শিক্ষার্থীদের সংবাদ সম্মেলন

রাজশাহীতে টিটিসি অধ্যক্ষের অনিয়ম-দুর্নীতির ব্যবস্থা নেয়ার দাবি

রাজশাহী ব্যুরো

নানা অনিয়ম, দুর্নীতি, ক্ষমতার অপব্যবহার, নারী সহকর্মীকে অনৈতিক প্রস্তাব ও হুমকি প্রদানসহ বিভিন্ন অভিযোগ তুলে রাজশাহী কারিগরি প্রশিক্ষণ কেন্দ্রের (টিটিসি) অধ্যক্ষ প্রকৌশলী এস.এম এমদাদুল হকের বিরুদ্ধে অবিলম্বে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানিয়েছেন শিক্ষার্থীরা।

আজ শনিবার দুপুরে রাজশাহী সাংবাদিক ইউনিয়ন (আরইউজে) মিলনায়তনে টিটিসি’র বর্তমান ও সাবেক শিক্ষার্থীরা সংবাদ সম্মেলন করে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের কাছে এ দাবি জানান।

অধ্যক্ষ এমদাদুলের অনিয়ম-দুর্নীতির ফিরিস্তি তুলে ধরে সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য উপস্থাপন করেন টিটিসির সাবেক শিক্ষার্থী মো. আল আমিন। এসময় অন্যদের মধ্যে টিটিসি’র শিক্ষার্থী ইব্রাহিম হোসেন, অমিতাভ পাল ও আব্দুল্লাহ আল নোমান প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।

লিখিত বক্তব্যে বলা হয়, অধ্যক্ষ এসএম এমদাদুল হকের নানা অবৈধ, বিতর্কিত ও বিধি বহির্ভূত কর্মকাণ্ডের কারণে প্রতিষ্ঠানটির সুনাম ও ঐতিহ্য আজ প্রশ্নের মুখে পড়েছে। প্রতারণা মামলার চার্জশীটভুক্ত আসামি এই অধ্যক্ষ প্রতিষ্ঠানটির শিক্ষক, কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের মধ্যে যাকেই প্রতিপক্ষ মনে করেন এবং যারা তার অন্যায় কাজে সমর্থন করেন না তাদেরকে বিভিন্নভাবে নিগৃহীত ও হয়রানি করেন। বিভিন্ন সময়ে অধ্যক্ষের নানা অনিয়ম, দুর্নীতিসহ সার্বিক বিষয়ে উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবহিত করা হলেও সেসব বিষয়ে ‘রহস্যজনক’ কারণে এখন পর্যন্ত কোনো পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি।

ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ সরকারের কিছু মন্ত্রী ও নেতার আস্থাভাজন হওয়ায় অধ্যক্ষ দলীয় প্রভাব বিস্তারের মাধ্যমে এসব অনিয়ম-দুর্নীতি ও অন্যায় অপকর্ম করে গেছেন উল্লেখ করে সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, ১৪টি ট্রেডে নিয়মিত শর্ট কোর্সে ভর্তিচ্ছু শিক্ষার্থীদের বিনামূল্যে ফরম বিতরণ নিয়ম থাকলেও অন্যায় ও অবৈধভাবে তিনি প্রতি ফরমের জন্য নিয়েছেন ৬০ টাকা করে। অথচ দেশের অন্যান্য টিটিসিতে এই ফরম বিনামূল্যে দেওয়া হয়।

অধ্যক্ষ নিয়ম বহির্ভূতভাবে ও স্বজনপ্রীতির মাধ্যমে কিছু অদক্ষ জনবল নিয়োগ দিয়েছেন। এতে করে প্রশিক্ষার্থীরা ভালো মানের ও যথাযথ প্রশিক্ষণ পাচ্ছেন না। কোরিয়ান ভাষা শিক্ষা কোর্সে এক হাজার টাকা ফি প্রদানের মাধ্যমে কোর্স সম্পন্ন করার সুযোগ রয়েছে। কিন্তু অবৈধভাবে আরেকটি কোর্সে বাধ্যতামূলকভাবে ভর্তি করে তাদের কাছ থেকে নিয়মবহির্ভূত অতিরিক্ত তিন হাজার পাঁচশত টাকা আদায় করা হয়। অপ্রয়োজনীয় কোর্স করতে বাধ্য করার মাধ্যমে প্রশিক্ষণার্থীদের প্রতি চরম জুলুম করছেন অধ্যক্ষ। সরকারি ভবন, আইটি ল্যাব, আসবারপত্র এবং বিদ্যুৎ ব্যবহার করে বিএমইটি এর অনুমোদন ছাড়াই ডিজিটাল মার্কেটিং ফর ফ্রিল্যান্সিং কোর্স করানো হয়। এর মাধ্যমে কোর্স ফি এর সম্পূর্ণ টাকা অধ্যক্ষ এবং সংশ্লিষ্ট ট্রেইনারের পকেটে যায়। তারা পরষ্পর যোগসাজসের মাধ্যমে এই টাকা আত্নসাত করেন। ড্রাইভিং কোর্সের জন্য বরাদ্দকৃত নতুন ট্রেনিং কার প্রশিক্ষণার্থীদের অনুশীলন করার সুযোগ না দিয়ে অধ্যক্ষ নিজেই ব্যাক্তিগত কাজে ব্যবহার করেন।

শিক্ষার্থীরা বলেন, ওয়েল্ডিং ট্রেডের প্রশিক্ষণার্থীদের ব্যবহারিক কাজের শারীরিক সুরক্ষার সরঞ্জাম ক্রয় বাবদ বরাদ্দকৃত টাকা অধ্যক্ষ আত্মসাৎ করেন। এর ফলে প্রশিক্ষণার্থীরা সব সময় অঙ্গহানির ঝুঁকি নিয়ে কাজ করেন। এতে কারিগরি শিক্ষাই দক্ষতা অর্জনের বিষয়টি চরমভাবে ব্যাহত হয়। জেনারেল প্রশিক্ষক সাবিহা সুলতানা কর্তৃক পরিচালিত ফুড ট্রেডের সকল প্রশিক্ষণের ভর্তির টাকার হিসাব সাবিহা সুলতানা ও অধ্যক্ষ নিজেদের নিয়ন্ত্রণে রাখেন এবং এই হিসাব অফিসের প্রশিক্ষণ শাখায় থাকে না।

ইলেকট্রিক্যাল ট্রেডের সিনিয়র ইন্সট্রাক্টর মো. ওবাইদুল্লাহ তার জাতীয় দক্ষতা মান উন্নয়ন পরীক্ষায় অকৃতকার্য হওয়ার পরেও আর্থিক সুবিধা দিয়ে অধ্যক্ষকে ম্যানেজ করে নিয়মবহির্ভূতভাবে কৃতকার্য হন। ইলেকট্রিক্যাল ট্রেডে অদক্ষ প্রশিক্ষকদের মাধ্যমে প্রশিক্ষণ দেওয়ার কারণে ওই ট্রেডের শিক্ষার মান অত্যন্ত দুর্বল হয়ে পড়েছে।

পিএলসি কোর্সে ইলেকট্রিক্যাল ট্রেডে অদক্ষ প্রশিক্ষকদের মাধ্যমে প্রশিক্ষণ দেওয়ার কারণে বিগত দুইটি কোর্সে একজন শিক্ষার্থীও কৃতকার্য হতে পারেননি। প্রতারণার অভিযোগে দায়েরকৃত মামলার চার্জশীটভুক্ত আসামি হলেন অধ্যক্ষ। যার মামলা নম্বর- জিআর ৭২/২১ ধারা- ৪০৬/৪২০/৪৬৮/৪৭১/১০৯ পেনাল কোড।

সংবাদ সম্মেলনে আরো বলা হয়, রাজশাহী টিটিসিতে প্রতি ব্যাচে ড্রাইভিং কোর্সে ৫০ জন করে শিক্ষার্থী ভর্তি করানো হয়। এরমধ্যে লটারির মাধ্যমে ৩০ জন এবং ২০ জন অধ্যক্ষের রেফারেন্সে ভর্তি হয়। এভাবে অন্য কিছু ট্রেডেও অনিয়ম করা হয়। ফলে গরিব শিক্ষার্থীরা এখানে ভর্তির সুযোগ থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। বিভিন্ন অনিয়ম ও দুর্নীতির মাধ্যমে অধ্যক্ষ বিপুল সম্পদের মালিক হয়েছেন বলেও অভিযোগ করেন শিক্ষার্থীরা।

সংবাদ সম্মেলনে আরো বলা হয়, অধ্যক্ষ একই প্রতিষ্ঠানের নারী চীফ ইনস্ট্রাক্টর (জেনারেল ইলেকট্রনিক্স) সাঈদা মমতাজ নাহরীনা ইকবালকে আপত্তিকর প্রস্তাব দিয়েছেন। অধ্যক্ষের আপত্তিকর ও অনৈতিক প্রস্তাবে রাজি না হওয়ায় বিভিন্ন অজুহাতে ওই নারী চীফ ইনস্ট্রাক্টরকে হয়রানি করা হচ্ছে এবং হুমকি দেওয়া হয়েছে। এ নিয়ে বিস্তারিত তথ্য তুলে ধরে জনশক্তি, কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরোর মহাপরিচালকের (ডিজি) বরাবর গত ২৮ সেপ্টেম্বর লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন ভুক্তভোগী ওই নারী কর্মকর্তা। কিন্তু এক মাস অতিবাহিত হলেও মহাপরিচালক এখন পর্যন্ত এ ব্যাপারে কোনও ধরণের পদক্ষেপ নেননি। উল্টো অভিযুক্ত অধ্যক্ষ ভুক্তভোগী নারীর বিরুদ্ধে গত ৯ অক্টোবর তদন্ত কমিটি গঠন করেছেন।

এ ব্যাপারে জানতে অভিযুক্ত অধ্যক্ষ প্রকৌশলী এস.এম এমদাদুল হকের মুঠোফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তিনি রিসিভ করেননি। ফলে তার বক্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি।

ad
ad

মাঠের রাজনীতি থেকে আরও পড়ুন

ইউনিয়ন বিএনপির সম্পাদক হলেন তথ্য উপদেষ্টার বাবা

লক্ষ্মীপুরের রামগঞ্জ উপজেলার ইছাপুর ইউনিয়ন বিএনপির সাধারণ সম্পাদক পদে নির্বাচিত হয়েছেন অন্তর্বর্তী সরকারের তথ্য উপদেষ্টা মাহফুজ আলমের বাবা আজিজুর রহমান বাচ্চু।

১৬ ঘণ্টা আগে

আউশ আবাদ: কম খরচে ভালো ফলনে নান্দাইলের কৃষক খুশি

এ বছর নান্দাইলে আউশ ধানের আবাদ লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে কম হয়েছে। এবার ১ হাজার ২৫০ হেক্টর জমির লক্ষ্যমাত্রার বিপরীতে আবাদ হয়েছে মাত্র ৮৫০ হেক্টর জমিতে। তবে ফলন ভালো হয়েছে, প্রতি হেক্টরে গড় ফলন ২.৮২ মেট্রিক টন।

১৮ ঘণ্টা আগে

এক মোটরসাইকেলে ৪ জন, প্রাইভেটকারের ধাক্কায় নিহত ৩

২১ ঘণ্টা আগে

বিয়ের প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করায় কিশোরীকে কুপিয়ে জখম, গ্রেফতার ৩

১ দিন আগে