ডেস্ক, রাজনীতি ডটকম
নতুন জারি হওয়া জাতীয় মুক্তিযোদ্ধা কাউন্সিল (জামুকা) অধ্যাদেশে মুক্তিযোদ্ধার স্বীকৃতি নিয়ে ব্যাপক ‘বিতর্ক’ দেখা দিয়েছে। এই অধ্যাদেশ অনুযায়ী বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানসহ জাতীয় চার নেতা ও মুক্তিযুদ্ধকালীন মুজিবনগর সরকারের সদস্যরা বীর মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে স্বীকৃত হবেন কি না, তা নিয়ে প্রশ্ন ওঠে।
একাধিক গণমাধ্যমের খবরে প্রকাশ, এই অধ্যাদেশ অনুযায়ী বঙ্গবন্ধুসহ জাতীয় চার নেতা বার মুক্তিযোদ্ধা থাকবেন না, তারা সহযোগী মুক্তিযোদ্ধার স্বীকৃতি পাবেন।
এসব খবরের পরিপ্রেক্ষিতে অবশ্য সরকার বলেছে, গণমাধ্যমের এ খবর সঠিক নয়। বঙ্গবন্ধু ও জাতীয় চার নেতাসহ মুজিবনগর সরকারের কারও জন্যই বীর মুক্তিযোদ্ধার স্বীকৃতি প্রত্যাহার করা হয়নি।
মঙ্গলবার (৩ জুন) মধ্যরাতের দিকে মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয় জামুকা অধ্যাদেশ জারি করে। এতে বীর মুক্তিযোদ্ধার সংজ্ঞা নতুন করে নির্ধারণ করা হয়েছে। সহযোগী মুক্তিযোদ্ধার সংজ্ঞা যুক্ত করা হয়েছে। সব মিলিয়ে জামুকা আইনের ১০টি ধারায় বেশ কিছু সংশোধন করা হয়েছে। সংশোধিত অধ্যাদেশের আরও কিছু সংজ্ঞায়তেও আনা হয়েছে পরিবর্তন।
মঙ্গলবার রাতে এ অধ্যাদেশ জারির পর মধ্যরাতেই বিভিন্ন গণমাধ্যম খবর প্রকাশ করে। তাতে বলা হয়, বঙ্গবন্ধু ও জাতীয় চার নেতাসহ চার শতাধিক বীর মুক্তিযোদ্ধা স্বীকৃতি হারাচ্ছেন নতুন অধ্যাদেশ অনুযায়ী। বলা হয়, তারা সবাই সহযোগী মুক্তিযোদ্ধা হবেন।
পরে বুধবার (৪ জুন) মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ফারুক ই আজম গণমাধ্যমকে বলেন, মুজিবনগর সরকারে যারা ছিলেন, তারাও মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে বিবেচিত হবে। যারা সশস্ত্রভাবে মুক্তিযুদ্ধ করেছে, যারা পরিচালনা করেছে তারা মুক্তিযোদ্ধা। তবে ওই সরকারের কর্মকর্তা, কর্মচারীরা সহযোগী মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে বিবেচিত হবেন।
মুক্তিযোদ্ধার সংজ্ঞা পুনর্নির্ধারণ নিয়ে এ বছরের শুরু থেকেই কাজ করছে সরকার। গত মার্চে একটি গণমাধ্যম প্রথম এ সংক্রান্ত খবর প্রকাশ করে। সেখানে জামুকা আইনে বিদ্যমান মুক্তিযোদ্ধার সংজ্ঞা পরিবর্তনের কথা বলা হয়। পরে সমালোচনার মুখে সে সংজ্ঞা আবার বদলে দেওয়া হয়।
গত ১৫ মে উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকে জাতীয় মুক্তিযোদ্ধা কাউন্সিল (সংশোধন) অধ্যাদেশ-২০২৫-এর খসড়া নীতিগত ও চূড়ান্ত অনুমোদন দেওয়া হয়। পরে গত রাতে জাতীয় ‘মুক্তিযোদ্ধা কাউন্সিল (জামুকা) অধ্যাদেশ ২০২৫’ গেজেট আকারে প্রকাশ করা হয়।
অধ্যাদেশের ২(১০) ধারায় বীর মুক্তিযোদ্ধার নতুন সংজ্ঞা উল্লেখ করা হয়েছে। নতুন সংজ্ঞায় বলা হয়েছে, যারা ১৯৭১ সালের ২৬ মার্চ থেকে ১৬ ডিসেম্বর পর্যন্ত দেশের ভেতরে গ্রামগঞ্জে যুদ্ধের প্রস্তুতি ও অভ্যন্তরীণ প্রশিক্ষণ নিয়েছেন এবং যেসব ব্যক্তি মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণের লক্ষ্যে বাংলাদেশের সীমানা অতিক্রম করে ভারতের বিভিন্ন প্রশিক্ষণ ক্যাম্পে তাদের নাম অন্তর্ভুক্ত করেছিলেন এবং বাংলাদেশের মহান স্বাধীনতা অর্জনের লক্ষ্যে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে যুদ্ধে লিপ্ত হয়ে হানাদার ও দখলদার পাকিস্তানি সশস্ত্র বাহিনী এবং তাদের এ দেশীয় সহযোগী রাজাকার, আলবদর, আলশামস, তৎকালীন মুসলিম লীগ, জামায়াতে ইসলামী, নেজামে ইসলাম এবং দালাল ও শান্তি কমিটির বিরুদ্ধে মুক্তিযুদ্ধে সক্রিয় অংশগ্রহণ করেছেন, এমন সব বেসামরিক নাগরিক, ওই সময়ে যাদের বয়স সরকার নির্ধারিত সর্বনিম্ন বয়সের মধ্যে; এবং সশস্ত্র বাহিনী, ইস্ট পাকিস্তান রাইফেলস (ইপিআর), পুলিশ বাহিনী, মুক্তি বাহিনী, প্রবাসী বাংলাদেশ সরকার (মুজিবনগর সরকার) ও ওই সরকার স্বীকৃত অন্যান্য বাহিনী, নৌ কমান্ডো, কিলো ফোর্স, আনসার সদস্য এবং বাংলাদেশের নিম্নবর্ণিত নাগরিকরাও বীর মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে অন্তর্ভুক্ত হবেন।
সংশোধিত সংজ্ঞা অনুযায়ী, হানাদার ও দখলদার পাকিস্তানি বাহিনী ও তাদের সহযোগীর হাতে নির্যাতনের শিকার নারী বা বীরাঙ্গনারাও মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে গণ্য হবেন।
এ ছাড়া মুক্তিযুদ্ধের সময় আহত বীর মুক্তিযোদ্ধাদের চিকিৎসা দেওয়া ফিল্ড হাসপাতালের সব ডাক্তার, নার্স ও চিকিৎসা সহকারীরাও থাকবেন বীর মুক্তিযোদ্ধার তালিকায়।
এদিকে মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে যুদ্ধে আহত কিংবা শরীরের এক বা একাধিক অঙ্গ ক্ষতিগ্রস্তদের স্বীকৃতি মিলবে যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে। আর যেসব বীর মুক্তিযোদ্ধা যুদ্ধ চলাকালে নিহত হয়েছেন, সংজ্ঞা অনুযায়ী তাদের বলা হবে ‘শহিদ বীর মুক্তিযোদ্ধা’।
জামুকা আইনের সংশোধনী এনে জারি করা অধ্যাদেশটির পূর্ণ গেজেট দেখুন এখানে—
সংশোধিত মুক্তিযোদ্ধা কাউন্সিল আইনে মুক্তিযুদ্ধের পাশাপাশি সহযোগী মুক্তিযোদ্ধারও সংজ্ঞা দেওয়া হয়েছে।
সংজ্ঞায় বলা হয়েছে, যারা ১৯৭১ সালের ২৬ মার্চ থেকে ১৬ ডিসেম্বর পর্যন্ত বাংলাদেশের মহান স্বাধীনতা অর্জনের লক্ষ্যে দেশের ভেতরে বা প্রবাসে অবস্থান করে বীর মুক্তিযোদ্ধাদের উদ্দীপিত করা এবং মুক্তিযুদ্ধকে বেগবান ও বাংলাদেশের স্বাধীনতা অর্জনকে ত্বরান্বিত করার প্রয়াসে সংগঠকের ভূমিকা পালন, বিশ্বজনমত গঠন, কূটনৈতিক সমর্থন অর্জন এবং মনস্তাত্ত্বিক শক্তি অর্জনের প্রেক্ষাপটে যেসব বাংলাদেশের নাগরিক প্রত্যক্ষভাবে অংশগ্রহণ ও সহযোগিতা করেছেন।
এর ব্যাখ্যায় পাঁচটি ক্যাটাগরির মানুষকে সহযোগী মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়ার কথা বলা হয়েছে। তারা হলেন—
সংজ্ঞা অনুযায়ী সহযোগী মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে যারা গণ্য হবেন তাদের স্বামী বা স্ত্রী, পুত্র, কন্যা, পিতা ও মাতা মুক্তিযুদ্ধের সহযোগী পরিবার হিসেবে স্বীকৃতি পাবে।
অধ্যাদেশে বীর মুক্তিযোদ্ধা ও সহযোগী মুক্তিযোদ্ধা— দুটি সংজ্ঞাতেই মুজিবনগর সরকারের উল্লেখ থাকা নিয়েই মূলত তৈরি হয়েছে, যা থেকে তৈরি হয়েছে বিতর্ক।
সহযোগী মুক্তিযোদ্ধার সংজ্ঞায় বলা হয়েছে, মুজিবনগর সরকারের সঙ্গে সম্পৃক্ত সব এমএনএ বা এমপিএ এবং যারা পরে গণপরিষদের সদস্য হয়েছিলেন তারা সবাই সহযোগী মুক্তিযোদ্ধার স্বীকৃতি পাবেন।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও জাতীয় চার নেতা ওই সরকারের এমএনএ বা এমপি ছিলেন বলে তারা সহযোগী মুক্তিযোদ্ধার স্বীকৃতি পাবেন এবং তাদের বীর মুক্তিযোদ্ধার স্বীকৃতি বাতিল হয়ে গেছে— এমন খবর প্রকাশ হয় গণমাধ্যমে।
এ নিয়ে তীব্র আলোচনা-সমালোচনা শুরু হয় সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমেও। অন্তর্বর্তী সরকারেরও তীব্র সমালোচনা হয়। তবে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে অনেকেই আবার বলেন, মুজিবনগর সরকারের সদস্যরা বীর মুক্তিযোদ্ধার সংজ্ঞার অন্তর্ভুক্ত হওয়ায় তাদের ওই সরকারের এমএনএ হিসেবে বিবেচিত হতে হবে না। তারা বীর মুক্তিযোদ্ধাই থাকবেন।
এ নিয়ে মঙ্গলবার রাতভর যুক্তি-পালটা যুক্তিতে সয়লাব হয়ে যায় ফেসবুক। গণমাধ্যমে প্রকাশিত খবরকে অনেকে ‘মিসইনফরমেশন’ বা ‘ডিসইনফরমেশন’ বা ‘ফেক নিউজ’ হিসেবে অভিহিত করেন। অধ্যাদেশের ২(১০) অংশটুকু ছবি তুলে তারা শেয়ার করেন।
কেউ কেউ অধ্যাদেশের গেজেটে বীর মুক্তিযোদ্ধা ও সহযোগী মুক্তিযোদ্ধার সংজ্ঞায় মুজিবনগর সরকারের সঙ্গে সংশ্লিষ্টদের অবস্থান ঘিরে সুস্পষ্ট পরিচয় সংজ্ঞায়িত না করে ধোঁয়াশা তৈরির জন্য সরকারের সমালোচনা করেন। তারা বলেন, সরকার অধ্যাদেশ সুস্পষ্ট করতে পারেনি জন্যই এই বিতর্ক তৈরি হয়েছে।
মঙ্গলবার রাত ও বুধবার সকাল থেকেই বিতর্কের মুখে সকালে ফেসবুকে একটি পোস্ট দেন সংস্কৃতিবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা মোস্তফা সরয়ার ফারুকী। অধ্যাদেশের গেজেটের ছবি শেয়ার করে তিনি গণমাধ্যমের খবরকে ‘ফেক নিউজ’ বলে দাবি করেন।
ফারুকী বলেন, ‘প্রিয় ভাই-বোনেরা, শেখ মুজিবুর রহমান, তাজউদ্দিন আহমেদসহ মুক্তিযুদ্ধের নেতাদের মুক্তিযোদ্ধা সার্টিফিকেট বাতিল— একটা ফেক নিউজ। নতুন অধ্যাদেশে মুজিবনগর সরকারের সব সদস্যকে মুক্তিযোদ্ধার স্পষ্ট স্বীকৃতি দেওয়া আছে। মুজিবনগর সরকারের কোনো সদস্যের মুক্তিযোদ্ধা সার্টিফিকেট বাতিল হয়ে গেছে— এটা যে ফেইক নিউজ, তার প্রমাণ হিসাবে অধ্যাদেশের স্ক্রিনশট দেওয়া হলো।’
পরে গণমাধ্যমের সঙ্গে কথা বলেন মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ফারুক ই আজম। তিনি বলেন, মুজিবনগর সরকারে যারা ছিলেন, তারাও মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে বিবেচিত হবে। যারা সশস্ত্রভাবে মুক্তিযুদ্ধ করেছে, যারা পরিচালনা করেছে তারা মুক্তিযোদ্ধা। তবে ওই সরকারের কর্মকর্তা, কর্মচারীরা সহযোগী মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে বিবেচিত হবেন।
এরপর দুপুরে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইংয়ের ফ্যাক্ট চেক পেজ থেকে এ সংক্রান্ত খবরকে ‘ভিত্তিহীন, মিথ্যা ও বিভ্রান্তিকর’ অভিহিত করা হয়। উপদেষ্টা ফারুক ই আজমের বক্তব্য উদ্ধৃত করে প্রেস উইং।
ফ্যাক্ট চেকে উপদেষ্টার বক্তব্যে বলা হয়, মুজিবনগর সরকারে যারা ছিলেন, তারাও মুক্তিযোদ্ধা। যারা সশস্ত্রভাবে মুক্তিযুদ্ধ করেছে, যারা পরিচালনা করেছে, তারা মুক্তিযোদ্ধা। তবে ওই সরকারের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা সহযোগী মুক্তিযোদ্ধা।
প্রেস উইং জানায়, জামুকা অধ্যাদেশ অনুযায়ী স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রসহ কূটনীতিকদের সহযোগী মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে সংজ্ঞায়িত করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন উপদেষ্টা। তিনি জানান, ১৯৭২ সালে মুক্তিযোদ্ধার যে সংজ্ঞা ছিল সেটাই বাস্তবায়ন করা হয়েছে। ২০১৮ ও ২০২২ সালে এটা পরিবর্তন করা হয়। মুক্তিযোদ্ধা ও মুক্তিযুদ্ধের সহযোগী দুইয়েরই সম্মান, মর্যাদা, সুযোগ-সুবিধা একই থাকবে।
এ বিষয়ে প্রশ্নের জবাবে উপদেষ্টা ফারুক ই আজম বিবিসি বাংলাকে বলেন, ‘শেখ মুজিবুর রহমান ও চার নেতাকে অবশ্যই মুক্তিযোদ্ধার তালিকায় রাখা হয়েছে। তারা তো থাকবেনই। তাদের কেন বাদ দেওয়া হবে? মুক্তিযুদ্ধটা তো পরিচালনা করেছেনই তারা।’
নতুন অধ্যাদেশ জারির পর না বুঝেই ভুল ব্যাখ্যা ও বিতর্ক তৈরি করা হচ্ছে বলেও মনে করেন উপদেষ্টা। বলেন, ‘ইতিহাসকে কেউ মুছতে পারে না। শেখ মুজিবুর রহমান ও জাতীয় চার নেতা মুক্তিযোদ্ধা হিসেবেই আছেন, থাকবেন। তাদের বাদ দেওয়া হয়নি। বাদ দেওয়ার কোনো কারণও নেই।’
নতুন জারি হওয়া জাতীয় মুক্তিযোদ্ধা কাউন্সিল (জামুকা) অধ্যাদেশে মুক্তিযোদ্ধার স্বীকৃতি নিয়ে ব্যাপক ‘বিতর্ক’ দেখা দিয়েছে। এই অধ্যাদেশ অনুযায়ী বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানসহ জাতীয় চার নেতা ও মুক্তিযুদ্ধকালীন মুজিবনগর সরকারের সদস্যরা বীর মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে স্বীকৃত হবেন কি না, তা নিয়ে প্রশ্ন ওঠে।
একাধিক গণমাধ্যমের খবরে প্রকাশ, এই অধ্যাদেশ অনুযায়ী বঙ্গবন্ধুসহ জাতীয় চার নেতা বার মুক্তিযোদ্ধা থাকবেন না, তারা সহযোগী মুক্তিযোদ্ধার স্বীকৃতি পাবেন।
এসব খবরের পরিপ্রেক্ষিতে অবশ্য সরকার বলেছে, গণমাধ্যমের এ খবর সঠিক নয়। বঙ্গবন্ধু ও জাতীয় চার নেতাসহ মুজিবনগর সরকারের কারও জন্যই বীর মুক্তিযোদ্ধার স্বীকৃতি প্রত্যাহার করা হয়নি।
মঙ্গলবার (৩ জুন) মধ্যরাতের দিকে মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয় জামুকা অধ্যাদেশ জারি করে। এতে বীর মুক্তিযোদ্ধার সংজ্ঞা নতুন করে নির্ধারণ করা হয়েছে। সহযোগী মুক্তিযোদ্ধার সংজ্ঞা যুক্ত করা হয়েছে। সব মিলিয়ে জামুকা আইনের ১০টি ধারায় বেশ কিছু সংশোধন করা হয়েছে। সংশোধিত অধ্যাদেশের আরও কিছু সংজ্ঞায়তেও আনা হয়েছে পরিবর্তন।
মঙ্গলবার রাতে এ অধ্যাদেশ জারির পর মধ্যরাতেই বিভিন্ন গণমাধ্যম খবর প্রকাশ করে। তাতে বলা হয়, বঙ্গবন্ধু ও জাতীয় চার নেতাসহ চার শতাধিক বীর মুক্তিযোদ্ধা স্বীকৃতি হারাচ্ছেন নতুন অধ্যাদেশ অনুযায়ী। বলা হয়, তারা সবাই সহযোগী মুক্তিযোদ্ধা হবেন।
পরে বুধবার (৪ জুন) মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ফারুক ই আজম গণমাধ্যমকে বলেন, মুজিবনগর সরকারে যারা ছিলেন, তারাও মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে বিবেচিত হবে। যারা সশস্ত্রভাবে মুক্তিযুদ্ধ করেছে, যারা পরিচালনা করেছে তারা মুক্তিযোদ্ধা। তবে ওই সরকারের কর্মকর্তা, কর্মচারীরা সহযোগী মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে বিবেচিত হবেন।
মুক্তিযোদ্ধার সংজ্ঞা পুনর্নির্ধারণ নিয়ে এ বছরের শুরু থেকেই কাজ করছে সরকার। গত মার্চে একটি গণমাধ্যম প্রথম এ সংক্রান্ত খবর প্রকাশ করে। সেখানে জামুকা আইনে বিদ্যমান মুক্তিযোদ্ধার সংজ্ঞা পরিবর্তনের কথা বলা হয়। পরে সমালোচনার মুখে সে সংজ্ঞা আবার বদলে দেওয়া হয়।
গত ১৫ মে উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকে জাতীয় মুক্তিযোদ্ধা কাউন্সিল (সংশোধন) অধ্যাদেশ-২০২৫-এর খসড়া নীতিগত ও চূড়ান্ত অনুমোদন দেওয়া হয়। পরে গত রাতে জাতীয় ‘মুক্তিযোদ্ধা কাউন্সিল (জামুকা) অধ্যাদেশ ২০২৫’ গেজেট আকারে প্রকাশ করা হয়।
অধ্যাদেশের ২(১০) ধারায় বীর মুক্তিযোদ্ধার নতুন সংজ্ঞা উল্লেখ করা হয়েছে। নতুন সংজ্ঞায় বলা হয়েছে, যারা ১৯৭১ সালের ২৬ মার্চ থেকে ১৬ ডিসেম্বর পর্যন্ত দেশের ভেতরে গ্রামগঞ্জে যুদ্ধের প্রস্তুতি ও অভ্যন্তরীণ প্রশিক্ষণ নিয়েছেন এবং যেসব ব্যক্তি মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণের লক্ষ্যে বাংলাদেশের সীমানা অতিক্রম করে ভারতের বিভিন্ন প্রশিক্ষণ ক্যাম্পে তাদের নাম অন্তর্ভুক্ত করেছিলেন এবং বাংলাদেশের মহান স্বাধীনতা অর্জনের লক্ষ্যে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে যুদ্ধে লিপ্ত হয়ে হানাদার ও দখলদার পাকিস্তানি সশস্ত্র বাহিনী এবং তাদের এ দেশীয় সহযোগী রাজাকার, আলবদর, আলশামস, তৎকালীন মুসলিম লীগ, জামায়াতে ইসলামী, নেজামে ইসলাম এবং দালাল ও শান্তি কমিটির বিরুদ্ধে মুক্তিযুদ্ধে সক্রিয় অংশগ্রহণ করেছেন, এমন সব বেসামরিক নাগরিক, ওই সময়ে যাদের বয়স সরকার নির্ধারিত সর্বনিম্ন বয়সের মধ্যে; এবং সশস্ত্র বাহিনী, ইস্ট পাকিস্তান রাইফেলস (ইপিআর), পুলিশ বাহিনী, মুক্তি বাহিনী, প্রবাসী বাংলাদেশ সরকার (মুজিবনগর সরকার) ও ওই সরকার স্বীকৃত অন্যান্য বাহিনী, নৌ কমান্ডো, কিলো ফোর্স, আনসার সদস্য এবং বাংলাদেশের নিম্নবর্ণিত নাগরিকরাও বীর মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে অন্তর্ভুক্ত হবেন।
সংশোধিত সংজ্ঞা অনুযায়ী, হানাদার ও দখলদার পাকিস্তানি বাহিনী ও তাদের সহযোগীর হাতে নির্যাতনের শিকার নারী বা বীরাঙ্গনারাও মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে গণ্য হবেন।
এ ছাড়া মুক্তিযুদ্ধের সময় আহত বীর মুক্তিযোদ্ধাদের চিকিৎসা দেওয়া ফিল্ড হাসপাতালের সব ডাক্তার, নার্স ও চিকিৎসা সহকারীরাও থাকবেন বীর মুক্তিযোদ্ধার তালিকায়।
এদিকে মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে যুদ্ধে আহত কিংবা শরীরের এক বা একাধিক অঙ্গ ক্ষতিগ্রস্তদের স্বীকৃতি মিলবে যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে। আর যেসব বীর মুক্তিযোদ্ধা যুদ্ধ চলাকালে নিহত হয়েছেন, সংজ্ঞা অনুযায়ী তাদের বলা হবে ‘শহিদ বীর মুক্তিযোদ্ধা’।
জামুকা আইনের সংশোধনী এনে জারি করা অধ্যাদেশটির পূর্ণ গেজেট দেখুন এখানে—
সংশোধিত মুক্তিযোদ্ধা কাউন্সিল আইনে মুক্তিযুদ্ধের পাশাপাশি সহযোগী মুক্তিযোদ্ধারও সংজ্ঞা দেওয়া হয়েছে।
সংজ্ঞায় বলা হয়েছে, যারা ১৯৭১ সালের ২৬ মার্চ থেকে ১৬ ডিসেম্বর পর্যন্ত বাংলাদেশের মহান স্বাধীনতা অর্জনের লক্ষ্যে দেশের ভেতরে বা প্রবাসে অবস্থান করে বীর মুক্তিযোদ্ধাদের উদ্দীপিত করা এবং মুক্তিযুদ্ধকে বেগবান ও বাংলাদেশের স্বাধীনতা অর্জনকে ত্বরান্বিত করার প্রয়াসে সংগঠকের ভূমিকা পালন, বিশ্বজনমত গঠন, কূটনৈতিক সমর্থন অর্জন এবং মনস্তাত্ত্বিক শক্তি অর্জনের প্রেক্ষাপটে যেসব বাংলাদেশের নাগরিক প্রত্যক্ষভাবে অংশগ্রহণ ও সহযোগিতা করেছেন।
এর ব্যাখ্যায় পাঁচটি ক্যাটাগরির মানুষকে সহযোগী মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়ার কথা বলা হয়েছে। তারা হলেন—
সংজ্ঞা অনুযায়ী সহযোগী মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে যারা গণ্য হবেন তাদের স্বামী বা স্ত্রী, পুত্র, কন্যা, পিতা ও মাতা মুক্তিযুদ্ধের সহযোগী পরিবার হিসেবে স্বীকৃতি পাবে।
অধ্যাদেশে বীর মুক্তিযোদ্ধা ও সহযোগী মুক্তিযোদ্ধা— দুটি সংজ্ঞাতেই মুজিবনগর সরকারের উল্লেখ থাকা নিয়েই মূলত তৈরি হয়েছে, যা থেকে তৈরি হয়েছে বিতর্ক।
সহযোগী মুক্তিযোদ্ধার সংজ্ঞায় বলা হয়েছে, মুজিবনগর সরকারের সঙ্গে সম্পৃক্ত সব এমএনএ বা এমপিএ এবং যারা পরে গণপরিষদের সদস্য হয়েছিলেন তারা সবাই সহযোগী মুক্তিযোদ্ধার স্বীকৃতি পাবেন।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও জাতীয় চার নেতা ওই সরকারের এমএনএ বা এমপি ছিলেন বলে তারা সহযোগী মুক্তিযোদ্ধার স্বীকৃতি পাবেন এবং তাদের বীর মুক্তিযোদ্ধার স্বীকৃতি বাতিল হয়ে গেছে— এমন খবর প্রকাশ হয় গণমাধ্যমে।
এ নিয়ে তীব্র আলোচনা-সমালোচনা শুরু হয় সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমেও। অন্তর্বর্তী সরকারেরও তীব্র সমালোচনা হয়। তবে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে অনেকেই আবার বলেন, মুজিবনগর সরকারের সদস্যরা বীর মুক্তিযোদ্ধার সংজ্ঞার অন্তর্ভুক্ত হওয়ায় তাদের ওই সরকারের এমএনএ হিসেবে বিবেচিত হতে হবে না। তারা বীর মুক্তিযোদ্ধাই থাকবেন।
এ নিয়ে মঙ্গলবার রাতভর যুক্তি-পালটা যুক্তিতে সয়লাব হয়ে যায় ফেসবুক। গণমাধ্যমে প্রকাশিত খবরকে অনেকে ‘মিসইনফরমেশন’ বা ‘ডিসইনফরমেশন’ বা ‘ফেক নিউজ’ হিসেবে অভিহিত করেন। অধ্যাদেশের ২(১০) অংশটুকু ছবি তুলে তারা শেয়ার করেন।
কেউ কেউ অধ্যাদেশের গেজেটে বীর মুক্তিযোদ্ধা ও সহযোগী মুক্তিযোদ্ধার সংজ্ঞায় মুজিবনগর সরকারের সঙ্গে সংশ্লিষ্টদের অবস্থান ঘিরে সুস্পষ্ট পরিচয় সংজ্ঞায়িত না করে ধোঁয়াশা তৈরির জন্য সরকারের সমালোচনা করেন। তারা বলেন, সরকার অধ্যাদেশ সুস্পষ্ট করতে পারেনি জন্যই এই বিতর্ক তৈরি হয়েছে।
মঙ্গলবার রাত ও বুধবার সকাল থেকেই বিতর্কের মুখে সকালে ফেসবুকে একটি পোস্ট দেন সংস্কৃতিবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা মোস্তফা সরয়ার ফারুকী। অধ্যাদেশের গেজেটের ছবি শেয়ার করে তিনি গণমাধ্যমের খবরকে ‘ফেক নিউজ’ বলে দাবি করেন।
ফারুকী বলেন, ‘প্রিয় ভাই-বোনেরা, শেখ মুজিবুর রহমান, তাজউদ্দিন আহমেদসহ মুক্তিযুদ্ধের নেতাদের মুক্তিযোদ্ধা সার্টিফিকেট বাতিল— একটা ফেক নিউজ। নতুন অধ্যাদেশে মুজিবনগর সরকারের সব সদস্যকে মুক্তিযোদ্ধার স্পষ্ট স্বীকৃতি দেওয়া আছে। মুজিবনগর সরকারের কোনো সদস্যের মুক্তিযোদ্ধা সার্টিফিকেট বাতিল হয়ে গেছে— এটা যে ফেইক নিউজ, তার প্রমাণ হিসাবে অধ্যাদেশের স্ক্রিনশট দেওয়া হলো।’
পরে গণমাধ্যমের সঙ্গে কথা বলেন মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ফারুক ই আজম। তিনি বলেন, মুজিবনগর সরকারে যারা ছিলেন, তারাও মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে বিবেচিত হবে। যারা সশস্ত্রভাবে মুক্তিযুদ্ধ করেছে, যারা পরিচালনা করেছে তারা মুক্তিযোদ্ধা। তবে ওই সরকারের কর্মকর্তা, কর্মচারীরা সহযোগী মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে বিবেচিত হবেন।
এরপর দুপুরে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইংয়ের ফ্যাক্ট চেক পেজ থেকে এ সংক্রান্ত খবরকে ‘ভিত্তিহীন, মিথ্যা ও বিভ্রান্তিকর’ অভিহিত করা হয়। উপদেষ্টা ফারুক ই আজমের বক্তব্য উদ্ধৃত করে প্রেস উইং।
ফ্যাক্ট চেকে উপদেষ্টার বক্তব্যে বলা হয়, মুজিবনগর সরকারে যারা ছিলেন, তারাও মুক্তিযোদ্ধা। যারা সশস্ত্রভাবে মুক্তিযুদ্ধ করেছে, যারা পরিচালনা করেছে, তারা মুক্তিযোদ্ধা। তবে ওই সরকারের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা সহযোগী মুক্তিযোদ্ধা।
প্রেস উইং জানায়, জামুকা অধ্যাদেশ অনুযায়ী স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রসহ কূটনীতিকদের সহযোগী মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে সংজ্ঞায়িত করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন উপদেষ্টা। তিনি জানান, ১৯৭২ সালে মুক্তিযোদ্ধার যে সংজ্ঞা ছিল সেটাই বাস্তবায়ন করা হয়েছে। ২০১৮ ও ২০২২ সালে এটা পরিবর্তন করা হয়। মুক্তিযোদ্ধা ও মুক্তিযুদ্ধের সহযোগী দুইয়েরই সম্মান, মর্যাদা, সুযোগ-সুবিধা একই থাকবে।
এ বিষয়ে প্রশ্নের জবাবে উপদেষ্টা ফারুক ই আজম বিবিসি বাংলাকে বলেন, ‘শেখ মুজিবুর রহমান ও চার নেতাকে অবশ্যই মুক্তিযোদ্ধার তালিকায় রাখা হয়েছে। তারা তো থাকবেনই। তাদের কেন বাদ দেওয়া হবে? মুক্তিযুদ্ধটা তো পরিচালনা করেছেনই তারা।’
নতুন অধ্যাদেশ জারির পর না বুঝেই ভুল ব্যাখ্যা ও বিতর্ক তৈরি করা হচ্ছে বলেও মনে করেন উপদেষ্টা। বলেন, ‘ইতিহাসকে কেউ মুছতে পারে না। শেখ মুজিবুর রহমান ও জাতীয় চার নেতা মুক্তিযোদ্ধা হিসেবেই আছেন, থাকবেন। তাদের বাদ দেওয়া হয়নি। বাদ দেওয়ার কোনো কারণও নেই।’
প্রতিবেদনে আরো বলা হয়, ডিজিএফআই ও এনএসআই মূলত গোয়েন্দা কার্যক্রম পরিচালনার দায়িত্বে নিয়োজিত। আইনগতভাবে কাউকে গ্রেফতার বা আটক করার এখতিয়ার তাদের নেই। অথচ এ সংস্থাগুলোর সদস্যরা যেভাবে আটক, অপহরণ ও জিজ্ঞাসাবাদ করেছে, তা সাংবিধানিক সীমা লঙ্ঘনের শামিল। এটি দেশের আইন ব্যবস্থায় সমান্তরাল অবৈধ শক্তি গড়ে ওঠা
১৮ ঘণ্টা আগেডিবি সূত্রে জানা গেছে, আজ বৃহস্পতিবার রাজধানীর টিকাটুলি এলাকা হতে হুমায়ুন কবীর সুজনকে গ্রেফতার করে ডিবি-লালবাগ বিভাগের একটি চৌকস টিম। একইদিন মিরপুর এলাকা থেকে মেহেদী হাসানকে গ্রেফতার করে ডিবি-মিরপুর বিভাগ।
২০ ঘণ্টা আগেতিনি বলেন, গত ২৪ ঘণ্টায় সারা দেশে পুলিশ একযোগে অভিযান পরিচালনা করে ১ হাজার ৫৫১ জন আসামিকে গ্রেফতার করেছে। এ সময় একটি বিদেশি পিস্তল, একটি একনলা বন্দুক, একটি দেশীয় অস্ত্র, একটি ম্যাগাজিন, ৩ রাউন্ড গুলি, ৫টি কার্তুজ, ৩০৩টি রাইফেলের গুলির খালি খোসা, একটি কার্তুজের খালি খোসা, ২টি ধারালো ছুরি ও একটি চাইন
২০ ঘণ্টা আগেকরোনায় আক্রান্ত হয়ে দেশে গত ২৪ ঘণ্টায় একজনের মৃত্যু হয়েছে। একই সময়ে তিন জনের শরীরে করোনা শনাক্ত হয়েছে। বৃহস্পতিবার স্বাস্থ্য অধিদপ্তর থেকে পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এসব তথ্য জানানো হয়েছে।
১ দিন আগে