
বিবিসি বাংলা

বাংলাদেশে ভারতবিরোধী ও ভারতে বাংলাদেশবিরোধী বিভিন্ন গোষ্ঠীর কর্মকাণ্ডের মধ্যে ময়মনসিংহের পোশাক শ্রমিক দিপু চন্দ্র দাসকে পিটিয়ে হত্যা ও তার মরদেহে আগুন দেওয়ার ঘটনা ঢাকা ও দিল্লির মধ্যে চলমান টানাপোড়েনকে আরও গভীর সংকটের দিকে ঠেলে দিয়েছে। এ ঘটনা ঘিরে ভারতে হিন্দুত্ববাদী গোষ্ঠীগুলো বিক্ষোভ শুরু করেছে।
বাংলাদেশে সংখ্যালঘু নির্যাতনের অভিযোগ তুলে দিল্লি, কলকাতা থেকে শুরু করে আগরতলা পর্যন্ত বিক্ষোভ হয়েছে বাংলাদেশের দূতাবাস ও উপদূতাবাসগুলোর সামনে। চলমান বাস্তবতায় একসময়ের ঘনিষ্ঠ ও সময়ের পরীক্ষায় উত্তীর্ণ দুই প্রতিবেশী দেশের সম্পর্ক মেরামত-অযোগ্য হয়ে পড়ছে কি না, তা নিয়েও প্রশ্ন উঠছে।
ময়মনসিংহে নিহত ২৭ বছর বয়সী দিপু চন্দ্র দাস হিন্দু ধর্মাবলম্বী ছিলেন। ধর্ম অবমাননার অভিযোগ তুলে গত সপ্তাহে ময়মনসিংহে একদল লোক তাকে পিটিয়ে হত্যা করে। ঢাকায় আলোচিত ছাত্রনেতা শরিফ ওসমান হাদির হত্যাকাণ্ড ঘিরে সহিংস বিক্ষোভ শুরুর কয়েক ঘণ্টা আগে ঘটে এ ঘটনা।
ওসমান হাদির সমর্থকদের অভিযোগ, হাদি হত্যার প্রধান সন্দেহভাজন ব্যক্তির সঙ্গে ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দল আওয়ামী লীগের যোগসূত্র আছে এবং তিনি ভারতে পালিয়ে গেছেন। তবে বাংলাদেশের পুলিশ জানিয়েছে, সন্দেহভাজন ব্যক্তির দেশ ছাড়ার বিষয়ে কোনো নিশ্চিত কোনো তথ্য তাদের কাছে নেই।
সাম্প্রতিক সময়ে দক্ষিণ এশিয়ার প্রতিবেশী দেশ দুটি দিল্লিসহ কয়েকটি শহরে ভিসা সেবা স্থগিত করেছে এবং একে অন্যের বিরুদ্ধে কূটনৈতিক মিশনগুলোর পর্যাপ্ত নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে ব্যর্থ হওয়ার অভিযোগ তুলেছে। নিরাপত্তা সংক্রান্ত উদ্বেগ জানাতে দুই দেশই হাইকমিশনারদের তলব করেছে।
বাংলাদেশে নিযুক্ত ভারতের সাবেক হাইকমিশনার রিভা গাঙ্গুলি দাসের মতে, বাংলাদেশের ‘অস্থির পরিস্থিতি’ ভবিষ্যতে কোন দিকে মোড় নেবে তা অনুমান করা কঠিন হয়ে পড়েছে। বিবিসি বাংলাকে বলেন, ‘আমি আন্তরিকভাবে আশা করি, কোনো পক্ষেই উত্তেজনা আর না বাড়ুক’।
বাংলাদেশে ভারতবিরোধী মনোভাব নতুন না। বাংলাদেশিদের একটি অংশ তাদের দেশে ভারতের কর্তৃত্ববাদী প্রভাব রয়েছে দাবি করে সবসময়ই বিরক্তি প্রকাশ করে আসছেন। বিশেষ করে গত বছর গণঅভ্যুত্থানে ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার আগে শেখ হাসিনার ১৫ বছরের শাসনামলে তা আরও বেড়েছিল বলে মনে করেন তারা।
শেখ হাসিনা ভারতে আশ্রয় নেওয়ার পর থেকে এই ক্ষোভ আরও বেড়েছে। ঢাকা থেকে একাধিকবার অনুরোধ জানানোর পরও এখন পর্যন্ত তাকে ফেরত পাঠাতে সম্মত হয়নি দিল্লি। হাদির হত্যাকাণ্ডের পর কয়েকজন তরুণ নেতার ভারতবিরোধী উসকানিমূলক বক্তব্য নিয়ে খবরও প্রকাশিত হয়েছে।
সম্প্রতি ঢাকায় বিক্ষোভকারীরা ভারতীয় হাইকমিশনের দিকে মিছিল নিয়ে গেলে বাংলাদেশের নিরাপত্তা বাহিনীকে তাদের ঠেকাতে হয়েছে। গত সপ্তাহে চট্টগ্রামে ভারতের সহকারী হাইকমিশন ভবনে একদল লোক পাথর নিক্ষেপ করলে দিল্লিতে তীব্র প্রতিক্রিয়া দেখা দেয়। এ ঘটনায় জড়িত সন্দেহে পুলিশ ১২ জনকে আটক করলেও তাদের বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগ না এনে ছেড়ে দেওয়া হয়।
এর প্রতিক্রিয়ায় ভারতে পালটা সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। দিল্লিতে বাংলাদেশের কূটনৈতিক মিশনের বাইরে একটি হিন্দু গোষ্ঠীর বিক্ষোভে তীব্র আপত্তি জানিয়ে একে ‘অযৌক্তিক’ বলে অভিহিত করে বাংলাদেশ।
বাংলাদেশের সাবেক জ্যেষ্ঠ কূটনীতিক হুমায়ুন কবিরের মতে, প্রতিষ্ঠিত কূটনৈতিক রীতিনীতি অনুযায়ী উভয় দেশেরই কূটনৈতিক মিশনের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা উচিত। তিনি বলেন, ‘দুই পক্ষের মধ্যে এ ধরনের সন্দেহ ও অবিশ্বাস আমি আগে কখনো দেখিনি।’
এসব ঘটনাপ্রবাহের মধ্যে বাংলাদেশে পোশাক কারখানার কর্মী দিপু চন্দ্র দাসকে নির্মমভাবে পিটিয়ে হত্যার ঘটনা ভারতে ক্ষোভ আরও বাড়িয়ে দিয়েছে। এ হত্যাকাণ্ডের ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়ে, যা সীমান্তের দুই পাশেই তীব্র ক্ষোভের জন্ম দেয়।
নোবেলজয়ী অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকার জানিয়েছে, এ ধরনের সহিংসতার কোনো স্থান নেই। হত্যাকাণ্ডে জড়িত কাউকেই ছাড় দেওয়া হবে না— এমন আশ্বাসও দেওয়া হয়েছে। দিপু চন্দ্র দাস হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে ১২ জনকে গ্রেপ্তারের তথ্য জানিয়েছে বাংলাদেশি পুলিশ।
বিশ্লেষকদের মতে, এ হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় বাংলাদেশে আবারও সংখ্যালঘু ও অধিকার কর্মীদের নিরাপত্তা নিয়ে প্রশ্ন উঠছে। শেখ হাসিনার পতনের পর ধর্মীয় মৌলবাদীরা আরও আত্মবিশ্বাসী ও অসহিষ্ণু হয়ে উঠেছে বলেও মনে করছেন তারা।
কট্টর ইসলামপন্থিরা শত শত সুফিদের মাজার ভাঙচুর করেছে, হিন্দুদের ওপর হামলা চালিয়েছে, কিছু এলাকায় নারীদের ফুটবল খেলতে বাধা দিয়েছে এবং সংগীত ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানও কমিয়ে দিয়েছে। গত এক বছরে বাংলাদেশে বাড়তে থাকা গণপিটুনির ঘটনা নিয়ে মানবাধিকার সংগঠনগুলোও গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছে।
বাংলাদেশের রাজনৈতিক বিশ্লেষক আসিফ বিন আলী বলেন, “সমাজের কট্টরপন্থি অংশ এখন নিজেদের মূলধারা মনে করছে, আর তারা দেশে বহুত্ববাদ বা মতের বৈচিত্র্য দেখতে চায় না। এই চরমপন্থি গোষ্ঠীগুলো মানুষ ও প্রতিষ্ঠানকে ‘ভারতপন্থি’ আখ্যা দিয়ে অমানবিক করে তুলছে। এতে মাঠপর্যায়ে অন্যদের জন্য তাদের ওপর হামলা চালানোর এক ধরনের সবুজ সংকেত তৈরি হচ্ছে।”
বাংলাদেশের অনেকের ধারণা, গত সপ্তাহে দুটি পত্রিকা অফিস ডেইলি স্টার ও প্রথম আলো এবং সাংস্কৃতিক সংগঠন ছায়ানটকে ‘ভারতপন্থি’ আখ্যা দিয়ে ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের ঘটনায় চরম ইসলামপন্থিরাই জড়িত ছিল।
সাম্প্রতিক সহিংসতা ঠেকাতে ব্যর্থ হওয়ায় অন্তর্বর্তী সরকারের সমালোচনা করেছেন সামাজিক অধিকার কর্মীরা। বিক্ষোভ শুরুর আগেও রাজনৈতিক অস্থিরতার মধ্যে আইনশৃঙ্খলা বজায় রাখতে না পারায় সমালোচনার মুখে পড়ে এই সরকার।
অশোক সোয়াইনসহ একাধিক বিশ্লেষকের মতে, দুই দেশের ডানপন্থি নেতারাই নিজেদের স্বার্থে উসকানিমূলক বক্তব্য দিচ্ছেন, যা উত্তেজনা ও জনরোষ আরও বাড়িয়ে দিচ্ছে।
সুইডেনের উপসালা বিশ্ববিদ্যালয়ের শান্তি ও সংঘাত গবেষণার অধ্যাপক অশোক সোয়াইন বলেন, ‘ভারতের গণমাধ্যমের একটি বড় অংশও বাংলাদেশে ঘটে যাওয়া ঘটনাগুলোকে অতিরঞ্জিত করে উপস্থাপন করছে এবং দেশটি সাম্প্রদায়িক বিশৃঙ্খলার দিকে ধাবিত হচ্ছে বলে দেখাচ্ছে। মানুষের বোঝা উচিত, বিশেষ করে ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের নিরাপত্তার জন্য বাংলাদেশের স্থিতিশীলতা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
ঢাকায় অন্তর্বর্তী প্রশাসন নিয়ন্ত্রণ ও বৈধতার ঘাটতি নিয়ে সমালোচনার মুখে পড়ায় একটি নির্বাচিত সরকারই যে বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ ও পররাষ্ট্র চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় বেশি সক্ষম হবে— এ বিষয়ে ব্যাপক ঐকমত্য রয়েছে। বাংলাদেশে ১২ ফেব্রুয়ারি নির্বাচন হওয়ার কথা রয়েছে। তবে ততদিন পর্যন্ত আরও সহিংসতা এড়ানোই মুহাম্মদ ইউনূসের জন্য সবচেয়ে কঠিন চ্যালেঞ্জ।
শেখ হাসিনার দল আওয়ামী লীগকে নির্বাচনে অংশ নিতে না দেওয়ায় বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলই (বিএনপি) এ নির্বাচনে বিজয়ী হবে বলে ব্যাপকভাবে ধারণা করা হচ্ছে। তবে জামায়াতে ইসলামীর মতো ইসলামপন্থি রাজনৈতিক দলগুলো বিএনপির জন্য চ্যালেঞ্জ হয়ে উঠতে পারে।
ভারতবিরোধী মনোভাবকে কাজে লাগিয়ে কট্টর ধর্মীয় দলগুলো পরিস্থিতি উসকে দিতে পারে— এমন আশঙ্কা থেকে সামনের দিনগুলোতে আরও সহিংসতা ঘটার উদ্বেগ রয়েছে।
আসিফ বিন আলী সতর্ক করে বলেন, “এই ভারতবিরোধী রাজনীতির সবচেয়ে বড় ভুক্তভোগী ভারত নয়, বরং বাংলাদেশের নাগরিকরাই— যেমন ধর্মনিরপেক্ষ চিন্তাধারার মানুষ, মধ্যপন্থি ও সংখ্যালঘুরা। বর্তমান বয়ান এমন অবস্থায় পৌঁছেছে যে, যারা বা যে প্রতিষ্ঠান মৌলবাদীদের সমালোচনা করে, তাদের ‘ভারতপন্থি’ আখ্যা দিয়ে সহজেই তাদের মর্যাদা ক্ষুণ্ন করে ফেলা যায় এবং তাদের ওপর হামলাও যৌক্তিক বলে তুলে ধরা যায়।”
ভারতের নীতিনির্ধারকেরা বাংলাদেশে পরিবর্তিত বাস্তবতা সম্পর্কে সচেতন। ভারতের পার্লামেন্টের একটি প্যানেল বলেছে, বাংলাদেশের সাম্প্রতিক অগ্রগতি বা পরিস্থিতি ১৯৭১ সালের স্বাধীনতা যুদ্ধের পর দিল্লির জন্য ‘সবচেয়ে বড় কৌশলগত চ্যালেঞ্জ’ তৈরি করেছে।
হুমায়ুন কবিরের মতো বাংলাদেশের সাবেক কূটনীতিকদের মতে, ভারতকে মাঠের বাস্তবতা মেনে নিয়ে আস্থা পুনর্গঠনের জন্য বাংলাদেশের সঙ্গে যোগাযোগ বাড়াতে হবে। তিনি বলেন, ‘আমরা প্রতিবেশী এবং একে অন্যের ওপর নির্ভরশীল।’
এরই মধ্যে বাংলাদেশের নির্বাচিত সরকারের সঙ্গে কাজ করার ইঙ্গিত দিয়েছে দিল্লি, যা কূটনৈতিক সম্পর্ক পুনর্গঠনের পথ তৈরি করতে পারে। ততদিন পর্যন্ত রাজপথের ক্ষোভ যেন দুই দেশের দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ককে আরও চাপে না ফেলে সে বিষয়ে সতর্ক করছেন দুই দেশের বিশেষজ্ঞরা।

বাংলাদেশে ভারতবিরোধী ও ভারতে বাংলাদেশবিরোধী বিভিন্ন গোষ্ঠীর কর্মকাণ্ডের মধ্যে ময়মনসিংহের পোশাক শ্রমিক দিপু চন্দ্র দাসকে পিটিয়ে হত্যা ও তার মরদেহে আগুন দেওয়ার ঘটনা ঢাকা ও দিল্লির মধ্যে চলমান টানাপোড়েনকে আরও গভীর সংকটের দিকে ঠেলে দিয়েছে। এ ঘটনা ঘিরে ভারতে হিন্দুত্ববাদী গোষ্ঠীগুলো বিক্ষোভ শুরু করেছে।
বাংলাদেশে সংখ্যালঘু নির্যাতনের অভিযোগ তুলে দিল্লি, কলকাতা থেকে শুরু করে আগরতলা পর্যন্ত বিক্ষোভ হয়েছে বাংলাদেশের দূতাবাস ও উপদূতাবাসগুলোর সামনে। চলমান বাস্তবতায় একসময়ের ঘনিষ্ঠ ও সময়ের পরীক্ষায় উত্তীর্ণ দুই প্রতিবেশী দেশের সম্পর্ক মেরামত-অযোগ্য হয়ে পড়ছে কি না, তা নিয়েও প্রশ্ন উঠছে।
ময়মনসিংহে নিহত ২৭ বছর বয়সী দিপু চন্দ্র দাস হিন্দু ধর্মাবলম্বী ছিলেন। ধর্ম অবমাননার অভিযোগ তুলে গত সপ্তাহে ময়মনসিংহে একদল লোক তাকে পিটিয়ে হত্যা করে। ঢাকায় আলোচিত ছাত্রনেতা শরিফ ওসমান হাদির হত্যাকাণ্ড ঘিরে সহিংস বিক্ষোভ শুরুর কয়েক ঘণ্টা আগে ঘটে এ ঘটনা।
ওসমান হাদির সমর্থকদের অভিযোগ, হাদি হত্যার প্রধান সন্দেহভাজন ব্যক্তির সঙ্গে ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দল আওয়ামী লীগের যোগসূত্র আছে এবং তিনি ভারতে পালিয়ে গেছেন। তবে বাংলাদেশের পুলিশ জানিয়েছে, সন্দেহভাজন ব্যক্তির দেশ ছাড়ার বিষয়ে কোনো নিশ্চিত কোনো তথ্য তাদের কাছে নেই।
সাম্প্রতিক সময়ে দক্ষিণ এশিয়ার প্রতিবেশী দেশ দুটি দিল্লিসহ কয়েকটি শহরে ভিসা সেবা স্থগিত করেছে এবং একে অন্যের বিরুদ্ধে কূটনৈতিক মিশনগুলোর পর্যাপ্ত নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে ব্যর্থ হওয়ার অভিযোগ তুলেছে। নিরাপত্তা সংক্রান্ত উদ্বেগ জানাতে দুই দেশই হাইকমিশনারদের তলব করেছে।
বাংলাদেশে নিযুক্ত ভারতের সাবেক হাইকমিশনার রিভা গাঙ্গুলি দাসের মতে, বাংলাদেশের ‘অস্থির পরিস্থিতি’ ভবিষ্যতে কোন দিকে মোড় নেবে তা অনুমান করা কঠিন হয়ে পড়েছে। বিবিসি বাংলাকে বলেন, ‘আমি আন্তরিকভাবে আশা করি, কোনো পক্ষেই উত্তেজনা আর না বাড়ুক’।
বাংলাদেশে ভারতবিরোধী মনোভাব নতুন না। বাংলাদেশিদের একটি অংশ তাদের দেশে ভারতের কর্তৃত্ববাদী প্রভাব রয়েছে দাবি করে সবসময়ই বিরক্তি প্রকাশ করে আসছেন। বিশেষ করে গত বছর গণঅভ্যুত্থানে ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার আগে শেখ হাসিনার ১৫ বছরের শাসনামলে তা আরও বেড়েছিল বলে মনে করেন তারা।
শেখ হাসিনা ভারতে আশ্রয় নেওয়ার পর থেকে এই ক্ষোভ আরও বেড়েছে। ঢাকা থেকে একাধিকবার অনুরোধ জানানোর পরও এখন পর্যন্ত তাকে ফেরত পাঠাতে সম্মত হয়নি দিল্লি। হাদির হত্যাকাণ্ডের পর কয়েকজন তরুণ নেতার ভারতবিরোধী উসকানিমূলক বক্তব্য নিয়ে খবরও প্রকাশিত হয়েছে।
সম্প্রতি ঢাকায় বিক্ষোভকারীরা ভারতীয় হাইকমিশনের দিকে মিছিল নিয়ে গেলে বাংলাদেশের নিরাপত্তা বাহিনীকে তাদের ঠেকাতে হয়েছে। গত সপ্তাহে চট্টগ্রামে ভারতের সহকারী হাইকমিশন ভবনে একদল লোক পাথর নিক্ষেপ করলে দিল্লিতে তীব্র প্রতিক্রিয়া দেখা দেয়। এ ঘটনায় জড়িত সন্দেহে পুলিশ ১২ জনকে আটক করলেও তাদের বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগ না এনে ছেড়ে দেওয়া হয়।
এর প্রতিক্রিয়ায় ভারতে পালটা সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। দিল্লিতে বাংলাদেশের কূটনৈতিক মিশনের বাইরে একটি হিন্দু গোষ্ঠীর বিক্ষোভে তীব্র আপত্তি জানিয়ে একে ‘অযৌক্তিক’ বলে অভিহিত করে বাংলাদেশ।
বাংলাদেশের সাবেক জ্যেষ্ঠ কূটনীতিক হুমায়ুন কবিরের মতে, প্রতিষ্ঠিত কূটনৈতিক রীতিনীতি অনুযায়ী উভয় দেশেরই কূটনৈতিক মিশনের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা উচিত। তিনি বলেন, ‘দুই পক্ষের মধ্যে এ ধরনের সন্দেহ ও অবিশ্বাস আমি আগে কখনো দেখিনি।’
এসব ঘটনাপ্রবাহের মধ্যে বাংলাদেশে পোশাক কারখানার কর্মী দিপু চন্দ্র দাসকে নির্মমভাবে পিটিয়ে হত্যার ঘটনা ভারতে ক্ষোভ আরও বাড়িয়ে দিয়েছে। এ হত্যাকাণ্ডের ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়ে, যা সীমান্তের দুই পাশেই তীব্র ক্ষোভের জন্ম দেয়।
নোবেলজয়ী অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকার জানিয়েছে, এ ধরনের সহিংসতার কোনো স্থান নেই। হত্যাকাণ্ডে জড়িত কাউকেই ছাড় দেওয়া হবে না— এমন আশ্বাসও দেওয়া হয়েছে। দিপু চন্দ্র দাস হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে ১২ জনকে গ্রেপ্তারের তথ্য জানিয়েছে বাংলাদেশি পুলিশ।
বিশ্লেষকদের মতে, এ হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় বাংলাদেশে আবারও সংখ্যালঘু ও অধিকার কর্মীদের নিরাপত্তা নিয়ে প্রশ্ন উঠছে। শেখ হাসিনার পতনের পর ধর্মীয় মৌলবাদীরা আরও আত্মবিশ্বাসী ও অসহিষ্ণু হয়ে উঠেছে বলেও মনে করছেন তারা।
কট্টর ইসলামপন্থিরা শত শত সুফিদের মাজার ভাঙচুর করেছে, হিন্দুদের ওপর হামলা চালিয়েছে, কিছু এলাকায় নারীদের ফুটবল খেলতে বাধা দিয়েছে এবং সংগীত ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানও কমিয়ে দিয়েছে। গত এক বছরে বাংলাদেশে বাড়তে থাকা গণপিটুনির ঘটনা নিয়ে মানবাধিকার সংগঠনগুলোও গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছে।
বাংলাদেশের রাজনৈতিক বিশ্লেষক আসিফ বিন আলী বলেন, “সমাজের কট্টরপন্থি অংশ এখন নিজেদের মূলধারা মনে করছে, আর তারা দেশে বহুত্ববাদ বা মতের বৈচিত্র্য দেখতে চায় না। এই চরমপন্থি গোষ্ঠীগুলো মানুষ ও প্রতিষ্ঠানকে ‘ভারতপন্থি’ আখ্যা দিয়ে অমানবিক করে তুলছে। এতে মাঠপর্যায়ে অন্যদের জন্য তাদের ওপর হামলা চালানোর এক ধরনের সবুজ সংকেত তৈরি হচ্ছে।”
বাংলাদেশের অনেকের ধারণা, গত সপ্তাহে দুটি পত্রিকা অফিস ডেইলি স্টার ও প্রথম আলো এবং সাংস্কৃতিক সংগঠন ছায়ানটকে ‘ভারতপন্থি’ আখ্যা দিয়ে ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের ঘটনায় চরম ইসলামপন্থিরাই জড়িত ছিল।
সাম্প্রতিক সহিংসতা ঠেকাতে ব্যর্থ হওয়ায় অন্তর্বর্তী সরকারের সমালোচনা করেছেন সামাজিক অধিকার কর্মীরা। বিক্ষোভ শুরুর আগেও রাজনৈতিক অস্থিরতার মধ্যে আইনশৃঙ্খলা বজায় রাখতে না পারায় সমালোচনার মুখে পড়ে এই সরকার।
অশোক সোয়াইনসহ একাধিক বিশ্লেষকের মতে, দুই দেশের ডানপন্থি নেতারাই নিজেদের স্বার্থে উসকানিমূলক বক্তব্য দিচ্ছেন, যা উত্তেজনা ও জনরোষ আরও বাড়িয়ে দিচ্ছে।
সুইডেনের উপসালা বিশ্ববিদ্যালয়ের শান্তি ও সংঘাত গবেষণার অধ্যাপক অশোক সোয়াইন বলেন, ‘ভারতের গণমাধ্যমের একটি বড় অংশও বাংলাদেশে ঘটে যাওয়া ঘটনাগুলোকে অতিরঞ্জিত করে উপস্থাপন করছে এবং দেশটি সাম্প্রদায়িক বিশৃঙ্খলার দিকে ধাবিত হচ্ছে বলে দেখাচ্ছে। মানুষের বোঝা উচিত, বিশেষ করে ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের নিরাপত্তার জন্য বাংলাদেশের স্থিতিশীলতা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
ঢাকায় অন্তর্বর্তী প্রশাসন নিয়ন্ত্রণ ও বৈধতার ঘাটতি নিয়ে সমালোচনার মুখে পড়ায় একটি নির্বাচিত সরকারই যে বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ ও পররাষ্ট্র চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় বেশি সক্ষম হবে— এ বিষয়ে ব্যাপক ঐকমত্য রয়েছে। বাংলাদেশে ১২ ফেব্রুয়ারি নির্বাচন হওয়ার কথা রয়েছে। তবে ততদিন পর্যন্ত আরও সহিংসতা এড়ানোই মুহাম্মদ ইউনূসের জন্য সবচেয়ে কঠিন চ্যালেঞ্জ।
শেখ হাসিনার দল আওয়ামী লীগকে নির্বাচনে অংশ নিতে না দেওয়ায় বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলই (বিএনপি) এ নির্বাচনে বিজয়ী হবে বলে ব্যাপকভাবে ধারণা করা হচ্ছে। তবে জামায়াতে ইসলামীর মতো ইসলামপন্থি রাজনৈতিক দলগুলো বিএনপির জন্য চ্যালেঞ্জ হয়ে উঠতে পারে।
ভারতবিরোধী মনোভাবকে কাজে লাগিয়ে কট্টর ধর্মীয় দলগুলো পরিস্থিতি উসকে দিতে পারে— এমন আশঙ্কা থেকে সামনের দিনগুলোতে আরও সহিংসতা ঘটার উদ্বেগ রয়েছে।
আসিফ বিন আলী সতর্ক করে বলেন, “এই ভারতবিরোধী রাজনীতির সবচেয়ে বড় ভুক্তভোগী ভারত নয়, বরং বাংলাদেশের নাগরিকরাই— যেমন ধর্মনিরপেক্ষ চিন্তাধারার মানুষ, মধ্যপন্থি ও সংখ্যালঘুরা। বর্তমান বয়ান এমন অবস্থায় পৌঁছেছে যে, যারা বা যে প্রতিষ্ঠান মৌলবাদীদের সমালোচনা করে, তাদের ‘ভারতপন্থি’ আখ্যা দিয়ে সহজেই তাদের মর্যাদা ক্ষুণ্ন করে ফেলা যায় এবং তাদের ওপর হামলাও যৌক্তিক বলে তুলে ধরা যায়।”
ভারতের নীতিনির্ধারকেরা বাংলাদেশে পরিবর্তিত বাস্তবতা সম্পর্কে সচেতন। ভারতের পার্লামেন্টের একটি প্যানেল বলেছে, বাংলাদেশের সাম্প্রতিক অগ্রগতি বা পরিস্থিতি ১৯৭১ সালের স্বাধীনতা যুদ্ধের পর দিল্লির জন্য ‘সবচেয়ে বড় কৌশলগত চ্যালেঞ্জ’ তৈরি করেছে।
হুমায়ুন কবিরের মতো বাংলাদেশের সাবেক কূটনীতিকদের মতে, ভারতকে মাঠের বাস্তবতা মেনে নিয়ে আস্থা পুনর্গঠনের জন্য বাংলাদেশের সঙ্গে যোগাযোগ বাড়াতে হবে। তিনি বলেন, ‘আমরা প্রতিবেশী এবং একে অন্যের ওপর নির্ভরশীল।’
এরই মধ্যে বাংলাদেশের নির্বাচিত সরকারের সঙ্গে কাজ করার ইঙ্গিত দিয়েছে দিল্লি, যা কূটনৈতিক সম্পর্ক পুনর্গঠনের পথ তৈরি করতে পারে। ততদিন পর্যন্ত রাজপথের ক্ষোভ যেন দুই দেশের দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ককে আরও চাপে না ফেলে সে বিষয়ে সতর্ক করছেন দুই দেশের বিশেষজ্ঞরা।

আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচন ও গণভোটে পোস্টাল ব্যালটের মাধ্যমে ভোট দিতে এখন পর্যন্ত ৭ লাখ ১৭ হাজার ২১৭ জন প্রবাসী নিবন্ধন করেছেন। বৃহস্পতিবার দুপুর ২টা পর্যন্ত নির্বাচন কমিশনের (ইসি) ওয়েবসাইটে প্রকাশিত পোস্টাল ভোটিং আপডেট থেকে এ তথ্য জানা গেছে।
১ দিন আগে
বৃহস্পতিবার (২৫ ডিসেম্বর) দুপুর সোয়া ১টার দিকে তাদের বহনকারী গাড়িটি গুলশানের ১৯৬ নম্বর বাসায় পৌঁছায়। এ সময় পুলিশ ও সিএসএফ সদস্যরা তাদের প্রটোকল দিয়ে নিয়ে আসেন।
১ দিন আগে
বিমান থেকে নেমে তারেক রহমান ভিআইপি লাউঞ্জে প্রবেশ করলে এক আবেগঘন পরিবেশের সৃষ্টি হয়। সেখানে তাকে গোলাপ ফুলের মালা পরিয়ে অভ্যর্থনা জানান তার শাশুড়ি সৈয়দা ইকবাল মান্দ বানু। দীর্ঘ সময় পর পরিবারের সদস্যদের কাছে পেয়ে উপস্থিত সকলের চোখে আনন্দের অশ্রু দেখা যায়। এ সময় পাশে ছিলেন ডা. জুবাইদা রহমান ও জাইমা রহ
১ দিন আগে
পুলিশ জানায়, সুরভীর বিরুদ্ধে কালিয়াকৈর থানায় নাইমুর রহমান দুর্জয় নামে এক যুবকের দায়ের করা মামলায় গ্রেফতারি পরোয়ানা ছিল। মামলায় চাঁদাবাজি, অপহরণ করে অর্থ আদায় ও ব্ল্যাকমেইলিংয়ের মতো অভিযোগ আনা হয়েছে। এছাড়া তিনি সেনাবাহিনী প্রধানকে নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে নিয়মিত কুরুচিপূর্ণ মন্তব্য করতেন বলেও দাব
১ দিন আগে