পৃথিবীর যেকোনো আদালতে এ সাক্ষ্যপ্রমাণে একই শাস্তি হতো: চিফ প্রসিকিউটর

প্রতিবেদক, রাজনীতি ডটকম
আপডেট : ১৭ নভেম্বর ২০২৫, ১৬: ১২

জুলাই অভ্যুত্থানের সময় সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল যে রায় ঘোষণা করেছেন, একে ন্যায়বিচারের দৃষ্টান্ত হিসেবে অভিহিত করেছেন ট্রাইব্যুনালের চিফ প্রসিকিউটর তাজুল ইসলাম। এ মামলায় উপস্থাপিত সাক্ষ্যপ্রমাণ দিয়ে বিশ্বের যেকোনো আদালতেই একই রায় হতো বলেও মন্তব্য করেন তিনি।

সোমবার (১৭ নভেম্বর) আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় রায় ঘোষণার পর বিকেলে ট্রাইব্যুনালের সামনে সাংবাদিকদের এ কথা বলেন তিনি।

চিফ প্রসিকিউটর বলেন, বাংলাদেশ জটিল অপরাধের বিচার করতে সক্ষম এবং বাংলাদেশ সাফল্যের সঙ্গে সেটা করেছে। আমরা এটাও একই সঙ্গে বলতে চাই—যে ধরনের সাক্ষ্যপ্রমাণ এ আদালতে উপস্থাপিত হয়েছে, বিশ্বের যেকোনো আদালতের স্ট্যান্ডার্ডে এগুলো উৎরে যাবে। পৃথিবীর যেকোনো আদালতে এ সাক্ষ্যপ্রমাণ উপস্থাপন করা হলে আজ যেসব আসামিকে শাস্তি দেওয়া হয়েছে, তারা প্রত্যেকেই একই শাস্তি পেতেন।

মানবতাবিরোধী অপরাধের এ মামলায় ক্ষমতাচ্যুত শেখ হাসিনা ও সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালকে মৃত্যুদণ্ড সাজা দিয়েছেন আদালত। ‘রাজসাক্ষী’ হওয়ায় একই অভিযোগে দায়ী হলেও সাবেক আইজিপি চৌধুরী আব্দুল্লাহ আল মামুনকে দেওয়া হয়েছে পাঁচ বছরের কারাদণ্ড।

আদালতের আদেশের কথা তুলে ধরে তাজুল ইসলাম বলেন, আদালত যেটা করেছেন, দণ্ডপ্রাপ্ত শেখ হাসিনার সব সম্পদ বাজেয়াপ্ত করার আদেশ দিয়েছেন। সেই সম্পদ রাষ্ট্র গ্রহণ করবে এবং সেখান থেকে সব শহিদ পরিবার ও আহত পরিবারকে ক্ষতিপূরণ দেবে।

চিফ প্রসিকিউটর আরও বলেন, আওয়ামী লীগ ও ১৪ জোট বা যুবলীগ একটি সন্ত্রাসী বা ক্রিমিনাল সংগঠন ছিল কি না, এটি যেহেতু আজকের মামলার সরাসরি বিবেচ্য বিষয় নয় বা তারা আসামি হিসেবে পক্ষ নয়, সে ব্যাপারে আদালত অবজারভেশন দেওয়া থেকে বিরত থাকছেন।

সাজাপ্রাপ্ত দুই আসামি শেখ হাসিনা ও আসাদুজ্জামান খান কামাল দুজনেই পলাতক। তাদের বিষয়ে তাজুল বলেন, ভারতের সঙ্গে ২০১৩ সালের চুক্তি অনুযায়ী মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে যারা দণ্ডপ্রাপ্ত হয়েছে, ভারত সরকার আইনের শাসন ও ন্যায়বিচারের স্বার্থে তাদের বাংলাদেশে ফেরত পাঠাবে এবং তাদের ওপর যে সাজা তা কার্যকর করা যাবে। দ্বিতীয় প্রক্রিয়া হচ্ছে, ইন্টারপোলের মাধ্যমে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করে গ্রেপ্তার করে বাংলাদেশে নিয়ে আসা যেতে পারে।

তিনি আরও বলেন, যেকোন আদালতের আদেশের বিরুদ্ধে আপিল করা যায়। দণ্ডপ্রাপ্তরা চাইলে সুপ্রিম কোর্টে আপিল দায়ের করতে পারবে। কিন্তু সেই আপিল দায়ের করতে হলে, তাকে অবশ্যই এসে আত্মসমর্পণ করতে হবে এবং জেলে গিয়ে সুপ্রিম কোর্টে আপিল করতে হবে। আত্মসমর্পণ না করলে তার আপিলের সুযোগ থাকবে না।

এই বিচার সম্পূর্ণ স্বচ্ছভাবে পরিচালিত হয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, কোনো পক্ষ থেকে, এমনকি আসামিপক্ষের স্টেট ডিফেন্স ল'ইয়ার থেকেও, এই বিচারের স্বচ্ছতা নিয়ে বা এই বিচারে কোনো ইনজাস্টিস হয়েছে বা কোন জায়গায় মিথ্যা সাক্ষ্য দেয়া আছে এই অভিযোগ কেউ কখনো করেনি, করতে পারবেও না। গোটা দুনিয়ার সামনে এই বিচার হয়েছে। পৃথিবীর সবার কাছে আমাদের ওপেন চ্যালেঞ্জ, এই বিচার প্রক্রিয়া স্বচ্ছ ও নিরপেক্ষ ছিল, প্রত্যেকেই আইন অনুযায়ী কাজ করেছেন। এইখানে যে কোয়ালিটির এভিডেন্স দাখিল করা হয়েছে, আমরা আবারও চ্যালেঞ্জ করছি, দুনিয়ার যে প্রান্তেই হোক, যেকোনো আদালতে এই এভিডেন্স হাজির করলে এই অপরাধীদের একই ধরনের শাস্তি হবে বলে আমরা বিশ্বাস করি।

আজকে থেকে ৩০ দিনের মধ্যে তারা আপিল করতে পারবেন জানিয়ে চিফ প্রসিকিউটর বলেন, আইন অনুযায়ী- ৩০ দিনের মধ্যে তারা যদি এসে আত্মসমর্পণ করেন, তাহলে তারা সুপ্রিম কোর্টে আপিল করতে পারবেন। সুপ্রিম কোর্টে আপিল দায়ের হলে, আমাদের আইনে পরিষ্কারভাবে বলা আছে, সুপ্রিম কোর্ট সেই আপিলটা পরবর্তী ৬০ দিনের মধ্যেই নিষ্পত্তি করবেন। সুতরাং, তারা যদি আইনের শাসনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হন, তাদের যদি সাহস থাকে যে তারা ইনোসেন্ট, তারা যদি বাংলাদেশের বিচার প্রক্রিয়া মোকাবেলা করার সৎসাহস থাকে, আমরা বলব তারা আসুন, বাংলাদেশে এসে এই রায় অনুযায়ী আত্মসমর্পণ করে তার রায়কে সুপ্রিম কোর্টে চ্যালেঞ্জ করুন। তার যুক্তি ও প্রমাণ দিয়ে তিনি যদি নিজেকে নির্দোষ প্রমাণ করতে পারেন, আমাদের তো কোনো সমস্যা নেই। আইন আইনের গতিতেই চলবে।

ad
ad

খবরাখবর থেকে আরও পড়ুন

পরবর্তী সরকার যেন বিচারের দায়িত্ব থেকে পিছুপা না হয়: আইন উপদেষ্টা

অধ্যাপক আসিফ নজরুল বলেন, আমরা যতদিন আছি, বিচারকাজ পূর্ণোদ্যমে চলবে। আশা করি আগামীতে যে সরকার নির্বাচিত হয়ে আসবে, বিচারের গুরুদায়িত্ব থেকে তারাও যেন কোনো অবস্থাতেই পিছুপা না হয়।

২ ঘণ্টা আগে

গণঅভ্যুত্থানের শহিদরা ন্যায়বিচার পেয়েছে: অ্যাটর্নি জেনারেল

জুলাই অভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত শেখ হাসিনা ও সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের মৃত্যুদণ্ড সাজায় শহিদরা ন্যায়বিচার পেয়েছেন বলে মন্তব্য করেছেন অ্যাটর্নি জেনারেল মো. আসাদুজ্জামান। পাশাপাশি রায়ের সাজা কার্যকর করতে আইনিভাবে যা যা করা সম্ভব, রাষ্ট্র সেগুলো ক

৩ ঘণ্টা আগে

‘রাজসাক্ষী’ হওয়ায় ৫ বছরের কারাদণ্ড সাবেক আইজিপির

বিচাপতি বলেন, কিন্তু যেহেতু তিনি ‘রাজসাক্ষী’ হয়েছেন এবং আদালতকে এ মামলার গুরুত্বপূর্ণ তথ্যপ্রমাণ দিয়েছেন, সে কারণে তার সাজা কিছুটা কম হবে। তাকে আমরা পাঁচ বছরের কারাদণ্ড সাজা দিয়েছি।

৪ ঘণ্টা আগে

হাসিনা খালাস পেলে সবচেয়ে বেশি খুশি হতাম: রাষ্ট্রনিযুক্ত আইনজীবী

ক্ষমতাচ্যুত সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পক্ষে রাষ্ট্র নিযুক্ত আইনজীবী মো. আমির হোসেন বলেছেন, বিচার স্বচ্ছ হয়েছে, ট্রাইব্যুনালের রায়ে শেখ হাসিনা খালাস পেলে আমি সবচেয়ে খুশি হতাম। এটাই স্বাভাবিক কথা, আমার তো প্রত্যাশা থাকতেই হবে। এটা হৃদয় থেকেই বলছি। আমি একজনের জন্য এত এত মাস ধরে মামলা করেছি, তা স

৪ ঘণ্টা আগে