আপ্যায়ন ব্যয় নিয়ে মিথ্যাচার, খরচ ৪৬ লাখ টাকার কম: ঐকমত্য কমিশন

প্রতিবেদক, রাজনীতি ডটকম
আপডেট : ০৭ নভেম্বর ২০২৫, ০০: ২৫
জাতীয় ঐকমত্য কমিশন

জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের আপ্যায়ন ব্যয় নিয়ে ছড়িয়ে পড়া তথ্যকে সর্বৈব মিথ্যাচার ও পরিকল্পিত প্রোপাগান্ডা হিসেবে অভিহিত করেছে কমিশন। এক প্রতিবাদলিপিতে কমিশন জানিয়েছে, প্রকৃতপক্ষে এ খাতে ব্যয় হয়েছে ৪৬ লাখ টাকারও কিছুটা কম।

বৃহস্পতিবার (৬ নভেম্বর) রাতে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের এ প্রতিবাদলিপি গণমাধ্যমে পাঠিয়েছে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং।

প্রতিবাদলিপিতে বলা হয়েছে, অতি সম্প্রতি একটি মহল কর্তৃক সংগঠিত অপপ্রচারে দাবি করা হচ্ছে, জাতীয় ঐকমত্য কমিশন আপ্যায়ন বাবদ ৮৩ কোটি টাকা ব্যয় করেছে। এ ধরনের বক্তব্য সর্বৈব মিথ্যাচার এবং পরিকল্পিত প্রপাগান্ডা। স্পষ্টতই এটি একটি উদ্দেশ্যমূলক প্রচেষ্টা। অপপ্রচারকারীরা কমিশনের কোনো ভাষ্য সংগ্রহ করেননি এবং সংশ্লিষ্ট তথ্যের যথার্থতা যাচাইয়ে কর্তৃপক্ষের সঙ্গেও যোগাযোগ করেননি।

কমিশন জানিয়েছে, গত ১৫ ফেব্রুয়ারি কার্যক্রম শুরু করার পর ২০২৪-২৫ ও ২০২৫-২৬ অর্থবছরে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সর্বমোট বাজেট ছিল সাত কোটি ২৩ লাখ ৩১ হাজার ২৬ টাকা। এর বিপরীতে কমিশননের মেয়াদ ৩১ অক্টোবর পর্যন্ত কমিশনের ব্যয় হয়েছে এক কোটি ৭১ লাখ ৩১ হাজার ১২৬ টাকা, যা মোট বরাদ্দের ২৩ দশমিক ৪৬ শতাংশ। কমিশনের মোট বরাদ্দের মধ্যে আপ্যায়ন খাতে বরাদ্দ ছিল ৬৩ লাখ টাকা, যার মধ্যে ব্যয় হয়েছে ৪৫ লাখ ৭৭ হাজার ৬৮৫ টাকা।

কমিশন বলছে, আপ্যায়ন বরাদ্দের সিংহ ভাগ ব্যয় হয়েছে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনার সময় এবং কমিশনের অন্যান্য বৈঠকে। রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে তিন ধাপের আলোচনায় প্রতিদিন কমিশনের উদ্যোগে রাজনৈতিক দলের প্রতিনিধি, তাদের সহযোগী, সাংবাদিক ও গণমাধ্যমকর্মী, কমিশনের কর্মকর্তা-কর্মচারী এবং নিরাপত্তা কর্মীদের আপ্যায়নের ব্যবস্থা করা হয়।

কমিশন কোন পর্যায়ে কত টাকা খরচ করেছে, সে হিসাবও তুলে ধরা হয়েছে প্রতিবাদলিপিতে। এতে বলা হয়েছে, প্রথম পর্যায়ে ২০ মার্চ থেকে ১৯ মে পর্যন্ত কমিশনের সঙ্গে রাজনৈতিক দলের ৪৪টি বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। এ সময়ে আপ্যায়ন খাতে ব্যয় হয় চার লাখ ৯১ হাজার টাকা।

দ্বিতীয় পর্যায়ে ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে ৩০টি রাজনৈতিক দলের প্রতিনিধিদের সঙ্গে ২৩টি সভা অনুষ্ঠিত হয়। এ সময়ে ব্যয় হয় ২৮ লাখ ৮৩ হাজার ১০০ টাকা। এই বৈঠকগুলো সকাল থেকে রাত অবধি চলায় অংশগ্রহণকারীদের জন্য নাশতা, মধ্যাহ্ন ও নৈশভোজের ব্যবস্থা করতে হয় এবং গড়ে প্রতিদিন এক লাখ ২০ হাজার টাকারও কম খরচ হয় বলে জানিয়েছে কমিশন।

ঐকমত্য কমিশনের তথ্য অনুযায়ী, তৃতীয় পর্যায়ে সাতটি বৈঠকে ৩০টি দলের প্রতিনিধিরা অংশ নেন। এতে খরচ হয় সাত লাখ ৮ হাজার ৬০০ টাকা। এর বাইরে কমিশনের নিজস্ব সভা হয়েছে ৫০টি, যার অনেকগুলো ছিল ছুটির দিনে এবং দিনব্যাপী। এসব সভায় খরচ হয়েছে এক লাখ ৫ হাজার ৫২০ টাকা।

এ ছাড়া রাজনৈতিক দলের সঙ্গে অনানুষ্ঠানিক বৈঠক, নাগরিক সমাজ ও পেশাজীবীদের সঙ্গে বৈঠক এবং তিনটি সংবাদ সম্মেলনসহ মোট ১৩টি অনুষ্ঠানে দুই লাখ ৩৪০ টাকা খরচ করেছে কমিশন। বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে ১৪টি বৈঠকে আপ্যায়ন বাবদ খরচ হয়েছে আরও ৩০ হাজার ৯৬০ টাকা।

এর বাইরে ৯ মাসে অতিথি আপ্যায়নের জন্য খরচ হয়েছে দুই লাখ টাকা, যার মধ্যে ছিলেন বিদেশি কূটনীতিক, দেশি-বিদেশি প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধি, রাজনৈতিক দলের নেতা, সম্পাদক, সাংবাদিকসহ বিভিন্ন অতিথি।

কমিশন বলছে, বিস্তারিত হিসাব থেকে এটি স্পষ্ট যে ৮৩ কোটি টাকার ব্যয়ের দাবি কেবল মিথ্যাচারই নয়, বরং জাতীয় ঐকমত্য কমিশন ও তার কার্যক্রমকে হেয় করার একটি সংঘবদ্ধ ও পরিকল্পিত অপচেষ্টা। কমিশনের মেয়াদকালে কমিশন সর্বোচ্চ স্বচ্ছতা বজায় রেখে দায়িত্ব পালন করেছে। প্রতিদিনের সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত প্রতিবেদনই তার প্রমাণ। সাংবাদিকরা সহজেই কমিশন কার্যালয়ে উপস্থিত হতে পেরেছেন, কমিশনের সহসভাপতি ও সদস্যরা সবসময় গণমাধ্যমে তথ্য প্রদানে অকুণ্ঠ ছিলেন এবং নিয়মিত প্রেস ব্রিফিং করেছেন। তাছাড়া বাংলাদেশের ইতিহাসে এই প্রথমবারের মতো রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনা সরাসরি টেলিভিশনে সম্প্রচারিত হয়েছে।

কমিশন আশা করছে, যে অসাধু মহল অসৎ উদ্দেশ্যে এই প্রোপাগান্ডা ছড়িয়েছে তারা অবিলম্বে ভুল স্বীকার করে ক্ষমা চাইবে। কমিশন দায়িত্বশীল গণমাধ্যমের সহযোগিতা পেয়েছে এবং আশা করছে, সেই ধারা অব্যাহত রেখে গণমাধ্যমগুলো এ বিষয়ে সঠিক তথ্য প্রচার করে বিভ্রান্তি নিরসন করবে।

ad
ad

খবরাখবর থেকে আরও পড়ুন

নারীর প্রতি সহিংসতা রোধে সিরাজদিখানে ওয়েভ প্ল্যাটফর্ম

বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস) পরিচালিত সাম্প্রতিক জরিপ অনুযায়ী দেশের ৭৫.৯ শতাংশ নারী জীবনে অন্তত একবার নির্যাতনের শিকার হয়েছেন।

৮ ঘণ্টা আগে

স্ত্রী-কন্যাসহ সাবেক র‍্যাব ডিজি হারুনের দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা

অবৈধ সম্পদ অর্জন ও বিদেশে পাচারের অভিযোগে র‍্যাবের সাবেক মহাপরিচালক (ডিজি) মো. হারুন অর রশীদ, তার স্ত্রী ফাতেহা পারভীন লুনা এবং দুই কন্যা ফাহমিদা ফারাহ ফাবিয়া ও নুসরাত যারীন আর্দিতার বিদেশ গমনে নিষেধাজ্ঞা জারি করেছেন আদালত।

৮ ঘণ্টা আগে

পদে থেকেও নির্বাচন করা যায়, আইনি বাধা নেই: অ্যাটর্নি জেনারেল

অ্যাটর্নি জেনারেলের পদে থেকেও নির্বাচন করা যায়—সংবিধানে এতে কোনো বাধা নেই বলে মন্তব্য করেছেন অ্যাটর্নি জেনারেল মো. আসাদুজ্জামান। বৃহস্পতিবার তত্ত্বাবধায়ক সরকার ফেরাতে রাষ্ট্রপক্ষের আপিল শুনানি শেষে এ কথা বলেন তিনি।

৮ ঘণ্টা আগে

রাজনৈতিক বলির পাঠা যেন না হয় সংখ্যালঘুরা : পলাশ কান্তি দে

আসন্ন ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে ভোটের আগে ও পরে মোট ১০ দিন সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের নিরাপত্তা নিশ্চিতের দাবি জানিয়েছে বাংলাদেশ জাতীয় হিন্দু মহাজোট।

৯ ঘণ্টা আগে