বন্দর ইজারার প্রতিবাদে যমুনা ঘেরাও কর্মসূচিতে পুলিশের বাধা, সিপিবি সম্পাদকসহ আহত অর্ধশতাধিক

প্রতিবেদক, রাজনীতি ডটকম

বিদেশি কোম্পানির কাছে চট্টগ্রাম বন্দরের লাভজনক টার্মিনাল ইজারা দেওয়ার সরকারি সিদ্ধান্তের প্রতিবাদে বাম গণতান্ত্রিক জোটের ‘যমুনা’ অভিমুখে যাত্রায় পুলিশের লাঠিচার্জে বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির (সিপিবি) সাধারণ সম্পাদক আবদুল্লাহ ক্বাফী রতনসহ অর্ধশতাধিক নেতাকর্মী আহত হয়েছেন।

আজ বৃহস্পতিবার দুপুরে রাজধানীর কাকরাইল মোড়ে এই বর্বরোচিত হামলার ঘটনা ঘটে।

জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে সমাবেশ শেষে বাম জোটের বিশাল মিছিলটি প্রধান উপদেষ্টার বাসভবন ‘যমুনা’র দিকে রওয়ানা হলে কাকরাইল মোড়ে পুলিশ ব্যারিকেড দিয়ে তাদের গতিরোধ করে। আন্দোলনকারীরা ব্যারিকেড অতিক্রমের চেষ্টা করলে পুলিশ অতর্কিত লাঠিচার্জ শুরু করে, যা মুহূর্তের মধ্যে পুরো এলাকাটিকে রণক্ষেত্রে পরিণত করে।

পুলিশের এই অ্যাকশনের তীব্র নিন্দা জানিয়ে সিপিবির প্রেসিডিয়াম সদস্য রুহিন হোসেন প্রিন্স বলেন, “আমরা শান্তিপূর্ণ মিছিল নিয়ে আসি। সেখানে যমুনার প্রতিনিধি আসতে পারতেন অথবা আমাদের প্রতিনিধি নিয়ে যাওয়ার কাজটা করতে পারতেন। কিন্তু সেটা না করে কাকড়াইল মোড় অতিক্রম করার পরে, তারা হামলা করেছে।”

পুলিশের এই হামলায় সিপিবির সাধারণ সম্পাদক আবদুল্লাহ ক্বাফী রতন ছাড়াও পার্টির কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য ও বিশিষ্ট শ্রমিক নেতা কাজী রুহুল আমিন গুরুতর আহত হয়েছেন।

রুহিন হোসেন প্রিন্স জানান, পুলিশের আঘাতে কাজী রুহুল আমিনের মাথা ফেটে গেছে এবং তাকে পাঁচটি সেলাই দিতে হয়েছে। বর্তমানে ১০-১২ জন নেতাকর্মী হাসপাতালে ভর্তি আছেন এবং সব মিলিয়ে আহতের সংখ্যা প্রায় ৫০ জন।

ঘটনার বর্ণনা দিতে গিয়ে প্রিন্স বলেন, “আমাদের পার্টির কেন্দ্রীয় কমিটির অন্যতম সদস্য, বিশিষ্ট শ্রমিক নেতা কমরেড রুহুল আমিনের রক্ত ঝরেছে। এছাড়া হসপিটালে ইতিমধ্যে প্রায় ১০-১২ জন আছেন এবং নানাভাবে আহত হয়ে বিভিন্ন জায়গায় প্রায় ৫০ এর মতো নেতাকর্মী আছেন। পুলিশের ব্যাপক লাঠিচার্জের শিকার আমরা হয়েছি।”

বাম নেতাদের অভিযোগ, বর্তমান সরকার তাদের এখতিয়ার বহির্ভূতভাবে এবং জাতীয় স্বার্থ উপেক্ষা করে চট্টগ্রাম বন্দর বিদেশিদের হাতে তুলে দিচ্ছে।

সরকারের এই সিদ্ধান্তের বিরোধিতা করে রুহিন হোসেন প্রিন্স বলেন, “আমরা অনেকদিন ধরে দেখতে পাচ্ছিলাম যে, এই সরকার তার যে এখতিয়ার, সেটা বহির্ভূতভাবে আমাদের দেশের বন্দরকে লিজ দেওয়ার কাজ তারা করতে চাইছে। সরকার এখতিয়ার বহির্ভূতভাবে ইতিমধ্যে লালদিয়া টার্মিনাল এবং পানগাঁও টার্মিনালকে ইজারা দেওয়ার কাজটা করেছে। আমরা মনে করি এটা আমাদের জাতীয় স্বার্থবিরোধী এবং এই চুক্তি গোপন রাখা হয়েছে, কোনো দরপত্র আহ্বান করা হয় নাই।” তিনি আরও যোগ করেন, “আমরা যুক্তি-তর্ক দিয়ে বলেছিলাম যে, এটা নিজস্ব অর্থায়নে তৈরি হয়েছে, লাভজনক। এখানে দুর্নীতি থাকলে সেটাকে দূর করব, অব্যবস্থাপনা থাকলে দূর করব। আমরা প্রয়োজনে মেশিনারিজ আনব বিদেশ থেকে, এক্সপার্ট আনব। কিন্তু বিদেশির কাছে ইজারা দেব না।”

প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের ভূমিকার কঠোর সমালোচনা করে সিপিবি নেতা প্রিন্স প্রশ্ন তোলেন, সরকার আসলে কাদের স্বার্থ রক্ষা করছে। ক্ষোভ প্রকাশ করে তিনি বলেন, “প্রথম দিকে ইউনুস সাহেব একবার বলছিলেন যে, বন্দর নিয়ে যারা বিরোধিতা করবে তাদের প্রতিহত করতে হবে। তার মানে আমি প্রশ্ন তুলতে চাই, উনি কি দেশের জনগণের স্বার্থের রক্ষক? নাকি আমেরিকান সাম্রাজ্যবাদসহ বিদেশি বহুজাতিক কর্পোরেশনের স্বার্থের রক্ষক? উনি সেই ভূমিকায় অবতীর্ণ হলেন বলেই আমাদের কাছে মনে হচ্ছে।”

পুলিশের এই হামলার প্রতিবাদে এবং বন্দর ইজারা বাতিলের দাবিতে শুক্রবার দেশব্যাপী বিক্ষোভ কর্মসূচি ঘোষণা করেছে বাম গণতান্ত্রিক জোট।

রুহিন হোসেন প্রিন্স হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেন, “সরকার যদি তার এই পথ থেকে পিছু না হটে, তবে আন্দোলনকারী শক্তির সাথে কথা বলে আগামী দিনে আরও বৃহত্তর কর্মসূচি নেব।”

ad
ad

মাঠের রাজনীতি থেকে আরও পড়ুন

সাময়িকভাবে মেট্রোরেল চলাচল বন্ধ

প্রত্যক্ষদর্শী ও মেট্রোর যাত্রী বিপ্লব কিশোর সরকার জানান, দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে ট্রেন চলাচল বন্ধ থাকার খবর দেওয়া হয়।

১ দিন আগে

৮ কুকুর ছানা হত্যা, অভিযুক্ত নিশি রহমান গ্রেপ্তার

১ দিন আগে

ভুটানে গেল শিশু খাদ্য, আয় লাখ টাকার বেশি

ভারতে ৫ দিন ট্রানজিট বন্ধ ছিল। ফলে চার দিন অপেক্ষায় থাকতে হয় থাইল্যান্ড হতে ট্রানজিট কার্গোয় আসা ট্রাকটি। অবশেষ পহেলা ডিসেম্বর ভারত বাংলাদেশ ট্রানজিট চুক্তির আওতায় ভারতের সড়ক পথ ও চ্যাংরাবান্ধা বন্দর ব্যবহার করে ভুটান গেল ট্রানজিট পণ্যের ট্রাক। এতে করে ব্যবসা বাণিজ্যের নতুন দ্বার উন্মোচন হয়। নতুন এ

২ দিন আগে

‘প্রতিহিংসার হাত থেকে দেশকে রক্ষা করেছেন খালেদা জিয়া’

বকুল আরও বলেন, বেগম খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে কোনো দুর্নীতি বা কেলেঙ্কারির প্রমাণ আজ পর্যন্ত কেউ দেখাতে পারেনি। ঠিক যেমন জিয়াউর রহমানের চরিত্র নিয়ে শত্রুরাও কথা বলতে পারেনি— তেমনি রাষ্ট্র পরিচালনায় বেগম খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে কোনো কলঙ্কের ইতিহাস নেই। এজন্য আমরা গর্বিত।

২ দিন আগে