মদের টাকা সংগ্রহে গলা কেটে রিকশা চালককে হত্যা

প্রতিবেদক, রাজনীতি ডটকম
আপডেট : ০৩ জুলাই ২০২৪, ১৯: ২৪

মদ ও জুয়ার টাকা সংগ্রহ করতে এক রিকশা চালককে হত্যা করল দুর্বৃত্তরা। চালককে হত্যা করে তার ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা ছিনতাই করে। হত্যাকারীরা পরিচিত হওয়ায় বিশ্বাস করে তাদের সঙ্গে গিয়েছিলেন রিকশা চালক রবিউল ইসলাম।

এ হত্যায় জড়িত ৭ জনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)। পলাতক রয়েছে আরও একজন।

গ্রেপ্তার আসামিরা হলেন- মো. নাহিদ শেখ (২২), মো. হুমায়ুন (৪০), মো. লিটন খান (৪৫), জুবায়ের হাসান অমি (১৯), শাজিদুল ইসলাম হাসিব (১৯)। এছাড়াও রাকিবুল (২০), জুয়েল (২০)। এদের মধ্যে নাহিদ, হুমায়ুন, লিটন, জুবায়ের ও হাসিব আদালতে স্বীকারোক্তি মূলক জবানবন্দি দিয়েছে।

মঙ্গলবার (২ জুলাই) দুপুরে রাজধানীর ধানমন্ডি পিবিআই হেডকোয়ার্টার্সে আয়োজিত ক্লুলেস হত্যার রহস্য উদ্ঘাটন সংক্রান্ত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানিয়েছেন নরসিংদী জেলার পিবিআই এর পুলিশ সুপার (অতিরিক্ত ডিআইজি পদে পদোন্নতি প্রাপ্ত) মো. এনায়েত হোসেন মান্নান।

ঘটনার বর্ণনা তুলে ধরে মো. এনায়েত হোসেন মান্নান বলেন, গত বছরের ২৯ অক্টোবর সকালে জানা যায় যে, নরসিংদী জেলার শিবপুর থানা এলাকার সাতপাইকা পাঁকা রাস্তার পাশে ধানক্ষেতে একটি অজ্ঞাতনামা কিশোরের জবাই করা লাশ পড়ে আছে। খবর পেয়ে নরসিংদী জেলার পিবিআই ও ক্রাইমসিন টিম ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে সরেজমিনে ছায়া তদন্ত শুরু করে। এরপর তথ্যপ্রযুক্তি ও স্থানীয় লোকজনের সহায়তায় ভুক্তভোগীর পরিচয় শনাক্ত করতে সক্ষম হয়। পরে ভুক্তভোগী রবিউল ইসলামের মা বাদি হয়ে অজ্ঞাতনামা আসামিদের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেন। গুরুত্ব বিবেচনায় মামলাটি নরসিংদীর পিবিআই গ্রহণ করে।

তিনি বলেন, তদন্তকালে ঘটনার সম্ভাব্য কারণ, ঘটনার প্রকৃতি এবং হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত সম্ভাব্য আসামিদের শনাক্ত করার বিষয়ে নানান তথ্য উপাত্ত সংগ্রহ করা হয়। পরে জানা যায়, ভুক্তভোগী একজন অটোরিকশা চালক। ঘটনার কোন ক্লু না থাকায় শিবপুর অঞ্চলে যাদের চোরাই অটো বাইক/গাড়ি কেনাবেচার দুর্নাম রয়েছে তাদের যাচাই করার এক পর্যায়ে সন্দেহভাজন আসামি রাকিবুলকে (২০) গ্রেপ্তার করি। জিজ্ঞাসাবাদের একপর্যায়ে আসামি ঘটনায় সংশ্লিষ্ট অটোরিকশাটি নাহিদের মাধ্যমে বিক্রিতে সহায়তা করেছে বলে জানায়।

তার দেয়া তথ্যমতে আসামি মো. নাহিদ শেখকে (২২) গ্রেপ্তার করা হয়। আসামি নাহিদ অটোরিকশাটি বিক্রির কথা স্বীকার করে এবং যে গ্যারেজে বেচাকেনা হয়েছিল তা দূর থেকে শনাক্ত করে। এছাড়াও সোর্স শিবপুর কলেজ গেইট এলাকায় এ ধরনের একটি অটোগাড়ি দেখেছে বলে জানালে আমরা তাৎক্ষণিক ভাবে ঐ সকল এলাকায় একাধিক সিসি ক্যামেরার ফুটেজ পর্যালোচনা করে অটোরিকশা চালককে শনাক্ত করে আসামি মো. হুমায়ুনকে (৪০) গ্রেফতার করি। তার দেওয়া তথ্যমতে হত্যাকাণ্ডের পরে ছিনতাইকৃত অটোরিকশাটি গ্যারেজ মালিক আসামি মো. লিটন খাঁন (৪৫) এর গ্যারেজ হতে উদ্ধার করা হয়।

আসামি নাহিদকে রিমান্ডে এনে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। এসময় যারা নাহিদের কাছে ছিনতাইকৃত অটোরিকশাটি নিয়ে আসছিল তাদের নাম জানায়। হত্যার সঙ্গে জড়িত আসামিরা ঘটনার পরে গাঁ ঢাকা দেয়। মামলার ঘটনার তদন্তে তদন্তকারী একাধিক চৌকস টিম নরসিংদী, গাজীপুর, নারায়ণগঞ্জ, ভৈরব, কিশোরগঞ্জসহ বিভিন্ন এলাকায় অভিযান পরিচালনা করে। অভিযানে ভিন্ন ভিন্ন সময়ে বিভিন্ন এলাকা হতে তাদেরকে গ্রেপ্তার করা হয়।

তিনি বলেন, হত্যাকারী ২ জনসহ গাড়ি ক্রয় বিক্রয়, রং ও মডেল পরিবর্তন ও সংরক্ষণের সংশ্লিষ্ট মোট ৫ জন আসামি নিজেদের সম্পৃক্তর কথা স্বীকার করে ১৬৪ ধারায় আদালতে স্বীকারোক্তি মূলক জবানবন্দি দেয়।

তাদের দেওয়া তথ্য থেকে জানা যায়, হত্যাকাণ্ডের শিকার রবিউল ও অটোরিকশা ছিনতাইয়ে প্রত্যক্ষভাবে জড়িত আসামি অমি, নিহাল, হাসিব একই সঙ্গে চলাফেরা করতো। তারা নিয়মিত মাদক সেবন করতো ও অনলাইনে জুয়া খেলতো। একপর্যায়ে আসামিরা মাদক ও জুয়ার টাকা সংগ্রহের জন্য অটো ছিনতাইয়ের পরিকল্পনা করে। তারা সহজ সরল অটো চালক রবিউল ইসলামকে চিনতো। তাই তারা রবিউলকে হত্যা করে অটোরিকশাটি ছিনতাইয়ের পরিকল্পনা করে।

ঘটনার দিন বিকাল অনুমানিক ২টার দিকে আসামি অমি, নিহাল, হাসিব শিবপুর বাসস্ট্যান্ডে গিয়ে ভুক্তভোগী রবিউল ইসলামকে পায় তারা তাকে অটোরিকশা নিয়ে বিকাল ৪ টার দিকে আসামি শাজিদুল ইসলাম হাসিব এর বাড়ির সামনে থাকতে বলে। ভুক্তভোগী রবিউল ইসলাম বিকাল ৪টার দিকে আসামি হাসিবের বাড়ির সামনে আসলে আসামি অমি, নিহাল, হাসিব ভুক্তভোগী রবিউল ইসলামের অটোরিকশা নিয়ে বিভিন্ন জায়গায় ঘুরাঘুরি করে। পরে পূর্ব পরিকল্পনা অনুযায়ী গোপনে নিয়ে আসা চাপাতি বের করে এবং আসামি হাসিব ও নেহাল ভুক্তভোগী রবিউলের হাত পা জাপটে ধরে রাখে। এ সময় আসামি অমি চাপাতি দিয়ে বেপরোয়া ভাবে গলায় কুপায়। ঘটনাস্থলেই ভুক্তভোগী রবিউল মৃত্যুবরণ করে এবং আসামিরা ভুক্তভোগীর মৃতদেহ ধাক্কা দিয়ে রাস্তার পাশে থাকা ধানক্ষেতে ফেলে দিয়ে ভুক্তভোগীর অটোরিকশা নিয়ে যায়।

পরে আসামি রাকিব, নাহিদ, জুয়েল ও হুমায়ুন অটোরিকশাটির রং ও মডেল পরিবর্তন বিক্রয় ও হস্তান্তর করে এবং আসামি লিটন মিয়া ৩০ হাজার টাকায় গাড়িটি ক্রয় করে।

ভয়ংকর নেশা থেকে জুয়া ছিনতাই হত্যা প্রতিরোধে বেশ কয়েকটি উদ্যোগ গ্রহণের কথা জানান তিনি। তিনি বলেন, সাম্প্রতিক সময়ে অটোরিকশা ছিনতাই করে চালককে হত্যা করার প্রবণতা বৃদ্ধি পেয়েছে। এই ছিনতাই ও হত্যা প্রতিরোধে প্রতিটি অটো রিকশার ৩ দিকে গ্রিলের তৈরি গেট নির্মাণ করতে হবে। চালকের পাশে কোন ধরনের যাত্রী তোলা যাবে না। প্রয়োজনের গাড়িতে জিপিএস ট্র্যাকার লাগাতে হবে এবং এই সমস্ত গাড়িগুলো রেজিস্ট্রেশনের আওতায় আনতে হবে।

ad
ad

খবরাখবর থেকে আরও পড়ুন

রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রভাষক ও কর্মচারী পদে কাজের সুযোগ

১৫ ঘণ্টা আগে

ডাকসুর কোষাধ্যক্ষ হলেন অধ্যাপক মোশারফ

বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদের (ডাকসু) গঠনতন্ত্রের ৬(এ) অনুচ্ছেদ অনুযায়ী উপাচার্য আপনাকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) ২০২৫-এর কোষাধ্যক্ষ হিসেবে মনোনয়ন দিয়েছেন।

১৫ ঘণ্টা আগে

ডেঙ্গুতে একদিনে মৌসুমের সর্বোচ্চ ১২ জনের মৃত্যু, নতুন ভর্তি ৭৪০

দেশে ডেঙ্গুর ভয়াবহতা অব্যাহত রয়েছে। গত ২৪ ঘণ্টায় ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে সারাদেশে ১২ জনের মৃত্যু হয়েছে। একই সময়ে নতুন করে ৭৪০ জন রোগী হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন।

১৯ ঘণ্টা আগে

পিআর নিয়ে সিদ্ধান্ত নেবে দলগুলোই: প্রেস সচিব

পিআর নাকি বিদ্যমান পদ্ধতিতে নির্বাচন হবে- এর সিদ্ধান্ত রাজনৈতিক দলগুলোই নেবে বলে মন্তব্য করেছেন প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম। তিনি বলেন, সরকারের এ বিষয়ে কম কথা বলাই ভালো।

১৯ ঘণ্টা আগে