
নাজমুল ইসলাম হৃদয়

জুলাই সনদের যেসব প্রস্তাব বাস্তবায়ন করার জন্য সংবিধান সংশোধন করতে হবে, সেগুলোর জন্য গণভোটের ঘোষণা দিয়েছে সরকার। বেশির ভাগ রাজনৈতিক দলের মধ্যে এই গণভোট প্রসঙ্গে ঐকমত্য থাকলেও গণভোটের ধরন ও তারিখ নিয়ে বিভক্তি থেকে গেছে। নাগরিক সমাজ ও বিশেষজ্ঞরাও এ গণভোট নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন।
গণভোটের ব্যালটে থাকা একই ‘হ্যাঁ’ বা ‘না’ দিয়ে চারটি বিষয়ে মতামত জানানোর প্রক্রিয়াটি নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে আলাদা করে। অনলাইন-অফলাইনে অভিমত এসেছে, একই প্রশ্নে চার বিষয়ের উত্তর দেওয়ার যে ব্যবস্থা গণভোটে রাখা হয়েছে তা গণতান্ত্রিক ও বাস্তবসম্মত হয়নি। এই গণভোটের ব্যালটে ভোট দেওয়ার জন্য জুলাই সনদের পুরো পড়া থাকতে হবে উল্লেখ করে কেউ কেউ বলছেন, বাস্তবে অনেকের পক্ষেই এটি পড়া সম্ভব হবে না।
অনেক রাজনীতিবিদ ও বিশেষজ্ঞরাও সাধারণ মানুষের এসব উদ্বেগের সঙ্গে একমত পোষণ করছেন। তারা বলছেন, দিন শেষে জুলাই সনদের গণভোট বিষয়টি নতুন সংকট হিসেবে হাজির হয়েছে।
জুলাই সনদের গণভোট বিতর্কে একদম মৌলিক প্রশ্ন তুলেছেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের সরকার ও রাজনীতি বিভাগের সাবেক শিক্ষক রাষ্ট্রবিজ্ঞানী অধ্যাপক দিলারা চৌধুরী। সাধারণ নির্বাচনের দিনে গণভোট আয়োজনের প্রস্তাবকে ‘অবাস্তব’, ‘অযৌক্তিক’ ও ‘গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ার সঙ্গে সাংঘর্ষিক’ বলে অভিহিত করেছেন তিনি।
অধ্যাপক দিলারা রাজনীতি ডটকমকে বলেন, বিশ্বের কোনো গণতান্ত্রিক দেশে এ রকম একই দিনে সাধারণ নির্বাচন ও গুরুত্বপূর্ণ জাতীয় গণভোট আয়োজনের নজির নেই। নির্বাচন হলো সরকার বা প্রতিনিধি বাছাইয়ের প্রক্রিয়া, আর গণভোট হলো রাষ্ট্রের কোনো সুনির্দিষ্ট, গুরুত্বপূর্ণ নীতি বা প্রস্তাবনার ওপর জনগণের ‘হ্যাঁ’ বা ‘না’ মতামত নেওয়া। এই দুটি সম্পূর্ণ ভিন্ন প্রকৃতির গণতান্ত্রিক অনুশীলনকে একসঙ্গে ‘জগাখিচুড়ি’ পাকিয়ে ফেলার চেষ্টা গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়াকেই প্রশ্নবিদ্ধ করে।
খোদ গণভোটের সময়োপযোগিতা ও সাংবিধানিক ভিত্তি নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর মিশ্র অবস্থানও উদ্বেগ তৈরি করেছে। বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির (সিপিবি) সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও বাম গণতান্ত্রিক জোটের সমন্বয়ক রুহিন হোসেন প্রিন্স যেমন ঠিক এই মুহূর্তে গণভোট আয়োজনকে ‘সম্পূর্ণ অপ্রয়োজনীয়’ বলে মনে করছেন।
রাজনীতি ডটকমকে প্রিন্স বলেন, গণভোটের প্রয়োজন হতে পারে সংসদে কোনো সংবিধান সংশোধনী পাস হওয়ার পর। কিন্তু বর্তমান প্রেক্ষাপটে এটি একটি জটিল পরিস্থিতি তৈরি করেছে। রাষ্ট্রপতির আদেশের বৈধতা নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে। প্রস্তাবিত সংবিধান সংস্কার পরিষদ কতটুকু যৌক্তিক, সেটিও বিবেচনা করা প্রয়োজন। এই পরিষদও একেবারেই অপ্রয়োজনীয়।
সাধারণ মানুষের মধ্যে সবচেয়ে বেশি আলোচনা চলছে গণভোটের প্রশ্ন নিয়ে। জুলাই সনদ বাস্তবায়নের যে আদেশ জারি করেছে সরকার তাতে উল্লেখ করা হয়েছে গণভোটের প্রশ্নটি। সেটি এমন—
‘আপনি কি জুলাই জাতীয় সনদ (সংবিধান সংস্কার) বাস্তবায়ন আদেশ, ২০২৫ এবং জুলাই জাতীয় সনদে লিপিবদ্ধ সংবিধান সংস্কার সম্পর্কিত নিম্নলিখিত প্রস্তাবগুলোর প্রতি আপনার সম্মতি জ্ঞাপন করছেন?’
এ প্রশ্নের ‘নিম্নলিখিত প্রস্তাবগুলো’ হিসেবে চারটি বিষয় উল্লেখ করা হবে গণভোটের ব্যালটে। সেগুলো হলো—
অর্থাৎ তত্ত্বাবধায়ক সরকার, সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান পুনর্গঠন, ১০০ সদস্যের উচ্চকক্ষসহ দ্বিকক্ষবিশিষ্ট সংসদ, নারী প্রতিনিধিত্ব, প্রধানমন্ত্রীর মেয়াদ নির্দিষ্ট করাসহ জুলাই সনদে সব রাজনৈতিক দলের ঐকমত্য হওয়া ৩০ দফার মতো মৌলিক, সুদূরপ্রসারী ও স্বতন্ত্র সাংবিধানিক সংস্কারের মতো সব বিষয়ে গণভোটে ভোটারদের কাছে উত্তর নেওয়া হবে একটিমাত্র ‘হ্যাঁ’ বা ‘না ভোটে। এই ‘প্যাকেজ ডিল’কে উভয় সংকটের কারণ মনে করছেন অনেকেই।
ঢাকার একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী খালেদ মাহমুদ এবারই প্রথম ভোটাধিকার প্রয়োগের সুযোগ পেয়েছেন। গণভোটের প্রশ্ন নিয়ে দ্বিধার কথা জানিয়ে রাজনীতি ডটকমকে তিনি বলেন, “ধরুন, এই চারটি প্রস্তাবের তিনটির সঙ্গে আমি একমত, কিন্তু একটির সঙ্গে (হতে পারে সংসদের উচ্চকক্ষ বা তত্ত্বাবধায়ক সরকার) আমি একমত নই। তখন আমি কী করব? ‘হ্যাঁ’ দিলে যা চাই না সেটাও পাস হবে, ‘না’ দিলে যা চাই সেটাও বাতিল হবে।”
রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যেও এসব বিষয় নিয়ে দ্বিধা কাটেনি। অনেক বিষয়েই দ্বিমত থেকে গেছে। এ কারণেই সিপিবি এখন পর্যন্ত জুলাই সনদে সই-ই করেনি। গণভোট ইস্যুতেও তাই দলটির অবস্থান সুনির্দিষ্ট হয়নি।
সিপিবির সাবেক সাধারণ সম্পাদক রুহিন হোসেন প্রিন্স বলেন, এখানে আমরাও কিছু সংশোধনীর পক্ষে, কিন্তু দ্বিকক্ষবিশিষ্ট সংসদের পক্ষে আমরা নেই। এ অবস্থায় একজন সচেতন ভোটার শুধু ‘হ্যাঁ’ বা ‘না’ ভোটের মাধ্যমে কীভাবে তার প্রকৃত মতামত জানাবেন? যথাযথভাবে একজন সচেতন মানুষও যদি ভোট দিতে যান, তাহলে তিনি কিন্তু যথাযথভাবে ভোট দিতে পারবেন না।
গণভোটের প্রশ্নে সরাসরি ‘জুলাই সনদে’র সব প্রস্তাবের প্রতি সম্মতি চাওয়া হয়েছে। অর্থাৎ জুলাই সনদের পুরোটা ভোটারদের পড়া থাকতে হবে। একে ‘প্রায় অসম্ভব’ মনে করছেন শিক্ষার্থী খালেদ মাহমুদ। প্রশ্ন রেখে তিনি বলেন, ‘জুলাই সনদের ব্যাপারে কয়জন জানে? আমরা ইউনিভার্সিটির ছাত্ররাই অনেকে সনদ পুরোটা পড়িনি। সেখানে সাধারণ ভোটার যারা দিন আনে দিন খায়, তাদের কাছে তো এই সনদ পৌঁছায়নি। তারা কীসের ভিত্তিতে ভোট দেবেন?’
এ শর্তকে ‘অবাস্তব’ উল্লেখ করে ব্যাঙ্গাত্মক ঢঙে ফেসবুকে স্ট্যাটাস দিয়েছেন লেখক আহসান হাবিব। লিখেছেন, ‘গণভোটের যে ৪টি প্রশ্ন রাখা হয়েছে তা পড়ে আমার মাথা ঘুরছে। কেননা এর উত্তর দিতে হলে আমাকে প্রথমত জুলাই সনদ পুরোটা পড়তে হবে। শুধু পড়লে হবে না, সেসব বুঝতেও হবে। আর বুঝতে হলে আমাকে রাষ্ট্রবিজ্ঞানী হতে হবে... সকলের পক্ষে কি রাষ্ট্রবিজ্ঞানী হওয়া সম্ভব?’
বিষয়টি নিয়ে একই ধরনের মন্তব্য করেছেন অধ্যাপক দিলারা চৌধুরীও। রাজনীতি ডটকমকে তিনি বলেন, ‘গণভোটের জন্য যে সুনির্দিষ্ট প্রস্তাবনা ও তার পক্ষে-বিপক্ষে ব্যাপক গণপ্রচার প্রয়োজন, তার পরিবেশ বা সময় দৃশ্যমান নয়। কোনো প্রচার বা জনসচেতনতা ছাড়াই এ আয়োজন করা হলে তা একটি প্রহসনে পরিণত হবে। কারণ জনগণ জানতেই পারবে না তারা ঠিক কিসের জন্য ভোট দিচ্ছে।’
গোটা বিষয়টির সুদূরপ্রসারী ও নেতিবাচক প্রভাব সম্পর্কে সতর্ক করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক আইনুল ইসলাম রাজনীতি ডটকমকে বলেন, গণভোটের ব্যালটে উল্লেখ করা চারটি মূল দফার আড়ালে প্রায় ৪৮টি জায়গায় সংবিধান সংশোধনের মতো স্পর্শকাতর বিষয় যুক্ত, যা সাধারণ মানুষের পক্ষে বোঝা অসম্ভব। এই কাঠামোগত জটিলতা ও তথ্যের অস্পষ্টতা ভোটারদের মধ্যে এক ধরনের অনীহা তৈরি করতে পারে, যার ফলে ভোটকেন্দ্রে উপস্থিতি আশঙ্কাজনকভাবে কমে যেতে পারে।
এই আশঙ্কার সঙ্গে একমত পোষণ করে রুহিন হোসেন প্রিন্স বলেন, দেশে ভোটার ১২ কোটি ৭০ লাখের বেশি। তাদের বড় একটি অংশই এতসব বিষয়ে সচেতন নন। অনলাইনে পোস্ট দিয়ে বা লিফলেট ছড়িয়ে এই বিশাল জনগোষ্ঠীর কাছে পৌঁছানো সম্ভব বলে মনে হয় না। তাদের জন্য এগুলো জানাবোঝার সুযোগ করতে গেলে যে বিপুল পরিমাণ সময় লাগবে তা সরকারের হাতে নেই।
শেষ পর্যন্ত ভোটারদের সচেতন না করেই গণভোটে গেলে তার প্রভাব আরও ক্ষতিকর হতে পারে বলে শঙ্কা অধ্যাপক আইনুল ইসলামের। তিনি বলেন, সবাই ধরে নিচ্ছে গণভোটে ‘হ্যাঁ’ ভোট পড়বে। কিন্তু এসব বিভ্রান্তির কারণে কিন্তু ‘না’ ভোটের পরিমাণ অপ্রত্যাশিতভাবে বেশিও হয়ে যেতে পারে। তখন কিন্তু পুরো সংস্কার প্রক্রিয়াটিই ঝুঁকির মধ্যে পড়বে।
রুহিন হোসেন প্রিন্সও একই আশঙ্কার কথা জানিয়ে বলেন, দীর্ঘ আলোচনার মধ্য দিয়ে কিন্তু আমরা অনেকগুলো বিষয় ঐক্যমত্য পোষণ করেছি। কিন্তু যদি এখানে ভোট কম পড়ে বা ‘না’ ভোট বেশি পড়ে, তাহলে আমাদের সংস্কারের আকাঙ্ক্ষায় যতটুকুই ঐকমত্য এসেছে, অর্থাৎ যে সংস্কারটুকু সবাই চাইছে, সেটুকুও ভেস্তে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।
তবে সবার অবস্থান এমন ‘দ্বিধান্বিত’ নয়। রোববার দুপুরে সংবাদ সম্মেলন করে জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেল মিয়া গোলাম পরওয়ার বলেছেন, তারা যে আট দল পাঁচ দফা দাবিতে আন্দোলন করে যাচ্ছেন তারা সবাই গণভোটে জুলাই সনদকে ‘হ্যাঁ’ বলবেন এবং জনগণকেও ‘হ্যাঁ’ ভোট দিতে উদ্বুদ্ধ করবেন।
আগে একাধিক ব্যালট বা একাধিক প্রশ্নের প্রস্তাব থাকলেও ইউনাইটেড পিপলস বাংলাদেশও (ইউপি বাংলাদেশ) গণভোটের বর্তমান অবস্থার প্রতি সমর্থন জানাচ্ছে। সংগঠনটির সদস্য সচিব মোহাম্মদ হিযবুল্লাহ ফেসবুকে প্রধান উপদেষ্টার ভাষণকে স্বাগতও জানিয়েছেন। ‘জেদাজেদি ও রাজনৈতিক ইগো’ পরিহার করে সব রাজনৈতিক দলকে একসঙ্গে হাঁটার আহ্বানও জানিয়েছেন তিনি।

জুলাই সনদের যেসব প্রস্তাব বাস্তবায়ন করার জন্য সংবিধান সংশোধন করতে হবে, সেগুলোর জন্য গণভোটের ঘোষণা দিয়েছে সরকার। বেশির ভাগ রাজনৈতিক দলের মধ্যে এই গণভোট প্রসঙ্গে ঐকমত্য থাকলেও গণভোটের ধরন ও তারিখ নিয়ে বিভক্তি থেকে গেছে। নাগরিক সমাজ ও বিশেষজ্ঞরাও এ গণভোট নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন।
গণভোটের ব্যালটে থাকা একই ‘হ্যাঁ’ বা ‘না’ দিয়ে চারটি বিষয়ে মতামত জানানোর প্রক্রিয়াটি নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে আলাদা করে। অনলাইন-অফলাইনে অভিমত এসেছে, একই প্রশ্নে চার বিষয়ের উত্তর দেওয়ার যে ব্যবস্থা গণভোটে রাখা হয়েছে তা গণতান্ত্রিক ও বাস্তবসম্মত হয়নি। এই গণভোটের ব্যালটে ভোট দেওয়ার জন্য জুলাই সনদের পুরো পড়া থাকতে হবে উল্লেখ করে কেউ কেউ বলছেন, বাস্তবে অনেকের পক্ষেই এটি পড়া সম্ভব হবে না।
অনেক রাজনীতিবিদ ও বিশেষজ্ঞরাও সাধারণ মানুষের এসব উদ্বেগের সঙ্গে একমত পোষণ করছেন। তারা বলছেন, দিন শেষে জুলাই সনদের গণভোট বিষয়টি নতুন সংকট হিসেবে হাজির হয়েছে।
জুলাই সনদের গণভোট বিতর্কে একদম মৌলিক প্রশ্ন তুলেছেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের সরকার ও রাজনীতি বিভাগের সাবেক শিক্ষক রাষ্ট্রবিজ্ঞানী অধ্যাপক দিলারা চৌধুরী। সাধারণ নির্বাচনের দিনে গণভোট আয়োজনের প্রস্তাবকে ‘অবাস্তব’, ‘অযৌক্তিক’ ও ‘গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ার সঙ্গে সাংঘর্ষিক’ বলে অভিহিত করেছেন তিনি।
অধ্যাপক দিলারা রাজনীতি ডটকমকে বলেন, বিশ্বের কোনো গণতান্ত্রিক দেশে এ রকম একই দিনে সাধারণ নির্বাচন ও গুরুত্বপূর্ণ জাতীয় গণভোট আয়োজনের নজির নেই। নির্বাচন হলো সরকার বা প্রতিনিধি বাছাইয়ের প্রক্রিয়া, আর গণভোট হলো রাষ্ট্রের কোনো সুনির্দিষ্ট, গুরুত্বপূর্ণ নীতি বা প্রস্তাবনার ওপর জনগণের ‘হ্যাঁ’ বা ‘না’ মতামত নেওয়া। এই দুটি সম্পূর্ণ ভিন্ন প্রকৃতির গণতান্ত্রিক অনুশীলনকে একসঙ্গে ‘জগাখিচুড়ি’ পাকিয়ে ফেলার চেষ্টা গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়াকেই প্রশ্নবিদ্ধ করে।
খোদ গণভোটের সময়োপযোগিতা ও সাংবিধানিক ভিত্তি নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর মিশ্র অবস্থানও উদ্বেগ তৈরি করেছে। বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির (সিপিবি) সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও বাম গণতান্ত্রিক জোটের সমন্বয়ক রুহিন হোসেন প্রিন্স যেমন ঠিক এই মুহূর্তে গণভোট আয়োজনকে ‘সম্পূর্ণ অপ্রয়োজনীয়’ বলে মনে করছেন।
রাজনীতি ডটকমকে প্রিন্স বলেন, গণভোটের প্রয়োজন হতে পারে সংসদে কোনো সংবিধান সংশোধনী পাস হওয়ার পর। কিন্তু বর্তমান প্রেক্ষাপটে এটি একটি জটিল পরিস্থিতি তৈরি করেছে। রাষ্ট্রপতির আদেশের বৈধতা নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে। প্রস্তাবিত সংবিধান সংস্কার পরিষদ কতটুকু যৌক্তিক, সেটিও বিবেচনা করা প্রয়োজন। এই পরিষদও একেবারেই অপ্রয়োজনীয়।
সাধারণ মানুষের মধ্যে সবচেয়ে বেশি আলোচনা চলছে গণভোটের প্রশ্ন নিয়ে। জুলাই সনদ বাস্তবায়নের যে আদেশ জারি করেছে সরকার তাতে উল্লেখ করা হয়েছে গণভোটের প্রশ্নটি। সেটি এমন—
‘আপনি কি জুলাই জাতীয় সনদ (সংবিধান সংস্কার) বাস্তবায়ন আদেশ, ২০২৫ এবং জুলাই জাতীয় সনদে লিপিবদ্ধ সংবিধান সংস্কার সম্পর্কিত নিম্নলিখিত প্রস্তাবগুলোর প্রতি আপনার সম্মতি জ্ঞাপন করছেন?’
এ প্রশ্নের ‘নিম্নলিখিত প্রস্তাবগুলো’ হিসেবে চারটি বিষয় উল্লেখ করা হবে গণভোটের ব্যালটে। সেগুলো হলো—
অর্থাৎ তত্ত্বাবধায়ক সরকার, সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান পুনর্গঠন, ১০০ সদস্যের উচ্চকক্ষসহ দ্বিকক্ষবিশিষ্ট সংসদ, নারী প্রতিনিধিত্ব, প্রধানমন্ত্রীর মেয়াদ নির্দিষ্ট করাসহ জুলাই সনদে সব রাজনৈতিক দলের ঐকমত্য হওয়া ৩০ দফার মতো মৌলিক, সুদূরপ্রসারী ও স্বতন্ত্র সাংবিধানিক সংস্কারের মতো সব বিষয়ে গণভোটে ভোটারদের কাছে উত্তর নেওয়া হবে একটিমাত্র ‘হ্যাঁ’ বা ‘না ভোটে। এই ‘প্যাকেজ ডিল’কে উভয় সংকটের কারণ মনে করছেন অনেকেই।
ঢাকার একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী খালেদ মাহমুদ এবারই প্রথম ভোটাধিকার প্রয়োগের সুযোগ পেয়েছেন। গণভোটের প্রশ্ন নিয়ে দ্বিধার কথা জানিয়ে রাজনীতি ডটকমকে তিনি বলেন, “ধরুন, এই চারটি প্রস্তাবের তিনটির সঙ্গে আমি একমত, কিন্তু একটির সঙ্গে (হতে পারে সংসদের উচ্চকক্ষ বা তত্ত্বাবধায়ক সরকার) আমি একমত নই। তখন আমি কী করব? ‘হ্যাঁ’ দিলে যা চাই না সেটাও পাস হবে, ‘না’ দিলে যা চাই সেটাও বাতিল হবে।”
রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যেও এসব বিষয় নিয়ে দ্বিধা কাটেনি। অনেক বিষয়েই দ্বিমত থেকে গেছে। এ কারণেই সিপিবি এখন পর্যন্ত জুলাই সনদে সই-ই করেনি। গণভোট ইস্যুতেও তাই দলটির অবস্থান সুনির্দিষ্ট হয়নি।
সিপিবির সাবেক সাধারণ সম্পাদক রুহিন হোসেন প্রিন্স বলেন, এখানে আমরাও কিছু সংশোধনীর পক্ষে, কিন্তু দ্বিকক্ষবিশিষ্ট সংসদের পক্ষে আমরা নেই। এ অবস্থায় একজন সচেতন ভোটার শুধু ‘হ্যাঁ’ বা ‘না’ ভোটের মাধ্যমে কীভাবে তার প্রকৃত মতামত জানাবেন? যথাযথভাবে একজন সচেতন মানুষও যদি ভোট দিতে যান, তাহলে তিনি কিন্তু যথাযথভাবে ভোট দিতে পারবেন না।
গণভোটের প্রশ্নে সরাসরি ‘জুলাই সনদে’র সব প্রস্তাবের প্রতি সম্মতি চাওয়া হয়েছে। অর্থাৎ জুলাই সনদের পুরোটা ভোটারদের পড়া থাকতে হবে। একে ‘প্রায় অসম্ভব’ মনে করছেন শিক্ষার্থী খালেদ মাহমুদ। প্রশ্ন রেখে তিনি বলেন, ‘জুলাই সনদের ব্যাপারে কয়জন জানে? আমরা ইউনিভার্সিটির ছাত্ররাই অনেকে সনদ পুরোটা পড়িনি। সেখানে সাধারণ ভোটার যারা দিন আনে দিন খায়, তাদের কাছে তো এই সনদ পৌঁছায়নি। তারা কীসের ভিত্তিতে ভোট দেবেন?’
এ শর্তকে ‘অবাস্তব’ উল্লেখ করে ব্যাঙ্গাত্মক ঢঙে ফেসবুকে স্ট্যাটাস দিয়েছেন লেখক আহসান হাবিব। লিখেছেন, ‘গণভোটের যে ৪টি প্রশ্ন রাখা হয়েছে তা পড়ে আমার মাথা ঘুরছে। কেননা এর উত্তর দিতে হলে আমাকে প্রথমত জুলাই সনদ পুরোটা পড়তে হবে। শুধু পড়লে হবে না, সেসব বুঝতেও হবে। আর বুঝতে হলে আমাকে রাষ্ট্রবিজ্ঞানী হতে হবে... সকলের পক্ষে কি রাষ্ট্রবিজ্ঞানী হওয়া সম্ভব?’
বিষয়টি নিয়ে একই ধরনের মন্তব্য করেছেন অধ্যাপক দিলারা চৌধুরীও। রাজনীতি ডটকমকে তিনি বলেন, ‘গণভোটের জন্য যে সুনির্দিষ্ট প্রস্তাবনা ও তার পক্ষে-বিপক্ষে ব্যাপক গণপ্রচার প্রয়োজন, তার পরিবেশ বা সময় দৃশ্যমান নয়। কোনো প্রচার বা জনসচেতনতা ছাড়াই এ আয়োজন করা হলে তা একটি প্রহসনে পরিণত হবে। কারণ জনগণ জানতেই পারবে না তারা ঠিক কিসের জন্য ভোট দিচ্ছে।’
গোটা বিষয়টির সুদূরপ্রসারী ও নেতিবাচক প্রভাব সম্পর্কে সতর্ক করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক আইনুল ইসলাম রাজনীতি ডটকমকে বলেন, গণভোটের ব্যালটে উল্লেখ করা চারটি মূল দফার আড়ালে প্রায় ৪৮টি জায়গায় সংবিধান সংশোধনের মতো স্পর্শকাতর বিষয় যুক্ত, যা সাধারণ মানুষের পক্ষে বোঝা অসম্ভব। এই কাঠামোগত জটিলতা ও তথ্যের অস্পষ্টতা ভোটারদের মধ্যে এক ধরনের অনীহা তৈরি করতে পারে, যার ফলে ভোটকেন্দ্রে উপস্থিতি আশঙ্কাজনকভাবে কমে যেতে পারে।
এই আশঙ্কার সঙ্গে একমত পোষণ করে রুহিন হোসেন প্রিন্স বলেন, দেশে ভোটার ১২ কোটি ৭০ লাখের বেশি। তাদের বড় একটি অংশই এতসব বিষয়ে সচেতন নন। অনলাইনে পোস্ট দিয়ে বা লিফলেট ছড়িয়ে এই বিশাল জনগোষ্ঠীর কাছে পৌঁছানো সম্ভব বলে মনে হয় না। তাদের জন্য এগুলো জানাবোঝার সুযোগ করতে গেলে যে বিপুল পরিমাণ সময় লাগবে তা সরকারের হাতে নেই।
শেষ পর্যন্ত ভোটারদের সচেতন না করেই গণভোটে গেলে তার প্রভাব আরও ক্ষতিকর হতে পারে বলে শঙ্কা অধ্যাপক আইনুল ইসলামের। তিনি বলেন, সবাই ধরে নিচ্ছে গণভোটে ‘হ্যাঁ’ ভোট পড়বে। কিন্তু এসব বিভ্রান্তির কারণে কিন্তু ‘না’ ভোটের পরিমাণ অপ্রত্যাশিতভাবে বেশিও হয়ে যেতে পারে। তখন কিন্তু পুরো সংস্কার প্রক্রিয়াটিই ঝুঁকির মধ্যে পড়বে।
রুহিন হোসেন প্রিন্সও একই আশঙ্কার কথা জানিয়ে বলেন, দীর্ঘ আলোচনার মধ্য দিয়ে কিন্তু আমরা অনেকগুলো বিষয় ঐক্যমত্য পোষণ করেছি। কিন্তু যদি এখানে ভোট কম পড়ে বা ‘না’ ভোট বেশি পড়ে, তাহলে আমাদের সংস্কারের আকাঙ্ক্ষায় যতটুকুই ঐকমত্য এসেছে, অর্থাৎ যে সংস্কারটুকু সবাই চাইছে, সেটুকুও ভেস্তে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।
তবে সবার অবস্থান এমন ‘দ্বিধান্বিত’ নয়। রোববার দুপুরে সংবাদ সম্মেলন করে জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেল মিয়া গোলাম পরওয়ার বলেছেন, তারা যে আট দল পাঁচ দফা দাবিতে আন্দোলন করে যাচ্ছেন তারা সবাই গণভোটে জুলাই সনদকে ‘হ্যাঁ’ বলবেন এবং জনগণকেও ‘হ্যাঁ’ ভোট দিতে উদ্বুদ্ধ করবেন।
আগে একাধিক ব্যালট বা একাধিক প্রশ্নের প্রস্তাব থাকলেও ইউনাইটেড পিপলস বাংলাদেশও (ইউপি বাংলাদেশ) গণভোটের বর্তমান অবস্থার প্রতি সমর্থন জানাচ্ছে। সংগঠনটির সদস্য সচিব মোহাম্মদ হিযবুল্লাহ ফেসবুকে প্রধান উপদেষ্টার ভাষণকে স্বাগতও জানিয়েছেন। ‘জেদাজেদি ও রাজনৈতিক ইগো’ পরিহার করে সব রাজনৈতিক দলকে একসঙ্গে হাঁটার আহ্বানও জানিয়েছেন তিনি।

উক্ত চুক্তি স্বাক্ষরের ফলে বাংলাদেশ সশস্ত্র বাহিনীর সদস্যগণ কাতার সশস্ত্র বাহিনীতে প্রেষণে নিয়োজিত হওয়ার সুযোগ পাবে। এর ফলে প্রাথমিকভাবে আনুমানিক ৮০০ জনকে কাতারে প্রেরণ করা হবে এবং ভবিষ্যতে এ জনবলের সংখ্যা বাড়ানোর সম্ভাবনা রয়েছে। প্রেরণকৃত জনবল প্রাথমিকভাবে ০৩ বছরের জন্য নিয়োগ প্রাপ্ত হবে এবং তাদের
৫ ঘণ্টা আগে
পিবিআইয়ের পুলিশ সুপার মোহাম্মদ সারওয়ার আলমকে গাইবান্ধার পুলিশ সুপার হিসেবে পদায়ন করা হয়েছে। দিনাজপুরের পুলিশ সুপার মো. মারুফাত হুসাইনকে বদলি করে ফরিদপুরের পুলিশ সুপার করা হয়েছে। ডিএমপির উপপুলিশ কমিশনার মো. মিজানুর রহমানকে দিনাজপুরের পুলিশ সুপার হিসেবে পদায়ন করা হয়েছে। হবিগঞ্জের পুলিশ সুপার এ,
৬ ঘণ্টা আগে
রোববার সকালে রাজধানীর মিরপুরের আলোক হাসপাতালের আইসিউতে তিনি মারা যান। আন্দোলনের একজন মুখপাত্র এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন। মারা যাওয়া শিক্ষিকা চাঁদপুরের মতলব উত্তরের ঠাকুরচরের বাসিন্দা। রাজধানীর ইডেন মহিলা কলেজ থেকে গ্র্যাজুয়েশন সম্পন্ন করেন তিনি।
৬ ঘণ্টা আগে
গাজী তামিম বলেন, ‘ট্রাইবুনালে দাবি প্রমাণ করতে সক্ষম হয়েছে প্রসিকিউশন এবং সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদণ্ড প্রার্থনা করেছে। শুধু তাই নয় আসামিদের সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করে ভিকটিম, শহীদ, আহত পরিবার আছে, তাদের বরাবর হস্তান্তরের জন্য প্রার্থনা করেছি।
৬ ঘণ্টা আগে