ফিচার

কোন কোন খাবার কিডনির জন্য উপকারী খাবার

ডেস্ক, রাজনীতি ডটকম
প্রতিকী ছবি। ছবি : এআইয়ের তৈরি।

আমাদের দেহের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ হলো কিডনি বা বৃক্ক। প্রতিদিন এই অঙ্গ নিঃশব্দে কাজ করে চলে আমাদের শরীর থেকে বর্জ্য পদার্থ ও অতিরিক্ত পানি ছেঁকে বের করে দেয়। শুধু তাই নয়, রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ, লোহিত রক্তকণিকার উৎপাদনে সহায়তা, হাড় শক্ত রাখাসহ নানা গুরুত্বপূর্ণ কাজ করে কিডনি। কিন্তু আমরা অনেক সময় না জেনেই এমন খাবার খাই, যেগুলো আমাদের কিডনির জন্য ক্ষতিকর। তাই কিডনি সুস্থ রাখতে হলে চাই সঠিক খাদ্যাভ্যাস, সুষম ডায়েট এবং সময়মতো পানির সঠিক পরিমাণ গ্রহণ। সাম্প্রতিক সময়ে কিডনির সমস্যায় আক্রান্ত মানুষের সংখ্যা বাড়ছে, আর চিকিৎসকেরা বলছেন, এর পেছনে খাদ্যাভ্যাসের ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

কিডনি সুস্থ রাখতে কী ধরনের খাবার খাওয়া উচিত, এ নিয়ে বিশ্বের নানা প্রান্তের গবেষকেরা বিভিন্ন সময়ে গবেষণা করেছেন। যুক্তরাষ্ট্রের হার্ভার্ড মেডিকেল স্কুলের পুষ্টিবিদ ড. রাচেল জনসন বলেন, "কিডনির স্বাস্থ্যের ওপর খাদ্য যে কতটা প্রভাব ফেলে, তা আমরা অনেক সময় উপলব্ধিই করি না। সঠিক পুষ্টিকর খাদ্য গ্রহণ কিডনি রোগের ঝুঁকি কমিয়ে দেয় এবং বিদ্যমান রোগকে নিয়ন্ত্রণে রাখে।"

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, কিডনির জন্য উপকারী খাবার মানে এই নয় যে তা শুধু রোগীদের জন্য, বরং যে কেউ এসব খাবার খেয়ে আগেভাগেই নিজেকে সুরক্ষিত রাখতে পারেন। ড. জনসন আরও বলেন, "যখন কোনো রোগ ধরা পড়ে, তখন আমরা খাদ্য পরিবর্তনের চেষ্টা করি। অথচ আগে থেকেই যদি সচেতন হওয়া যেত, তবে অনেক রোগ এড়ানো সম্ভব হতো।"

সাধারণভাবে বলা হয়, কিডনি ভালো রাখতে হলে এমন সব খাবার খেতে হবে যেগুলোতে ফসফরাস, সোডিয়াম ও পটাশিয়ামের মাত্রা কম থাকে, এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ও ফাইবার বেশি থাকে। এমন কিছু খাবারের মধ্যে অন্যতম হলো আপেল, ফুলকপি, বেল পেপার, বেরি জাতীয় ফল, রসুন, পেঁয়াজ, ডিমের সাদা অংশ, ব্রোকলি, বাঁধাকপি ও জলপাই তেল।

উদাহরণস্বরূপ, আপেল এমন একটি ফল যা শুধু হজমে সহায়ক নয়, বরং এতে থাকা অ্যান্টি-ইনফ্ল্যামেটরি উপাদান কিডনি সুরক্ষায় কাজ করে। আমেরিকার ন্যাশনাল কিডনি ফাউন্ডেশন–এর মতে, “প্রতিদিন একটি আপেল খাওয়ার অভ্যাস কিডনির কার্যক্ষমতা দীর্ঘমেয়াদে ভালো রাখে।”

ফুলকপি কিডনি রোগীদের জন্য একটি চমৎকার শাকসবজি। এতে রয়েছে ভিটামিন সি, ফলেট এবং ফাইবার, যা শরীর থেকে বিষাক্ত উপাদান বের করে দিতে সাহায্য করে। গবেষণায় দেখা গেছে, যেসব মানুষ নিয়মিত ফুলকপি ও বাঁধাকপি জাতীয় সবজি খান, তাঁদের কিডনি দীর্ঘদিন ভালো থাকে।

বিশিষ্ট ব্রিটিশ পুষ্টিবিদ ড. ক্যারোলিন ডি’ক্রুজ বলেন, “ব্রোকলি ও বাঁধাকপি জাতীয় সবজির মধ্যে যে ফাইটোকেমিক্যাল রয়েছে, তা শুধু ক্যানসার প্রতিরোধে নয়, বরং কিডনি কোষের ক্ষয় ঠেকাতেও সক্ষম। বিশেষত যাদের প্রোটিন গ্রহণ সীমিত, তাদের জন্য এগুলো বিকল্প পুষ্টির উৎস।”

বেরি জাতীয় ফল যেমন ব্লুবেরি, স্ট্রবেরি, রাসবেরি, এমনকি স্থানীয় জাতের জাম, তেঁতুল ইত্যাদি অ্যান্টিঅক্সিডেন্টে ভরপুর। এরা দেহের কোষগুলোকে রক্ষা করে এবং কিডনির ওপর অক্সিডেটিভ স্ট্রেস কমায়। ক্লিনিকাল নিউট্রিশন জার্নালে প্রকাশিত একটি গবেষণায় দেখা গেছে, যেসব কিডনি রোগী নিয়মিত স্ট্রবেরি খেয়েছেন, তাঁদের ইউরিয়া ও ক্রিয়েটিনিনের মাত্রা অনেকটা নিয়ন্ত্রণে ছিল।

ডিমের সাদা অংশ প্রোটিনের একটি চমৎকার উৎস, এবং এতে ফসফরাস ও পটাশিয়াম কম থাকায় কিডনি রোগীদের জন্য অত্যন্ত নিরাপদ। ক্যালিফোর্নিয়ার স্ট্যানফোর্ড ইউনিভার্সিটির গবেষক ড. রে মিলার বলেন, “ডিমের কুসুমের তুলনায় ডিমের সাদা অংশ কিডনির ওপর চাপ কমায় এবং প্রোটিন ঘাটতি পূরণে সহায়ক।”

তবে শুধু উপকারী খাবার খেলেই হবে না, কিছু খাবার থেকে অবশ্যই দূরে থাকতে হবে। যেমন অতিরিক্ত লবণ, প্রক্রিয়াজাত খাবার, চিপস, প্যাকেটজাত স্যুপ, পিজ্জা বা ফাস্টফুড। কারণ এসব খাবারে সোডিয়াম ও ট্রান্স ফ্যাটের পরিমাণ অত্যধিক, যা কিডনির কার্যক্ষমতায় ব্যাঘাত ঘটায়। বিশেষজ্ঞদের মতে, সোডিয়াম শরীরে পানির ভারসাম্য নষ্ট করে দেয়, ফলে কিডনিকে অতিরিক্ত পরিশ্রম করতে হয়। দীর্ঘমেয়াদে তা কিডনি অকেজো করে দিতে পারে।

আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো পানি। পর্যাপ্ত পানি পান কিডনি সুস্থ রাখার অন্যতম পূর্বশর্ত। পানি শরীর থেকে বর্জ্য পদার্থ ছেঁকে বের করে দিতে সাহায্য করে, মূত্রনালিকে পরিষ্কার রাখে এবং পাথর হওয়ার ঝুঁকি কমায়। কিন্তু এই পানির পরিমাণও ব্যক্তিভেদে ভিন্ন হতে পারে। যাদের কিডনিতে কোনো সমস্যা নেই, তাদের প্রতিদিন অন্তত ৮-১০ গ্লাস পানি পান করাই উত্তম। তবে যাদের কিডনির কার্যক্ষমতা কমে গেছে, তাঁদের ক্ষেত্রে চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী পানি গ্রহণ করতে হয়।

কিডনি রোগের সঙ্গে উচ্চ রক্তচাপ ও ডায়াবেটিসের সম্পর্কও নিবিড়। তাই এ দুই রোগ নিয়ন্ত্রণেও খাদ্যাভ্যাসের ভূমিকা আছে। কম চিনি, কম লবণ, কম ফ্যাট এবং বেশি আঁশযুক্ত খাবার গ্রহণ করলে কিডনির পাশাপাশি হৃৎপিণ্ড ও যকৃতও ভালো থাকে।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (World Health Organization) এক প্রতিবেদনে জানায়, “উন্নয়নশীল দেশে কিডনি রোগের মূল কারণ হলো অনিয়ন্ত্রিত খাদ্যাভ্যাস ও পর্যাপ্ত স্বাস্থ্যসেবার অভাব। অথচ খাদ্যে সামান্য সচেতনতা আনলেই এর ভয়াবহতা অনেকাংশে কমানো সম্ভব।”

বাংলাদেশের মতো দেশে যেখানে সচেতনতা কম, সেখানে ঘরে ঘরে কিডনি-বান্ধব খাদ্য তালিকা তৈরি করা সময়ের দাবি। স্থানীয় ফল যেমন আমলকী, বরই, করলা, চালতা, ডালিম ইত্যাদিও কিডনির জন্য উপকারী, যদি সঠিক পরিমাণে খাওয়া হয়।

সবশেষে বলতেই হয়, কিডনি হচ্ছে এক নীরব যোদ্ধা—যার যত্ন না নিলে তার ক্ষয় চোখে পড়ে না, কিন্তু ক্ষতি হয় ভয়ানকভাবে। বিদেশি গবেষকেরা একমত যে, প্রতিদিনের খাদ্যতালিকায় সামান্য পরিবর্তন এনে, স্বাস্থ্যকর খাবারের অভ্যাস গড়ে তুলে এবং পর্যাপ্ত পানি পান করে কিডনিকে বহু বছর সুস্থ রাখা যায়। যেমনটি বলেছেন ড. রাচেল জনসন, “কিডনিকে ভালোবাসতে চাইলে খাবারকে ভালোবাসতে হবে। কারণ আমরা যা খাই, তাই-ই কিডনির স্বাস্থ্য নির্ধারণ করে।”

ad
ad

খবরাখবর থেকে আরও পড়ুন

নিম্নচাপে উত্তাল সাগর, বন্দরগুলোতে ৩ নম্বর সতর্কসংকেত

বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, পশ্চিম-মধ্য বঙ্গোপসাগর ও তৎসংলগ্ন এলাকায় অবস্থানরত সুস্পষ্ট লঘুচাপটি উত্তর ও উত্তর-পশ্চিম দিকে অগ্রসর ও ঘনীভূত হয়ে একই এলাকায় নিম্নচাপে পরিণত হয়েছে। এটি বুধবার বিকেল ৩টায় চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দর থেকে ৯১৫, কক্সবাজার সমুদ্রবন্দর থেকে ৮৬৫, মোংলা সমুদ্রবন্দর থেকে ৮০০ ও পায়রা সমুদ্রবন্দ

৪ ঘণ্টা আগে

রংপুরের পীরগাছায় মানুষের শরীরে অ্যানথ্রাক্স শনাক্ত, পরিস্থিতি কেমন ও ঝুঁকি কতটা

বাংলাদেশের কিছু এলাকায় এর আগেও অ্যানথ্রাক্সে আক্রান্ত হবার ঘটনা ঘটেছে। ২০১০ সালে অ্যানথ্রাক্স নিয়ন্ত্রণের লক্ষ্যে একটি জাতীয় সমন্বয় কমিটিও গঠন করা হয়েছিল। এবার এখনো রংপুরের বাইরে অ্যানথ্রাক্স সংক্রমণের কোনো খবর পাওয়া যায়নি।

৬ ঘণ্টা আগে

হাসপাতালের বেডে সাবেক শিল্পমন্ত্রীর হাতকড়া নিয়ে বিতর্ক, যা বলছে কারা কর্তৃপক্ষ

কেউ কেউ বলছেন, মুমূর্ষু অবস্থায়ও নূরুল মজিদ মাহমুদ হুমায়ূনকে হাতকড়া পরিয়ে রাখা হয়েছে। কেউ কেউ বলছেন, মৃত্যুর পরও তার হাতে হাতকড়া পরানো ছিল। নরসিংদী-৪ (মনোহরদী-বেলাব) আসনের পাঁচবারের সাবেক সংসদ সদস্য ও আওয়ামী লীগ সরকারের সাবেক শিল্পমন্ত্রী নূরুল মজিদ মাহমুদ হুমায়ূনের দ্বিতীয় জানাজা গতকাল মঙ্গলবার বে

৬ ঘণ্টা আগে

চলতি বছর ডেঙ্গুতে মৃত্যু ২০০

গত ২৪ ঘণ্টায় বরিশাল বিভাগে সবচেয়ে বেশি ডেঙ্গু রোগী (১৩৮ জন) হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। এছাড়া ঢাকা বিভাগে ১০০ জন, ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনে ৭৮ জন, ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনে ৬৪ জন, চট্টগ্রাম বিভাগে ৬০ জন, ময়মনসিংহ বিভাগে ২৮ জন এবং রংপুর বিভাগে ২২ জন ডেঙ্গু নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন।

৬ ঘণ্টা আগে