ফুলশয্যার আগে দেনমোহরের টাকা নিয়ে উধাও

বিয়ের পর পরই স্বামীর কাছ থেকে দেনমোহরের টাকা বুঝে নিয়ে ফুলশয্যার আগেই উধাও হয়ে গেছেন তামান্না আক্তার ফেন্সি (৩১) নামে রাজশাহীর যুব মহিলা লীগের এক নেত্রী। এ ঘটনায় মোস্তাফিজুর রহমান (৫৮) নামে ভুক্তভোগী ওই ব্যক্তি গত ২৯ নভেম্বর নগরের চন্দ্রিমা থানায় একটি লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন। গতকাল রোববার ঘটনাটি জানাজানি হলে রাজশাহীজুড়ে চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়।

ভুক্তভোগী মোস্তাফিজুর রহমান নগরের পদ্মা আবাসিকের বাসিন্দা। তার গ্রামের বাড়ি নওগা। এদিকে, তামান্না আক্তার ফেন্সির বাড়ি নগরের মেহেরচণ্ডি পূর্বপাড়ায়। তিনি নগরের ২৬ নম্বর ওয়ার্ড যুব মহিলা লীগের নেত্রী বলে জানা গেছে। রাজশাহী সিটি করপোরেশনের পরিচ্ছন্নতা বিভাগের মশক শাখার মাঠকর্মী হিসেবে চাকরি করেন তিনি। রাজশাহী মহানগর যুব মহিলা লীগের প্রতিটি কর্মসূচিতেই সামনের সারিতে দেখা যেত তাকে। তবে তার দলীয় পদ সম্পর্কে নিশ্চিত হওয়া যায়নি।

জানা যায়, বর মোস্তাফিজুর রহমানের বয়স ৫৮ বছর। তার প্রথম স্ত্রী অসুস্থ হওয়ায় অনেকটা বাধ্য হয়েই দ্বিতীয় বিয়ের পিরিতে বসেন। মোস্তাফিজুর রহমানের সঙ্গে ‘প্রেমের সম্পর্কের’ পর বিয়ের পিঁড়িতে বসেছিলেন তামান্না আক্তার ফেন্সি। ৩ লাখ ৩ হাজার টাকা দেনমোহরের টাকা পরিশোধও করেন তিনি। কিন্তু দেনমোহরের টাকা বাড়িতে রেখে আসার কথা বলে ফুলশয্যা রেখেই পালিয়েছেন ফেন্সি। শুধু টাকা নিয়ে উধাও হয়েই থেমে থাকেননি ওই নারী। বিয়ের চারদিন পর তিনি তার স্বামীকে তালাকের নোটিশও পাঠান। এ ঘটনায় ভুক্তভোগী ব্যক্তি গত ২৯ নভেম্বর নগরের চন্দ্রিমা থানায় একটি লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন।

এ বিষয়ে রাজশাহী মহানগর যুব মহিলা লীগের সভাপতি ইসমত আরা জানান, ওয়ার্ড পর্যায়ে তাদের কোনো কমিটি নেই। তবে তামান্না আক্তার ফেন্সি ২৬ নম্বর ওয়ার্ড দেখতেন। মহানগরের কর্মসূচিতে অংশ নিতেন। তিনি বিয়ের নামে কারও সঙ্গে প্রতারণা করেছেন কি না তা জানেন না।

ভুক্তভোগী মোস্তাফিজুর রহমান রহমান জানান, তিনি বিবাহিত। তার স্ত্রী অসুস্থ। তাই তিনি দ্বিতীয় বিয়ের কথা ভাবছিলেন। ফেন্সিরও বিবাহবিচ্ছেদ হয়ে যায় ১৪ বছর আগে। ১৩ বছর বয়সী তার একটি মেয়ে আছে। বছর দুয়েক আগে পরিচয়ের পর তাকে ভাল লেগেছিল তার। এ জন্য তিনি বিয়ের সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন। কিন্তু ফেন্সি তার সঙ্গে প্রতারণা করেছেন।

মোস্তাফিজুর দাবি করেন, একবছর আগেই বিয়ের প্রস্তুতি নিয়েছিলেন তিনি। তখন ফেন্সিকে বিয়ের বাজার করতে এক লাখ টাকা দিয়েছিলেন। ওই সময় টাকা নেওয়ার পর বিয়ে করেননি ফেন্সি। এরপর বছরখানেক দুজনের কোন যোগাযোগ ছিল না। কিছুদিন আগে আবার যোগাযোগ শুরু করেন তিনি। বিয়ে করবেন ভেবে তার মনও নরম হয়ে যায়।

ফেন্সি তাকে জানান, তিনি বিয়ে করবেন যদি তাকে ৫ লাখ টাকা দেওয়া হয়। এ টাকায় ফেন্সি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের স্টেশন বাজারে দোকান করতে চান। ফেন্সির প্রস্তাবে রাজি হয়ে যান মোস্তাফিজুর। এরপর গত ২০ নভেম্বর রাতে ফেন্সি তাকে মেহেরচন্ডি এলাকার একটি কাজী অফিসে নিয়ে যান। সেখানে মোস্তাফিজুর নগদ ৩ লাখ ৩ হাজার টাকা দেনমোহরে বিয়ে করেন। বিয়ের পর শহরের একটি তিনতারকা হোটেলে ফুলশয্যার কথা ছিল তাদের।

মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, ‘বাড়িতে আমার অসুস্থ প্রথম স্ত্রী আছে। তাই ফুলশয্যাটা হোটেলেই করতে চেয়েছিলাম। এ জন্য ১০ হাজার টাকা দিয়ে একটি রুম বুক করি। কিন্তু হোটেলে ওঠার আগে ফেন্সি বলে যে, সে এতগুলো টাকা নিয়ে হোটেলে উঠবে না। টাকাটা বাড়িতে রেখে আসবে। আমি তাতে সম্মতি দিই। তাকে বাড়ি পাঠিয়ে আমি অপেক্ষা করতে থাকি। কিন্তু সে আর আসেনি। অসংখ্যবার ফোন দিলেও সে আমার ফোন ধরেনি।’

এরপর সম্প্রতি ফেন্সির পাঠানো তালাকের নোটিশ হাতে পেয়েছেন মোস্তাফিজুর রহমান। ফেন্সি এই তালাকে সই করেছেন বিয়ের চার দিন পর, ২৪ নভেম্বর। মোস্তাফিজুর দাবি করেন, এখন তিনি শুনতে পাচ্ছেন যে প্রেমের ফাঁদে ফেলে এভাবে টাকা হাতিয়ে নেওয়া ফেন্সির ব্যবসা। তিনি ইতোমধ্যে কয়েকজনের নাম জানতে পেরেছেন, যাদের সঙ্গে তার প্রেমের সম্পর্ক ছিল। মোটা অংকের টাকা হাতিয়ে নিতে শুধু তার বিষয়টিই বিয়ে পর্যন্ত গড়িয়েছে।

তিনি দাবি করেন, বিয়ের দিন দেনমোহরের ৩ লাখ ৩ হাজার টাকা ছাড়াও দুই মাসের খরচ বাবদ আরও ২৪ হাজার টাকা দিয়েছিলেন ফেন্সিকে। বিয়ের আগে বাজার করতে দিয়েছিলেন আরও ৬০ হাজার টাকা। এছাড়া কাজী অফিসের খরচ বাবদ দেন আরও ২৫ হাজার টাকা।

তিনি জানান, প্রতারণার বিষয়টি বুঝতে পেরে তিনি টাকা আদায়ে ওই নারীর এলাকার প্রভাবশালী ব্যক্তিদের জানান। তখন এলাকার লোকজন জানান, চাকরি দেওয়ার প্রলোভন দেখিয়ে এলাকার একজনের কাছ থেকে মোটা অংকের টাকা নিয়েছিলেন ফেন্সি। রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর এই টাকার জন্য চাপে পড়েন তিনি। সম্প্রতি ফেন্সি ওই টাকা ফেরত দিয়েছেন। বিয়ে করে টাকা এনে তিনি ফেরত দিয়েছেন বলে এলাকার লোকজনের ধারণা।

মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, ‘এমন প্রতারক মেয়ের সঙ্গে আমি আর সংসার করতে চাই না। আমি সরল মনে ৫৮ বছর বয়সে তাকে বিয়ে করেছিলাম। কিন্তু সে আমার সাথে প্রতারণা করেছে। আমি তার দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চাই। সে জন্য তার বিরুদ্ধে থানায় অভিযোগ করেছি।’

যোগাযোগ করা হলে যুব মহিলা লীগ নেত্রী তামান্না আক্তার ফেন্সি বলেন, ‘বিয়ের পরই আমাকে দুই কাঠা জমি দেওয়ার কথা ছিল। ওই জমিতে একটি ফ্ল্যাটবাড়ি নির্মাণ করে দেওয়ারও কথা ছিল। আর আমার ভবিষ্যতের জন্য ব্যাংকে ২০ লাখ টাকা দেওয়ার মৌখিক প্রতিশ্রুতি ছিল। এসবের কিছুই দেননি মোস্তাফিজুর। তিনি আমাকে বাড়িও নিয়ে যাবেন না। আমার মেয়ের দায়িত্ব নেবেন না। তাই তার সঙ্গে আমার সংসার করা সম্ভব হয়নি।

তিনি দাবি করেন, নিকাহনামায় নগদ মোহরানার ৩ লাখ ৩ হাজার টাকা বুঝে পেয়েছেন বলে তিনি স্বাক্ষর দিলেও বাস্তবে টাকা পাননি। কাজী অফিস থেকে বেরিয়ে মোস্তাফিজুর টাকা দেননি। এখন তিনি গালগল্প সাজিয়ে বলছেন।

ফেন্সি আরও বলেন, ‘আমি পালিয়ে যাইনি। অফিস করছি। আমি যুব মহিলা লীগকে সমর্থন করতাম। তবে কোন পদে ছিলাম না।’

জানতে চাইলে নগরের চন্দ্রিমা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মতিয়ার রহমান বলেন, ‘মোস্তাফিজুর সেসব জিনিষ দেওয়ার কথা ছিল তা তিনি দেননি বলে ফেন্সি তালাক দিয়েছেন বলে আমাদেরকে জানিয়েছেন। মোস্তাফিজুর আমাদের কাছে একটা অভিযোগ দিয়েছেন। আমি একজন এএসআইকে তদন্ত করতে দিয়েছি। তদন্ত করে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়ার মতো হলে নেওয়া হবে।’