অব্যাহত রয়েছে। তাই প্রচারণা চলাকালে আমরা শিক্ষার্থীদের কাছে প্রতিজ্ঞা করেছিলাম যে জয়-পরাজয় যাই হোক না কেন, আমরা তাদের ছেড়ে যাব না।’
বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ও কমিশনকে অভিযোগ জানিয়েও প্রতিকার পাননি বলে উল্লেখ করেন প্যানেলটি থেকে অংশ নেওয়া সহ-সভাপতি (ভিপি) প্রার্থী আবিদুল ইসলাম খান।
তিনি বলেন, ‘নির্বাচন শেষ হয়েছে প্রায় দুই সপ্তাহ হতে চলল। আমরা আমাদের জায়গা থেকে যে অভিযোগগুলো এসেছে, যে প্রমাণ আমরা পেয়েছি, সেগুলো সম্পর্কে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় নির্বাচন কমিশন এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কাছে আমরা লিখিত আবেদন জানিয়েছি। লিখিত আবেদন জানানোর পর আমরা দেখতে পাচ্ছি যে সেখানে কালক্ষেপণ হচ্ছে। আমাদের এড়িয়ে চলার চেষ্টা করা হচ্ছে। যার ফলশ্রুতিতে নিয়মের মধ্য দিয়ে একটি সময় পার করার পর যে অভিযোগগুলো তাদের জানিয়েছি, সেগুলো আপনাদের জানানো প্রয়োজন বোধ করছি।’
প্যানেলটির পক্ষ থেকে উত্থাপিত ১১টি অভিযোগ হলো-
১. ভোটারকে নির্দিষ্ট প্যানেলের পক্ষে ভোট দেওয়া ব্যালট পেপার সরবরাহ এবং ভোটার উপস্থিত হওয়ার আগেই ভোটার তালিকায় উপস্থিতির স্বাক্ষর দেওয়াসহ নানাবিধ জালিয়াতির সংবাদ নির্বাচন চলাকালীন গণমাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছে। বিভিন্ন কেন্দ্রে ভোটার উপস্থিতি ও ভোট প্রদানের হারে অসামঞ্জস্য পরিলক্ষিত হওয়ায় বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল সমর্থিত প্যানেলের প্রার্থীরা সহ অধিকাংশ প্যানেল এবং একাধিক স্বতন্ত্র প্রার্থী ইতোমধ্যে ভোটার উপস্থিতির তালিকা এবং ভোটকেন্দ্রের সিসিটিভি ফুটেজ চেয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন বরাবর আবেদন করেছেন। কিন্তু ঢাবি প্রশাসন সে বিষয়ে বারবার আশ্বাস দিলেও কার্যকর কোনো পদক্ষেপ গ্রহণ না করে কালক্ষেপণ করছে।
২. ২০১৯ সালের সর্বশেষ ডাকসু ও হল সংসদ নির্বাচনে ব্যালট পেপারে ক্রমিক নম্বর না থাকায় ছাত্রলীগ নীরবে ভোট কারচুপির সুযোগ তৈরি করতে পেরেছিল। কিন্তু দুঃখজনকভাবে, এবারের নির্বাচনে ব্যবহৃত ব্যালট পেপারেও কোনো ক্রমিক নম্বর ছিল না। এছাড়া ছাপানো ব্যালট পেপারের সংখ্যা, ভোটকেন্দ্রে সরবরাহকৃত, ব্যবহৃত ও বাতিল হওয়া ব্যালট পেপারের সংখ্যা এবং ভোটগ্রহণ শেষে ফেরতকৃত ব্যালট পেপারের সংখ্যা কোথাও প্রকাশ করা হয়নি। এমনকি বারবার জানতে চাওয়ার পরেও এসংক্রান্ত তথ্য কেন্দ্রে দায়িত্বরত পোলিং এজেন্টদের জানানো হয়নি। ফলাফল প্রকাশের পর উল্লিখিত অভিযোগগুলো নিয়মানুসারে চিফ রিটার্নিং অফিসার বরাবর দায়ের করতে গেলে তিনি এসব বিষয়ে ঢাবি প্রশাসনের সঙ্গে যোগাযোগের পরামর্শ দেন। পরবর্তীতে ব্যালট পেপার সংক্রান্ত ইস্যুতে একাধিক প্রার্থী ও পোলিং এজেন্ট কর্তৃক যথাযথ প্রক্রিয়ানুসারে অভিযোগ দায়ের করার পরও ঢাবি প্রশাসন তদন্তের মাধ্যমে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ না করে নানা অজুহাতে কালক্ষেপণ করছে।
৩. নির্বাচনে ব্যবহৃত ব্যালট পেপার কোনো প্রেস থেকে ছাপানো হয়েছে, সে বিষয়ে কোনো তথ্য প্রকাশ করা হয়নি। অনিরাপদ ছাপাখানা থেকে ফাঁস হওয়া নকল ব্যালটের মাধ্যমে ভোট কারচুপির অভিযোগ ইতোমধ্যে এসেছে। উল্লেখ্য, ৭ সেপ্টেম্বর, ২০২৫ তারিখে নীলক্ষেতের গাউসুল আজম মার্কেটের একটি ছাপাখানায় ডাকসু ও হল সংসদ নির্বাচনের বিপুল সংখ্যক ব্যালট পেপার অরক্ষিত অবস্থায় পাওয়া যায়, যেখানে ঢাবি প্রশাসনের কোনো নজরদারি ছিল না বলে নিশ্চিত হওয়া গেছে।
৪. ডাকসু নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়ার চার দিন পর, তথা ১৩ সেপ্টেম্বর, ২০২৫, শনিবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন কর্তৃক প্রকাশিত বিজ্ঞপ্তি অনুসারে ভোট গণনা মেশিন এবং সফটওয়্যারের নির্ভুলতা ও বিশ্বাসযোগ্যতা যাচাইয়ের সময় নির্দিষ্ট কয়েকজন শিক্ষক ও টেকনিশিয়ান উপস্থিত থাকলেও ভোটার ও প্রার্থীদের এ বিষয়ে মোটেই অবহিত করা হয়নি। ভোট গণনার বিষয়ে ইতিমধ্যে নানা অভিযোগ ও বিতর্ক সামনে এসেছে, কিন্তু একটি কার্যকর গণনা প্রক্রিয়া নিশ্চিত করা গেলে এ ধরনের বিতর্ক তৈরি হতো না।
৫. প্রত্যেক প্রার্থীর কাছ থেকে প্রতিটি কেন্দ্রের জন্য একজন করে পোলিং এজেন্ট নেওয়ার বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করলেও ভোটের আগের মধ্যরাতে পোলিং এজেন্টদের তালিকা প্রকাশ করা হয়, যেখানে প্রার্থীদের প্রস্তাবিত বিভিন্ন কেন্দ্রের পোলিং এজেন্টদের বাদ দেওয়া হয়। কোনো প্রক্রিয়ার মাধ্যমে পোলিং এজেন্টদের বাছাই করা হয়েছে, তা প্রকাশ করা হয়নি।
৬. ভোটগ্রহণের আগে পোলিং এজেন্টদের আইডি কার্ড সরবরাহ করার কথা থাকলেও তা যথাসময়ে সরবরাহ করা হয়নি। যে কারণে অনেক পোলিং এজেন্ট যথাসময়ে ভোটকেন্দ্রের সম্মুখে উপস্থিত হয়েও ভোটকেন্দ্রে প্রবেশ করতে পারেননি। এবং অনেক ভোটকেন্দ্রে পোলিং এজেন্টের অনুপস্থিতিতে পক্ষপাতদুষ্ট অবস্থায়ই ভোটগ্রহণ শুরু হয়।
৭. একটি নির্দিষ্ট প্যানেল বাদে সব প্রার্থী ও প্যানেলকে জানানো হয়েছে যে ৮টি কেন্দ্রে ভোটগ্রহণ হবে। কিন্তু ভোটের দিন দেখা যায়, ৮টি ভোটিং এলাকায় মোট ১৮টি কেন্দ্রে ভোটগ্রহণ করা হচ্ছে। যে কারণে ঐ নির্দিষ্ট প্যানেল ব্যতীত অন্য কোনো প্রার্থী বা প্যানেল ১৮টি কেন্দ্র অনুসারে পোলিং এজেন্ট নিয়োগ করতে পারেনি।
৮. ডাকসু ও হল সংসদ নির্বাচনে কোনো প্রক্রিয়া অনুসরণ করে পোলিং অফিসার নিয়োগ দেওয়া হয়েছে, সে বিষয়ে অস্পষ্টতা রয়েছে। চিফ রিটার্নিং অফিসার কর্তৃক পোলিং অফিসার নিয়োগ করার কথা থাকলেও তাদের ঢাবি প্রশাসন কর্তৃক নিয়োগ দেওয়া হয়েছে বলে তিনি জানিয়েছেন। নির্বাচনী আচরণবিধি সম্পর্কে ন্যূনতম ধারণা না থাকায় অধিকাংশ পোলিং অফিসার নির্বাচনী আচরণবিধি সম্পর্কে সাংবাদিকদের ভুল তথ্য দিয়ে প্রার্থীদের বিরুদ্ধে আচরণবিধি লঙ্ঘনের ভুয়া অভিযোগ তুলে নির্বাচনকে প্রভাবিত করেছেন।
৯. নিরাপত্তা ও ভোট সংশ্লিষ্ট দায়িত্বে থাকা কতিপয় অতি উৎসাহী বিএনসিসি, রোভার স্কাউট ও গার্লস গাইড সদস্যের ভূমিকা ইতিমধ্যে প্রশ্নবিদ্ধ হয়েছে। নির্বাচনের দিন ক্যাম্পাসের প্রবেশমুখে নিরাপত্তার দায়িত্বরত কতিপয় বিএনসিসি, রোভার স্কাউট ও গার্লস গাইড সদস্যের সহায়তায় একটি নির্দিষ্ট গোষ্ঠীকে ক্যাম্পাসে অবাধে প্রবেশের সুযোগ দেওয়া হয়েছে বলে শিক্ষার্থীদের পক্ষ থেকে একাধিক অভিযোগ এসেছে এবং একাধিক বহিরাগত শিবিরকর্মীকে শিক্ষার্থীরা হাতেনাতে ধরে প্রক্টর অফিসে সোপর্দ করেছে।
১০. ভোটগণনার সময়ে পোলিং এজেন্টদের কার্যত নিষ্ক্রিয় ভূমিকা পালন করতে বাধ্য করা হয়েছে। ভোটগণনা প্রক্রিয়ার সঙ্গে পোলিং এজেন্টদের যথাযথভাবে যুক্ত না করায় এবং গণনাপ্রক্রিয়ায় ত্রুটি থাকার প্রতিবাদে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল সমর্থিত প্যানেলের সব পোলিং এজেন্ট সহ অধিকাংশ প্রার্থীর পোলিং এজেন্ট রেজাল্ট শিটে স্বাক্ষর না করেই ভোটকেন্দ্র ত্যাগ করেন।
১১. ডাকসু ও হল সংসদ নির্বাচনে অস্বচ্ছ ব্যালট বাক্স ব্যবহার করার কারণে বিভিন্ন অভিযোগ ও বিতর্ক তৈরি হয়েছে। তাছাড়া অধিকাংশ বুথে নির্বাচনের দিন বেলা ১১:৩০টার পর থেকে মার্কার পেন না থাকায় ভোটারদের বলপেন দিয়ে ব্যালট পেপারে ক্রস চিহ্ন দিতে হয়েছে। বলপেনে ক্রস চিহ্ন দেওয়া ভোটগুলো ওএমআর মেশিন সঠিকভাবে রিড করতে পারেনি বলে অনেক ভোট গণনা করা হয়নি বলে পোলিং এজেন্টরা লক্ষ্য করেছেন। একটি নির্দিষ্ট সময়ের পরের ভোটগুলোতে বলপেন ব্যবহার করে পরিকল্পিতভাবে ভোট নষ্ট করার হীন চেষ্টা ছিল কি না, তা নিয়ে অধিকাংশ প্রার্থীর মনে শঙ্কা তৈরি হয়েছে। এ ছাড়া ভোটার চিহ্নিত করার জন্য আঙুলে যে মার্কারের কালি ব্যবহার করা হয়েছে, সেটি অস্থায়ী কালি হওয়ার কারণে একই ব্যক্তি একাধিক ভোট দিয়েছে কি না, সে বিষয়ে শিক্ষার্থীদের মনে সন্দেহ দেখা দিয়েছে।
ভিপি পদপ্রার্থী আবিদুল ইসলাম খান আরও বলেন, ‘আইন ও বিধি অনুসারে উপরোক্ত অনিয়ম ও অসঙ্গতিসমূহের বিষয়ে বারবার সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে অবগত করে সমাধানের অনুরোধ করলেও তারা কোনো কার্যকর পদক্ষেপ নেননি, বরং ইচ্ছাকৃতভাবে কালক্ষেপণ করেছেন। যার ফলে ডাকসু ও হল সংসদ নির্বাচন ২০২৫ ইতিহাসের পাতায় একটি নেতিবাচকভাবে প্রশ্নবিদ্ধ নির্বাচন হিসেবে ঠাঁই পাওয়ার দিকে এগিয়ে যাচ্ছে বলে আমরা মনে করি।’
এ সময় তিনি উল্লিখিত অনিয়ম ও অসঙ্গতিসমূহের বিষয়ে যথাযথ তদন্তপূর্বক সকলের সামনে সত্য উন্মোচন করা হবে বলে আশা প্রকাশ করেন।
’২৫-এর ডাকসু ও হল সংসদ নির্বাচনকে ছাত্রদলের পক্ষ থেকে বৈধতা দেওয়ার সুযোগ নেই। এক প্রশ্নের জবাবে এ প্রসঙ্গে আবিদুল ইসলাম খান বলেন, ‘ফলাফল প্রত্যাখ্যান কি প্রত্যাখ্যান না, তার চেয়ে বড় কথা হচ্ছে ২০১৯ সালের যে ডাকসু নির্বাচন হয়েছে, সেই নির্বাচন নিয়েও এখন পর্যালোচনা হচ্ছে। সুতরাং ২০২৫ সালে ডাকসু নির্বাচনে যে অসঙ্গতি এবং অনিয়ম ও কারচুপির অভিযোগ এসেছে, সেগুলো নিয়েও পর্যালোচনা চলতে থাকবে যতক্ষণ না পর্যন্ত সুষ্ঠু নির্বাচন এবং প্রশাসন তার অবস্থান পরিষ্কার করতে পারবে। তাছাড়া এই নির্বাচনকে আমাদের জায়গা থেকে বৈধতা দেওয়ার কোনো সুযোগ নেই।’
এর আগে গত ৯ সেপ্টেম্বর অনুষ্ঠিত ডাকসু নির্বাচনে শীর্ষ তিনটি পদসহ ২৩টি পদে জয়ী হয় ইসলামী ছাত্রশিবিরের নেতৃত্বাধীন ঐক্যবদ্ধ শিক্ষার্থী জোট এবং বাকি পাঁচটি পদে জয় পান স্বতন্ত্র প্রার্থীরা।
মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী বলেন, শারদীয় দুর্গাপূজা একটি ধর্মীয় অনুষ্ঠান। এটার পবিত্রতা রক্ষা করতে হবে। সব ধর্ম মিলে যেন একসঙ্গে কাজ করতে পারে সেই ব্যবস্থা করা হয়েছে। এখানে কোনো ধরনের নিরাপত্তা ঝুঁকি নেই। প্রত্যেক জায়গায় সিসিটিভি ব্যবস্থা করা হয়েছে।
৪ ঘণ্টা আগেপ্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে সরকারি প্রতিনিধি দলের অংশ সফরসঙ্গী হয়েছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ও দলটির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের পররাষ্ট্রবিষয়ক উপদেষ্টা হুমায়ুন কবির, জামায়াতে ইসলামীর নায়েবে আমীর সৈয়দ আবদুল্লাহ মুহাম্মদ তাহের এবং জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) সদস্য সচিব আখতার হোসেন ও সিনিয়র
১৫ ঘণ্টা আগে