মায়ের সঙ্গে দেখা করতে ভারতে সজীব ওয়াজেদ

বিবিসি বাংলা
প্রকাশ: ১২ জুন ২০২৫, ১১: ৩০

বাংলাদেশের ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে দেখা করতে এখন ভারতে রয়েছেন তার ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয়। ভারতের নিরাপত্তা এজেন্সিগুলোর একাধিক সূত্র এবং ভারতে বসবাসরত বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের একাধিক শীর্ষ নেতা বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

সূত্রগুলো জানিয়েছে যে, গত শুক্রবার, ছয়ই জুন সজীব ওয়াজেদ জয় ভারতে আসেন। তার পরের দিনই ছিল কোরবানির ঈদ। মায়ের সঙ্গেই ঈদ কাটিয়েছেন তিনি। যদিও সূত্রগুলো বলছে, মায়ের সঙ্গে ঈদ পালন করার জন্যই ভারতে এসেছেন মি. ওয়াজেদ। তার এই সফর যতটা না রাজনৈতিক, তার থেকেও বেশি পারিবারিক।

তবে, জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগের দীর্ঘ শাসনের পতনের পর এই প্রথম শেখ হাসিনার সঙ্গে তার ছেলের দেখা হলো।

কবে ভারতে এলেন জয়

বাংলাদেশে কার্যত নিষিদ্ধ আওয়ামী লীগের নেতারা জানিয়েছেন, সজীব ওয়াজেদ জয় যুক্তরাষ্ট্রে থাকেন, কিন্তু তার বাংলাদেশি পাসপোর্ট ছিল। তবে বাংলাদেশের অন্তর্বর্তীকালীন সরকার ওই পাসপোর্ট বাতিল করে দেয়।

তারা আরও জানান, সজীব ওয়াজেদ জয় সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের পাসপোর্ট পেয়েছেন। পাসপোর্ট হাতে পাওয়ার কয়েক দিন আগেই তিনি যুক্তরাষ্ট্রের গ্রিন কার্ড পান। গ্রিন কার্ড পাওয়ার পর থেকেই মি. ওয়াজেদের ভারত ভ্রমণ নিয়ে আলোচনা চলছিল। ভারতের সূত্রগুলোও এমন তথ্য দিয়েছে।

ভারতীয় নিরাপত্তা এজেন্সির সূত্রগুলো জানাচ্ছে যে, প্রাথমিকভাবে মাস কয়েক পরে মি. ওয়াজেদের ভারতে আসার কথা ছিল। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ও তার ভারতে আসার ব্যাপারে সবুজ সংকেত দিয়েছিল।

তবে সেই সফর এগিয়ে এনে শুক্রবারই দিল্লিতে আসেন সজীব ওয়াজেদ জয়। নিরাপত্তা এজেন্সির সূত্রগুলো বলছে, বিমানবন্দর থেকে যথাযথ নিরাপত্তা দিয়েই তাকে পৌঁছিয়ে দেওয়া হয় শেখ হাসিনা যে গোপন ঠিকানায় আছেন, সেখানে। ওই ঠিকানায় শেখ হাসিনার বোন শেখ রেহানাও রয়েছেন বলে নিশ্চিত করেছে আওয়ামী লীগের কয়েকটি সূত্র।

ভারতীয় নিরাপত্তা এজেন্সির সূত্রগুলো এ-ও জানিয়েছে যে, ভিভিআইপিদের যেভাবে পাইলট কার সহ সামরিক পোশাক পরিহিত নিরাপত্তারক্ষীদের ঘেরাটোপে নিয়ে যাওয়া হয়, ঠিক সেভাবে সজীব ওয়াজেদ জয়কে বিমানবন্দর থেকে নেওয়া হয়নি। তবে কড়া নিরাপত্তা ছিল, আর পুরোটাই করা হয়েছে অত্যন্ত গোপনে।

আবার শেখ হাসিনার কন্যা সায়মা ওয়াজেদ পুতুলও কর্মসূত্রে দিল্লিতে থাকেন। তিনি বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ডব্লিউএইচও-র দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার আঞ্চলিক পরিচালক। কিন্তু ভাইয়ের সঙ্গে তার দেখা হয়েছে কী না, সেটা কোনো সূত্র থেকেই নিশ্চিত করা যায়নি।

পারিবারিক সফর

আওয়ামী লীগের যেসব নেতারা এখন ভারতে রয়েছেন, তাদের মধ্যে একাধিক জন বিবিসি বাংলাকে জানিয়েছেন যে, সজীব ওয়াজেদ জয়ের এই ভারত সফর মূলত পারিবারিক।

এক শীর্ষ নেতা বলছিলেন, ‘মায়ের সঙ্গে এত মাস পরে ছেলের দেখা হয়েছে। তারা ঈদ কাটিয়েছেন একসঙ্গে, গত কয়েকদিন একসঙ্গেই আছেন। নিশ্চই রাজনৈতিক আলোচনাও হয়েছে কিছু। তবে জয়ের এই সফর বেশিটাই পারিবারিক সফর।’

‘এই কদিনের মধ্যে নেত্রীর সঙ্গে কথা হয় নি। কিন্তু যখন কথা হবে, নিশ্চই আমরা জানতে পারব যে তাদের দুজনের মধ্যে কী কী বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। কিন্তু এখন তারা পারিবারিক সময় কাটাচ্ছেন,’ বলছিলেন ওই নেতা।

অন্য নেতাদের সঙ্গে কী দেখা হয়েছে জয়ের?

গত বছরের পাঁচই অগাস্ট ঢাকা থেকে বাংলাদেশ বিমান বাহিনীর বিমানে চেপে ভারতে পালিয়ে আসার পর থেকে দিল্লিতেই শেখ হাসিনার থাকার ব্যবস্থা করেছিল ভারত সরকার। প্রথম দু-চারদিন শেখ হাসিনা ও তার বোন শেখ রেহানাকে রাখা হয়েছিল দিল্লির উপকণ্ঠে গাজিয়াবাদের হিন্ডন বিমানঘাঁটির টার্মিনাল বিল্ডিংয়ে, যেটির নিয়ন্ত্রণ ও পরিচালনার ভার দেশের বিমান বাহিনীর।

কিন্তু চট করে শেখ হাসিনার তৃতীয় কোনো দেশে পাড়ি দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না, এটা স্পষ্ট হয়ে ওঠার পর ভারত সরকার তাকে হিন্ডন থেকে সরিয়ে আনে দিল্লির কোনো গোপন ঠিকানায়। পরে তাকে হয়তো দিল্লির কাছাকাছি অন্য কোনো সুরক্ষিত ডেরাতে সরিয়েও নেওয়া হয়েছে – কিন্তু এ ব্যাপারে ভারত সরকার কোনো তথ্যই প্রকাশ করেনি।

ভারতের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক শীর্ষ কর্মকর্তা, যিনি শেখ হাসিনা ভারতে আসার পর থেকেই তার প্রতিটি পদক্ষেপের ব্যাপারে অবগত, তিনি বিবিসি বাংলার সংবাদদাতা শুভজ্যোতি ঘোষকে জানিয়েছিলেন ‘মুভমেন্টস অ্যান্ড ভিজিটস– অ্যাজ লিটল অ্যাজ পসিবল’, অর্থাৎ শেখ হাসিনাকে এক জায়গা থেকে আর এক জায়গায় নিয়ে যাওয়া, কিংবা তার সঙ্গে অন্যদের দেখা করানোর ব্যবস্থা– এটাও যতটা সম্ভব এড়ানোর চেষ্টা করা হচ্ছে। তবে শেখ হাসিনার মুভমেন্টস বা ভিজিটস যে পুরোপুরি বন্ধ নয়, তার কথায় সে ইঙ্গিতও ছিল!

তবে ভারতে অবস্থানরত এক শীর্ষ আওয়ামী লীগ নেতা বিবিসি বাংলাকে জানিয়েছেন, তাদের সঙ্গে শেখ হাসিনার নিয়মিত কথা হলেও সশরীরে কারও সঙ্গে দেখা করেছেন প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী – এরকমটা তার জানা নেই। এখন যখন তার পুত্র ভারতে রয়েছেন, তার সঙ্গেও শীর্ষ নেতৃত্বের এখনও দেখা হয় নি বলেই জানা যাচ্ছে।

কতদিন ভারতে থাকবেন জয়?

আওয়ামী লীগের সূত্রগুলো জানাচ্ছে, শেখ হাসিনার কাছে এসে তার ছেলে পারিবারিক সময় কাটানোর সঙ্গেই রাজনৈতিক আলোচনা করছেন ঠিকই, তবে ভারতেই থেকে গিয়ে দলের কাজকর্মে সশরীরে যোগ দেওয়ার অভিপ্রায় নেই সজীব ওয়াজেদ জয়ের।

একটা সময়ে অবশ্য শোনা গিয়েছিল যে ভারত সফরে এসে মি. ওয়াজেদ কলকাতাতেও আসতে পারেন। কলকাতা এবং তার আশপাশের অঞ্চলেও যেহেতু আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতা, প্রাক্তন মন্ত্রী ও এমপিরা থাকছেন এবং এই অঞ্চলেই রয়েছেন বাংলাদেশ থেকে পালিয়ে আসা আওয়ামী ঘনিষ্ঠ অনেক ব্যবসায়ী, প্রাক্তন পুলিশ কর্মকর্তা, আইনজীবী প্রমুখরা, তাই কলকাতায় এসে তাদের সঙ্গে বৈঠক করতে পারেন মি. ওয়াজেদ – এরকমটা জানা যাচ্ছিল।

এখন ভারতের নিরাপত্তা এজেন্সির সূত্রগুলো বলছে যে অন্তত এবার তার কলকাতায় আসার কোনো পরিকল্পনা নেই। আবার আওয়ামী লীগের সূত্র থেকে জানা যাচ্ছে, দীর্ঘ সময় ভারতে থাকার পরিকল্পনা নেই তার। আগামী কয়েকদিনের মধ্যেই তিনি হয়ত ফিরে যাবেন।

ad
ad

খবরাখবর থেকে আরও পড়ুন

মে মাসে সড়কে নিহত ৬১৪, আহত ১ হাজার ২১০

মে মাসে সারা দেশে ৫৯৭টি সড়ক দুর্ঘটনায় ৬১৪ জন নিহত হয়েছেন। এতে আহত হয়েছে ১ হাজার ২১০ জন। বৃহস্পতিবার বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতি থেকে গণমাধ্যমে পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়।

১ দিন আগে

ফিফা র‌্যাঙ্কিংয়ে বড় লাফ বাংলাদেশের

বিশ্ব ফুটবলের নিয়ন্ত্রক সংস্থা ফিফা নারী ফুটবলের র‌্যাঙ্কিং প্রকাশ করেছে। যেখানে ৫ ধাপ এগিয়েছে বাংলাদেশের মেয়েরা। মার্চে প্রকাশিত র‌্যাঙ্কিংয়ে বাংলাদেশের অবস্থান ছিল ১৩৩। আজ (১২ জুন) আরও উন্নতি হয়ে তারা ১২৮ নম্বরে উঠেছে।

১ দিন আগে

বিচারপতির বাসভবন, সুপ্রিমকোর্ট এলাকায় সভা-সমাবেশে নিষেধাজ্ঞা

আগামী শনিবার (১৪ জুন) থেকে প্রধান বিচারপতির বাসভবন ও সুপ্রিমকোর্ট চত্বরসংলগ্ন এলাকায় সব ধরনের সভা, সমাবেশ, মিছিল, শোভাযাত্রা ও বিক্ষোভ নিষিদ্ধ করেছে ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি)। এছাড়া বিভিন্ন দাবি-দাওয়া আদায় ও প্রতিবাদ কর্মসূচির নামে যখন-তখন সড়ক অবরোধ করে যান চলাচলে বিঘ্ন না ঘটানোর জন্য সংশ্লিষ্ট সবা

১ দিন আগে

কারও নিন্দা করার আগে একটু জেনে নিন: আসিফ নজরুল

অন্তর্বর্তী সরকারের আইন উপদেষ্টা ড. আসিফ নজরুল কারও নিন্দা করার আগে একটু জেনে নিতে অনুরোধ জানিয়েছেন। এ প্রসঙ্গে উদাহরণ টেনে তিনি বলেছেন, কয়েকদিন আগে মুক্তিযোদ্ধাদের সংজ্ঞায়ন-বিষয়ক ভুল সংবাদের জেরে সমালোচনার ঝড় বয়ে যায়। এই ঝড়ের অন্যতম শিকার হয় আমার পরিবারের সদস্যরা।

১ দিন আগে