নাগরিক প্রত্যাশা কতটা পূরণ করতে পারল এনসিপি

নাজমুল ইসলাম হৃদয়
সজীব রহমান
আপডেট : ২৫ অক্টোবর ২০২৫, ২১: ০০
জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি)

জুলাই অভ্যুত্থানের গর্ভ থেকে জন্ম নেয় রাজনৈতিক দল জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি)। শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগের ১৬ বছরের শাসনের অবসান ঘটিয়েছিল যে রক্তক্ষয়ী আন্দোলন, তার নেতৃত্বে থাকা তরুণরাই গড়ে তুলেছেন এই দল। রাষ্ট্র কাঠামোর সংস্কার আর নতুন রাজনৈতিক বন্দোবস্তের স্বপ্ন দেখানো সেই দলটি যাত্রা শুরুর আট মাস পূরণ করতে যাচ্ছে একদিন পরেই। এই আট মাসে বিভিন্ন মহলের মানুষের প্রত্যাশা কতটা পূরণ করতে পারল তরুণদের এই দলটি?

এনসিপির সমর্থক-শুভানুধ্যায়ীসহ সাধারণ মানুষ বলছেন, জুলাইয়ে আন্দোলনের সময় এই দলের নেতৃত্বকে জনগণ দেখেছিল রাস্তায়, দমন-পীড়নের মুখেও অবিচল। এ কারণে সাধারণ মানুষের কাছে তাদের আলাদা এক ধরনের বিশ্বাসযোগ্যতা তৈরি হয়। দশকের পর দশক চলে আসা রাজনৈতিক সংস্কৃতি নিয়ে মানুষের মধ্যে এক ধরনের অতৃপ্তি-হতাশা ছিল, তরুণ নেতৃত্বকে সেখানে তারা ‘বিশ্বাসযোগ্য বিকল্প’ হিসেবে ভাবতে শুরু করে। আন্দোলনের সময় এনসিপির নেতৃত্বে থাকা ব্যক্তিরা যে ফ্যাসিবাদবিরোধী অবস্থান, গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ ও বৈষম্যহীন রাষ্ট্র গঠনের কথা বলেছিলেন, তা জনগণের মধ্যে আস্থার পরিবেশ তৈরি করে।

বিশেষজ্ঞরাও বলছেন, দীর্ঘদিনের ক্ষমতাকেন্দ্রিক ও পরিবারতান্ত্রিক রাজনীতির প্রতি জনগণের যে অনাস্থা তৈরি হয়েছিল, তা এই দলের প্রতি প্রত্যাশাকে আরও উঁচু করে তোলে। সাধারণ মানুষের আশা ছিল, এই দল পুরনো রাজনৈতিক দলগুলোর মতো ক্ষমতার রাজনীতি না করে বরং একটি নতুন ও অংশগ্রহণমূলক রাজনৈতিক সংস্কৃতি গড়ে তুলবে। মানুষের প্রত্যাশা ছিল, রাজনৈতিক সংস্কৃতিতে জবাবদিহিতা, স্বচ্ছতা এনে এই দল রাষ্ট্রের রাজনৈতিক কাঠামোকে দলীয় প্রভাবমুক্ত করে জনগণের হাতে ক্ষমতা ফিরিয়ে দেওয়ার মতো পরিবর্তনের সূচনা ঘটাতে পারে।

সার্বিকভাবে জুলাই অভ্যুত্থানের পর দেশের রাজনীতিতে যে বিকল্প নেতৃত্বের চাহিদা তৈরি হয়েছিল, সেই শূন্যস্থানে এনসিপিকেই কল্পনা করেছিল অনেক মানুষ। এমন পরিস্থিতিতে এনসিপিকে ঘিরে সাধারণ মানুষের মধ্যে শুধু রাজনৈতিক আগ্রহই নয়, বরং বাস্তব পরিবর্তনের আকাঙ্ক্ষা তৈরি হয়েছিল, যা সাম্প্রতিক সময়ে কোনো নতুন রাজনৈতিক দলকে ঘিরে তেমনভাবে দেখা যায়নি।

এনসিপির শুভাকাঙ্ক্ষীসহ রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, তাদের প্রতি মানুষের যে প্রত্যাশা ছিল, তা অনেকাংশেই পূরণ করতে পারেনি এনসিপি। সাংগঠনিকভাবে বিস্তার লাভ করলেও জনআকাঙ্ক্ষার অনেক কিছুই পূরণ করা সম্ভব হয়নি দলটির পক্ষে।

রাজনৈতিক বিশ্লেষক এবং জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের সরকার ও রাজনীতি বিভাগের সাবেক অধ্যাপক ড. আবদুল লতিফ মাসুম রাজনীতি ডটকমকে বলেন, “জাতীয় নাগরিক পার্টি জনগণের প্রত্যাশা পূরণে ব্যর্থ হয়েছে। তারা ‘নাগরিক’ হয়ে উঠতে পারেনি, এখনো ‘সমন্বয়ক’ বলয়ে রয়ে গেছে। জনগণ তাদের কাছ থেকে পরিপক্বতা, সামষ্টিক উন্নয়নচিন্তা ও একটি সুস্থ রাজনৈতিক সংস্কৃতি আশা করেছিল। কিন্তু সেসব পূরণে তারা ব্যর্থ।”

এর পেছনে কেবল এনসিপির নিজেদের ব্যর্থতা নয়, বরং তাদের ঘিরে নানা ধরনের নেতিবাচক প্রচারণার পাশাপাশি প্রত্যাশার পারদ বাস্তবতাকে ছাড়িয়ে যাওয়াকেও কারণ হিসেবে মনে করছেন খোদ এনসিপির নেতারাও। তবে নিজেদের রাজনীতি ও জনঘনিষ্ঠ কর্মসূচি নিয়ে মানুষের কাছে পৌঁছানোর বিষয়েও তারা বদ্ধপরিকর।

এনসিপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম আহ্বায়ক সামান্তা শারমিন রাজনীতি ডটকমকে বলেন, ‘এনসিপির আত্মপ্রকাশের প্রায় সাত-আট মাস হয়ে গেছে। যে নতুন রাজনৈতিক স্বপ্ন আমরা দেখেছিলাম, এই তুলনামূলক অল্প সময়েই সেটিকে বাস্তবে রূপ দিতে আমরা নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছি। আমরা বিশ্বাস করি, মানুষের ম্যান্ডেট ও প্রত্যাশাই একটি রাজনৈতিক সংগঠনের প্রাথমিক দায়বদ্ধতা হওয়া উচিত। আমরা সেই পথেই অগ্রসর হচ্ছি।’

যে প্রেক্ষাপটে জন্ম এনসিপির

সরকারি চাকরিতে কোটাব্যবস্থার যৌক্তিক পুনর্বিন্যাসের দাবিতে গত বছরের জুন থেকেই রাজপথে আন্দোলনে নামেন শিক্ষার্থীসহ চাকরিপ্রার্থীরা। রাজধানী ঢাকা থেকে শুরু করে ক্রমেই সে আন্দোলন ছড়িয়ে পড়ে সারা দেশে। সরকারি দলসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর দমন-পীড়নে সে আন্দোলনের ব্যপ্তি ক্রমেই বাড়তে থাকে। একের পর এক প্রাণহানিতে একপর্যায়ে সে আন্দোলন রূপ নেয় সরকার পতনের এক দফা আন্দোলনে।

কারফিউ জারি, ইন্টারনেট সংযোগ বন্ধ করে দেওয়ার মতো নানা ব্যবস্থা নিয়েও আন্দোলন দমাতে পারেনি সরকার। শেষ পর্যন্ত গত বছরের ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার আন্দোলনের মুখে পতন ঘটে আওয়ামী লীগ সরকারের। ভারতে পালিয়ে যেতে বাধ্য হন শেখ হাসিনা।

সরকার পতনের দুই দিন পর ৮ আগস্ট অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে গঠন করা হয় অন্তর্বর্তী সরকার। জুলাই আন্দোলনের নেতৃত্বে ছিলেন যারা, সেই ছাত্রদের মধ্যে দুজন— নাহিদ ইসলাম ও আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া— স্থান পান সে সরকারে। অভ্যুত্থানের নেতৃত্বস্থানীয় অন্যরা তখনো বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত।

জুলাই-পরবর্তী সেই সময়ে যখন স্বৈরতন্ত্র আর ফ্যাসিবাদের বিপরীতে গণতান্ত্রিক রূপান্তরের রাজনীতির প্রত্যাশা জনগণের ভেতর থেকে বারবার প্রকাশিত হচ্ছিল, সেই সময়েই জুলাই আন্দোলনে নেতৃত্বস্থানীয়দের নিজেদের একটি রাজনৈতিক দল গঠনের আকাঙ্ক্ষার কথা উঠে আসে মানুষের মধ্য থেকে।

জুলাই আন্দোলনের নেতারাও রাজনৈতিক দল গঠনের প্রক্রিয়ার মধ্যে রয়েছেন বলে জানান। জাতীয় নাগরিক কমিটি নামে একটি নাগরিক প্ল্যাটফর্মও গড়ে তোলেন তারা। পরে গত ফেব্রুয়ারির মাঝামাঝিতে সরকার থেকে সরে দাঁড়ান নাহিদ ইসলাম। তাকে নেতৃত্বে রেখে ফেব্রুয়ারির শেষ দিনে আনুষ্ঠানিকভাবে আত্মপ্রকাশ করে এনসিপি।

গত বুধবার রংপুর মহানগর এনসিপির উদ্যোগে সদর উপজেলার সদ্যপুস্কুনি ইউনিয়নের ২ নম্বর ওয়ার্ড কেশবপুর পুর্বপাড়া উঠান বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। ছবি: এনসিপির ফেসবুক পেজ থেকে
গত বুধবার রংপুর মহানগর এনসিপির উদ্যোগে সদর উপজেলার সদ্যপুস্কুনি ইউনিয়নের ২ নম্বর ওয়ার্ড কেশবপুর পুর্বপাড়া উঠান বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। ছবি: এনসিপির ফেসবুক পেজ থেকে

জনআকাঙ্ক্ষা পূরণে এনসিপির ব্যর্থতা কোথায়

দেশের রাজনৈতিক সংস্কৃতিতে গুণগত পরিবর্তন ও গণতান্ত্রিক রূপান্তর প্রশ্নে এনসিপি শুরু থেকেই একটি নতুন ধারার রাজনীতি প্রতিষ্ঠার অঙ্গীকার করেছে। সংবিধান পুনর্লিখন থেকে শুরু করে অর্থ ও পেশীশক্তির প্রভাবমুক্ত রাজনীতির আহ্বান জানিয়েছে। ‘সেকেন্ড রিপাবলিক’ ধারণার মাধ্যমে একটি আধুনিক গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রকাঠামোর প্রস্তাব তুলে ধরেছে এনসিপি।

এ ধরনের ব্যাপকভিত্তিক পরিবর্তন ও সংস্কারের জন্য যে দলীয় কার্যক্রম প্রয়োজন, তার খুব সামান্যই দেখা গেছে এনসিপিতে। দলটির শুভানুধ্যায়ীরাই বলছেন, আট মাস একটি নবগঠিত রাজনৈতিক দলকে বিচারের জন্য খুব বেশি সময় না হলেও এর মধ্যে দলীয় ঐক্য ও সাংগঠনিক কাঠামোর দিক থেকে এনসিপি প্রত্যাশা পূরণে খুব বেশি সক্ষম হয়নি। জনগণ যেখানে বাস্তব পরিবর্তনের নেতৃত্ব চেয়েছিল, সেখানে এনসিপির কার্যক্রম এখনো বাণী ও পরিকল্পনায় সীমাবদ্ধ।

দুর্নীতি, অবৈধ অর্থপ্রবাহ, চাঁদাবাজির মতো দীর্ঘস্থায়ী সামাজিক ব্যাধির বিরুদ্ধে এনসিপি বহুবার আওয়াজ তুলেছে। কিন্তু বিভিন্ন সময়ে এনসিপিরই বিভিন্ন নেতাদের বিরুদ্ধে উঠেছে চাঁদাবাজিসহ আর্থিক দুর্নীতি ও রাজনৈতিক প্রভাব কাজে লাগিয়ে অনৈতিক সুবিধা গ্রহণের অভিযোগ। ফলে এনসিপির দুর্নীতিবিরোধী অবস্থান কিছুটা হলেও হোঁচট খায়।

নারীর প্রতি সহিংসতা, সামাজিক নিপীড়ন, ধর্মের নামে উগ্রবাদ চর্চা, প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর সুরক্ষার মতো বিভিন্ন ইস্যুতেও এনসিপির ভূমিকা নিয়ে অসন্তোষ রয়েছে অনেকের। এসব ইস্যুতে এনসিপি বিভিন্ন সময় বিবৃতি দিলেও তা কখনো যথাসময়ে না হওয়া, আবার কখনো সেসব বিবৃতিতে সুস্পষ্ট কোনো অবস্থান না নেওয়ার অভিযোগ রয়েছে এনসিপির বিরুদ্ধে। এমনকি তাদের নেতাদের মধ্যে ঐকবদ্ধ অবস্থান তো দূরের কথা, কখনো কখনো পরস্পরবিরোধী অবস্থানও দেখা গেছে এসব ইস্যুতে।

এদিকে যে তরুণদের প্রতিনিধি হয়ে এনসিপির যাত্রা শুরু, সেই তরুণদের জন্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ইস্যু শিক্ষা ও বেকারত্ব নিয়েও শক্তিশালী কর্মসূচি নেই এনসিপির। কোটা আন্দোলন ও ছাত্র অধিকার সংক্রান্ত বিভিন্ন ঘটনায় তারা ঐক্যের আহ্বান জানিয়েছে। তবে দেশের ক্রমবর্ধমান বেকারত্ব, তরুণদের দক্ষতা উন্নয়নের সীমিত সুযোগ ও শিক্ষার মানোন্নয়নে দলটির কাছে যেখানে বাস্তবসম্মত রোডম্যাপ প্রত্যাশিত ছিল, সেখানে তাদের প্রকাশিত রোডম্যাপকে অনেকেই অভিহিত করেছেন আবেগনির্ভর আহ্বান ও প্রাথমিক পরিকল্পনায় সীমাবদ্ধ হিসেবে। ফলে শিক্ষা ও কর্মসংস্থান প্রশ্নেও তরুণদের আস্থার প্রতীক হতে পারেনি এনসিপি।

সার্বিকভাবে এনসিপির কার্যক্রমে সাধারণ মানুষের অসন্তুষ্টির প্রতিফলন উঠে এসেছে বেসরকারি সংস্থা ইনোভিশন কনসালটিংয়ের জুলাই থেকে সেপ্টেম্বরে পরিচালিত এক জরিপেও। জনগণের নির্বাচন ভাবনা শীর্ষক জরিপে অংশগ্রহণকারীদের ১৭ শতাংশেরও বেশি মানুষ জানিয়েছেন, তারা এনসিপির কার্যক্রমে একেবারেই সন্তুষ্ট নন। আরও প্রায় সাড়ে ৯ শতাংশ উত্তরদাতা জানিয়েছেন, তারা এ দলের কার্যক্রমে সামান্যই সন্তুষ্ট। মাত্র ৯ শতাংশ উত্তরদাতা এনসিপির কার্যক্রমে সন্তুষ্টির কথা জানিয়েছেন ওই জরিপে।

রাজনৈতিক বৈরিতার মুখে এনসিপি

গঠনের পর থেকেই এনসিপি যে রাজনৈতিক পথ বেছে নিয়েছিল, তা ছিল মূলত জুলাই আন্দোলনের ধারাবাহিকতা রক্ষার অঙ্গীকার। এ অবস্থানের কারণে শুরুতেই বিএনপি, জামায়াত, গণঅধিকার পরিষদ ও এবি পার্টির মতো রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে তাদের সম্পর্ক ঘিরে ব্যাপক রাজনৈতিক আলোচনা তৈরি হয়। জুলাই আন্দোলনের সময় এ দলগুলোর অবস্থান সরাসরি সরকারবিরোধী অবস্থানে থাকায় প্রাথমিকভাবে এনসিপির সঙ্গে সম্পর্ক তুলনামূলকভাবে ইতিবাচক ছিল। তবে সময়ের সঙ্গে সঙ্গে এই সম্পর্কের ভিত কেঁপে ওঠে মূলত আদর্শগত অবস্থান, রাজনৈতিক কৌশল ও নেতৃত্বের প্রশ্নে।

জুলাই অভ্যুত্থানের পর থেকেই বিএনপির নির্বাচন দাবির বিপরীতে এনসিপির অবস্থান ছিল রাষ্ট্রকাঠামোর সংস্কারের পক্ষে। এ নিয়ে দুই দলের মধ্যে নানা সময় বাগ্‌যুদ্ধ হয়েছে। জুলাই সনদ প্রণয়নে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের বৈঠকগুলোতেও সংবিধান সংস্কারের বিভিন্ন প্রস্তাবনায় দুই দলের বিপরীতমুখী অবস্থান দেখা গেছে। আবার তৃণমূলে গিয়ে এনসিপিকে বিএনপির তীব্র বিরোধিতার মুখে পড়তে হয়েছে। দেশের অনেক জেলা থেকে বিএনপি-এনসিপি সংঘর্ষের খবরও এসেছে।

এদিকে নির্বাচন, সংবিধানে সংশোধনীসহ সংস্কারের নানা ইস্যুতে জামায়াতে ইসলামীর সঙ্গে এনসিপির অবস্থানের মিল পাওয়া গেছে। ফলে শুরুর দিকে এই দুই দলের সম্পর্ক ছিল সমমনা মিত্র দলের মতোই। পরের দিকে অবশ্য নানা ইস্যুতে মতপার্থক্য দেখা দিলে আর দুই দলের সম্পর্কে বৈরিতা এসেছে। সবশেষ সংখ্যানুপাতিক (পিআর) পদ্ধতিতে নির্বাচন নিয়ে জামায়াতের আন্দোলন প্রসঙ্গে এনসিপির আহ্বায়ক নাহিদ ইসলামের বক্তব্য ও জামায়াতের সেক্রেটারি জেনারেলের জবাব দুই দলের মধ্যে উত্তাপ ছড়িয়েছে।

অন্য রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে গণঅধিকার পরিষদ ও এবি পার্টির সঙ্গে এনসিপির সুসম্পর্ক ছিল সর্বজনবিদিত। এর মধ্যে গণঅধিকার পরিষদ ও এনসিপির একীভূত হয়ে যাওয়া নিয়েও আলোচনা হয়েছে। নেতৃত্ব ও সাংগঠনিক কাঠামো নিয়ে জটিলতা প্রশ্নে সে আলোচনা ভেস্তে গেছে।

জাতীয় নির্বাচন সামনে রেখে অবশ্য রাজনৈতিক বৈরিতা স্তিমিত হয়ে আসার পথে। রাজনৈতিক দলগুলোর বিভিন্ন সূত্রের বরাতে গণমাধ্যমগুলোর খবর, জামায়াতের সঙ্গে এনসিপির নির্বাচনি জোট অনেকটাই চূড়ান্ত ছিল। তাদের সঙ্গে এবি পার্টিরও যুক্ত হওয়ার কথা ছিল। সবশেষ পাঁচ দাবিতে ইসলামী দলগুলোর যুগপৎ কর্মসূচি ঘিরে জামায়াতের সঙ্গে এনসিপির ভিন্নমত দেখা দেয়। এরপর এখন বিএনপির সঙ্গে এনসিপির নির্বাচনি জোট গঠনের আলোচনা এগিয়ে চলেছে। আবার এই দুই দলের বাইরে অন্য দলগুলোকে নিয়ে এনসিপি নিজেই নির্বাচনি জোট গঠন করতে পারে— এমন আলোচনাও চলমান।

এনসিপির যুব উইং জাতীয় যুবশক্তি আত্মপ্রকাশ করে গত ১৬ মে। ছবি: এনসিপির ফেসবুক পেজ থেকে
এনসিপির যুব উইং জাতীয় যুবশক্তি আত্মপ্রকাশ করে গত ১৬ মে। ছবি: এনসিপির ফেসবুক পেজ থেকে

এনসিপির সঙ্গে সম্পর্ক প্রসঙ্গে জানতে চাইলে বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব সৈয়দ এমরান সালেহ প্রিন্স রাজনীতি ডটকমকে বলেন, ‘গণঅভ্যুত্থানে নেতৃত্ব দানকারী নেতাদের নিয়েই এনসিপি গঠিত। স্বাভাবিকভাবেই তাদের প্রতি আমাদের একটি সফট কর্নার রয়েছে। অন্যান্য রাজনৈতিক দলের মতো এনসিপির সঙ্গেও আমাদের ভালো সম্পর্ক ও যোগাযোগ আছে।’

ভবিষ্যতে এনসিপি ও বিএনপির মধ্যে সম্পর্ক কোন পর্যায়ে যেতে পারে— এমন প্রশ্নের জবাবে বিএনপির এই যুগ্ম মহাসচিব বলেন, ‘বিভিন্ন রাজনৈতিক বিষয়ে আমাদের মধ্যে আলাপ ও মতবিনিময় হয়। তবে আমরা দুটি রাজনৈতিক দল, প্রত্যেকেরই নিজস্ব আদর্শ ও কর্মপদ্ধতি রয়েছে। কাজ করতে করতে সম্পর্ক কোন দিকে যাবে, সেটা এখনই নির্দিষ্ট করে বলা কঠিন।’

কেন ব্যর্থ এনসিপি— কী বলছেন শুভাকাঙ্ক্ষীরা

বেসরকারি চাকরিজীবী আশফাকুজ্জামান প্রবাল শুরু থেকেই অনুসরণ করে আসছেন এনসিপিকে। তরুণদের নিয়ে গড়া দলটির কাছে তার প্রত্যাশার পারদও ছিল চড়া। রাজনীতি ডটকমের সঙ্গে আলাপচারিতায় তিনি জানান, তার সে প্রত্যাশার হয়তো ৩০ শতাংশ পূরণ করেছে এনসিপি।

শিক্ষার্থী-চাকরিজীবীসহ বিভিন্ন শ্রেণিপেশার কয়েক ডজন মানুষের সঙ্গে কথা বলেছে রাজনীতি ডটকম। এসব মানুষের বক্তব্যেও উঠে এসেছে, এনসিপি হয়তো সাধারণ মানুষের প্রত্যাশার অর্ধেক পূরণ করতে পেরেছে। এর পেছনে এনসিপির বিভিন্ন ধরনের রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত এবং নেতৃত্ব ও সাংগঠনিক ব্যর্থতার পাশাপাশি দলটিকে ঘিরে নানামুখী নেতিবাচক প্রচারণাকেও দায়ী করছেন অনেকে। আবার একটি দলকে বিচার করার জন্য আট মাস সময় পর্যাপ্ত নয় বলেও অভিমত অনেকের।

সাধারণ মানুষের ব্যাপক সমর্থন নিয়েও কেন এনসিপি জনপ্রত্যাশা পূরণ করতে পারছে না — এ প্রশ্নের জবাবে আশফাকুজ্জামান বলেন, “আমার প্রত্যাশা ছিল তরুণদের হাত ধরে ‘ভাইব্র্যান্ট অ্যান্ড ডাইনামিক’ কিছু একটা হবে। সেটি হয়নি। সাধারণ মানুষের জন্য যা কিছু করা প্রয়োজন ছিল সে অনুযায়ী কর্মপরিকল্পনা না সাজিয়ে তারা কেবল জাতীয় রাজনীতিতে মনোযোগী হয়েছে। সংবিধান, নির্বাচন সবকিছুতেই আমাদের সংস্কার প্রয়োজন, এটা ঠিক। কিন্তু সাধারণ মানুষের জন্য, সাধারণ মানুষের সমস্যা নিয়ে সরাসরি কাজ করাও জরুরি, যেটা অন্য দলগুলো করে না। এনসিপি করলে হয়তো পার্থক্যটা তৈরি হতো।’

আশফাকুজ্জামান প্রবাল আরও বলেন, ‘এনসিপি শুরুর দিকে মানুষের মতামত-পরামর্শ সংগ্রহের দিকে মনোযোগ দিলেও সেগুলো নিয়ে কাজ করার কোনো নজির দেখাতে পারেনি। জনতার জন্য জনতা হয়ে কাজ করার ধারা থেকে তারা ক্রমেই রাজনীতির ধারায় প্রবাহিত হয়ে গেছে। শুরুর দিকে মনে হয়েছে, তাদের জন্য রাজনীতিটা বাই-প্রোডাক্ট এবং এটাই তাদের অন্য দল-মত-আদর্শ থেকে আলাদা করবে। কিন্তু সময়ের সঙ্গে সঙ্গে তারা পথ হারিয়ে রাজনীতিটাকেই মুখ্য করে তুলেছে।’

এনসিপির একজন শুভাকাঙ্ক্ষী রবি হাসান বিজ্ঞাপনী সংস্থা আর্টোলজির প্রধান নির্বাহী। রাজনীতি ডটকমের সঙ্গে আলাপে তিনি জানান, এনসিপির নেতৃত্বকে জুলাই আন্দোলনের সময় থেকেই অনুসরণ করছেন। এনসিপি যাত্রা শুরু করার পর থেকে দলের কার্যক্রমও অনুসরণ করে আসছেন। তার অভিমত, এনসিপির নিজেদের নানা সীমাবদ্ধতার পাশাপাশি তাদের নিয়ে সব মহলে এক ধরনের নেতিবাচক প্রচারণাও এনসিপির কার্যক্রমকে বাধাগ্রস্ত করেছে।

রবি হাসান বলেন, ‘জুলাই আন্দোলনের অন্যতম চালিকাশক্তি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যাওয়া নেতিবাচক প্রভাব ফেলেছে। জুলাই অভ্যুত্থানকে বিবেচনায় নিলে এই অভ্যুত্থানের বিজয়ের বর্ষপূর্তিতে জুলাই ঘোষণা কিংবা সদ্য হয়ে যাওয়া জুলাই সনদ সইয়ের অনুষ্ঠানে তো এনসিপিই সবচেয়ে সব অংশীদার। ঐকমত্য কমিশনে আলোচনায় যেসব সংস্কারের সুপারিশ চূড়ান্ত হয়েছে, তার অনেকগুলোই এনসিপির প্রস্তাব থেকে উঠে আসা। অথচ জুলাই ঘোষণার অনুষ্ঠানে তাদের অংশগ্রহণ আর সবার মতো সাধারণ, জুলাই সনদ সইয়ের অনুষ্ঠানে তো তারা ছিলই না।’

রবি হাসান আরও বলেন, ‘এসবের বাইরে কিন্তু এনসিপিকে নিয়ে প্রায় সব মহলেরই ব্যাপক নেতিবাচক প্রচারণা ছিল। প্রতিষ্ঠিত রাজনৈতিক দলগুলো এনসিপির তরুণ নেতাদের নিয়ে তীব্র সমালোচনা করেছেন, অনেকে হাসি-ঠাট্টা করেছেন। এসব দলের সারা দেশের নেতাকর্মীরা কুৎসা ছড়িয়েছেন। হ্যাঁ, এনসিপির কিছু নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে নানা ধরনের অভিযোগ এসেছে। কিন্তু সেগুলোকেই অনলাইনে ব্যাপক আকারে ছড়ানো হয়েছে। এনসিপির বিরুদ্ধে কিছু হলে সেগুলো যেন গণমাধ্যমেও বাড়তি গুরুত্ব পেয়েছে। এগুলোর প্রভাব অস্বীকার করার মতো নয়।’

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক শিক্ষার্থী ও বর্তমানে একটি রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকের কর্মকর্তাও এনসিপির কার্যক্রমে প্রত্যাশা পূরণ না হওয়ার কথা জানান। এ ক্ষেত্রে প্রত্যাশার পারদ একটু বেশি উঁচু ছিল বলেও মনে করেন তিনি। নাম প্রকাশ করতে রাজি না হওয়া ওই ব্যাংকার বলেন, ‘এনসিপি তো আমাদের মধ্য থেকেই উঠে আসা একটি রাজনৈতিক দল। হ্যাঁ, তারা তরুণ। তারা আমাদের অনেক আশার বাণী শুনিয়েছে। নতুন বন্দোবস্তের কথা বলেছে। তারপরও মনে হয় আমাদের প্রত্যাশার পারদটা একটু বেশি উঁচুতে ছিল। সেখানে যেমন সামঞ্জস্য প্রয়োজন, তেমনি আট মাসে একটি দল আর কতটুকুই বা করতে পারে! রাজনীতি তো দুয়েক বছরের বিষয় না। ভুলত্রুটি থেকে শিক্ষা নিতে পারলে নিশ্চয় এনসিপি সামনের দিকে এগিয়ে যাবে।’

গত ২৮ ফেব্রুয়ারি আত্মপ্রকাশের দিন জাতীয় নাগরিক পার্টির ঘোষণাপত্র পাঠ করছেন আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম, এ সময় মঞ্চে উপস্থিত পার্টির নেতারা। ছবি: ভিডিও থেকে
গত ২৮ ফেব্রুয়ারি আত্মপ্রকাশের দিন জাতীয় নাগরিক পার্টির ঘোষণাপত্র পাঠ করছেন আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম, এ সময় মঞ্চে উপস্থিত পার্টির নেতারা। ছবি: ভিডিও থেকে

কী বলছেন বিশ্লেষকরা

নানা ইস্যুতে বক্তব্য, প্রতিশ্রুতি ও আহ্বান জানিয়ে নতুন রাজনীতির ভাবনা জাগালেও কাজে ব্যর্থ— এনসিপিকে নিয়ে সার্বিকভাবে এমন মূল্যায়ই করছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা। মাঠপর্যায়ে ধারাবাহিক সংগঠিত উদ্যোগ, নীতি-বাস্তবায়ন পরিকল্পনা ও জনসম্পৃক্ত আন্দোলন গড়ে তুলতে না পারলে সেই ব্যর্থতার ঘোরটোপ থেকে দলটির মুক্তি মিলবে না বলেও তারা মনে করেন।

রাজনৈতিক বিশ্লেষক ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক সাব্বির আহমেদ রাজনীতি ডটকমকে বলেন, ‘বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের মাধ্যমে তারা জনগণের মনে প্রত্যাশার আগুন জ্বালিয়েছিল। জনগণ বিশ্বাস করেছিল, তারা বৈষম্য দূর করতে কাজ করবে। কিন্তু আজ দেখা যাচ্ছে, তাদের অনেকেই নিজেদের আখের গোছাতে ব্যস্ত। যাদের মধ্যে এখনো কোনো দৃঢ় কমিটমেন্ট নেই, জনগণের জন্য কোনো সুস্পষ্ট পরিকল্পনাও নেই— তারা কীভাবে জনগণের প্রত্যাশা পূরণ করবে?’

এনসিপিকে নিয়ে এই মুহূর্তে আর কোনো আশা দেখতে রাজি নন এই ঢাবি অধ্যাপক। তিনি বলেন, ‘তাদের বর্তমান কর্মকাণ্ড অদিশানির্ভর নৌযা নের মতো, যা রাষ্ট্রীয় নীতি ও লক্ষ্যবিহীন অবস্থায় সমুদ্রের অন্তঃপ্রবাহে ভেসে বেড়াচ্ছে। এমনও হতে পারে তারা ভবিষ্যতে বিএনপির সঙ্গে জোট করবে, কিংবা জামায়াতের সঙ্গে। কিন্তু জনগণের যে আশাবাদ একসময় তাদের ঘিরে ছিল, তারা সেটি ধরে রাখতে ব্যর্থ হয়েছে। ইউনুস সরকার না থাকলে তাদের রাজনৈতিক দুর্গতি আরও স্পষ্ট হবে। এই মুহূর্তে দলটি নিয়ে আমি একেবারেই আশাবাদী নই।’

গত রমজানে হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালে রাজনৈতিক দলগুলোকে নিয়ে ইফতার করে এনসিপি। সে আয়োজন ব্যাপক আলোচনা-সমালোচনার জন্ম দেয়। ছবি: এনসিপির ফেসবুক পেজ থেকে
গত রমজানে হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালে রাজনৈতিক দলগুলোকে নিয়ে ইফতার করে এনসিপি। সে আয়োজন ব্যাপক আলোচনা-সমালোচনার জন্ম দেয়। ছবি: এনসিপির ফেসবুক পেজ থেকে

এনসিপি জনপ্রত্যাশা পূরণের ব্যর্থ হলেও তাদের টিকিয়ে রাখার পক্ষে অভিমত জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের সরকার ও রাজনীতি বিভাগের সাবেক অধ্যাপক ড. আবদুল লতিফ মাসুমের। তিনি বলেন, ‘তারা গণঅভ্যুত্থানের অন্যতম নায়ক। তাই প্রচলিত নিয়মের বাইরে গিয়ে বা আইনের ব্যত্যয় ঘটিয়ে হলেও তাদের মূল রাজনীতির ধারায় রাখা প্রয়োজন।’

মাঠে-ময়দানে এনসিপির বিরোধিতা করলেও দলটির জন্য শুভকামনা জানিয়েছেন বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব সৈয়দ এমরান সালেহ প্রিন্সও। রাজনীতি ডটকমকে তিনি বলেন, ‘যে প্রেক্ষাপটে এনসিপি রাজনীতিতে প্রবেশ করেছে, তাতে সাধারণ মানুষের মধ্যে দলটি নিয়ে অনেক বেশি প্রত্যাশা ছিল। সেই প্রত্যাশা অনুযায়ী তারা এখনো পুরোপুরি কাজ করতে পেরেছে বলে আমি মনে করি না। তারপরও এনসিপি যেন জনগণের প্রত্যাশা অনুযায়ী এগিয়ে যেতে পারে, সে বিষয়ে আমাদের সবসময়ই শুভকামনা থাকবে।’

এগিয়ে যাওয়ার প্রত্যয় এনসিপি নেতাদের

নিজেদের সামগ্রিক সীমাবদ্ধতা মেনে নিয়েই সামনের দিকে এগিয়ে যেতে চায় এনসিপি। দলটির নেতারাও সামনে আরও বেশি জনঘনিষ্ঠ কর্মসূচি দেওয়ার আশাবাদ জানিয়েছেন। পাশাপাশি এর জন্য এনসিপির সহযোগী সংগঠনগুলোও নিবিড়ভাবে কাজ করে যাচ্ছে বলে জানিয়েছেন এসব সংগঠনের নেতারা।

এনসিপির সহযোগী সংগঠন জাতীয় যুবশক্তির কেন্দ্রীয় সংগঠক শেখ ফয়সাল রাজনীতি ডটকমকে বলেন, ‘এনসিপি শুরু থেকেই সংলাপভিত্তিক, অংশগ্রহণমূলক ও নাগরিকবান্ধব রাজনীতির ধারাকে প্রতিষ্ঠা করার লক্ষ্যে কাজ করে যাচ্ছে। আমাদের বিশ্বাস— গণতন্ত্র কেবল একটি কাঠামো নয়, এটি একটি জীবনচর্চা, যেখানে প্রতিটি নাগরিকের অধিকার, মতামত ও অংশগ্রহণ গুরুত্বপূর্ণ। আমরা নাগরিক অধিকার, উন্নয়ন ও প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর ন্যায্য প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিত করতে নতুন রাজনৈতিক ধারা তৈরির চেষ্টায় রয়েছি। বিশেষ করে তরুণ সমাজ, সুশীল সমাজ ও প্রান্তিক জনগণের মধ্যে এনসিপি যে আলোচনার জায়গা তৈরি করতে পেরেছে, তা ভবিষ্যতের জন্য আশাব্যঞ্জক।’

যুবশক্তির কেন্দ্রীয় এই নেতা আরও বলেন, ‘আমরা জানি দেশের মূলধারার রাজনীতিতে এখনো আমাদের অনেক দূর যেতে হবে, অনেক চ্যালেঞ্জ অতিক্রম করতে হবে। কিন্তু আমরা বিশ্বাস করি, ধারাবাহিকতা, জবাবদিহিতা ও জনগণের বাস্তব প্রত্যাশাকে গুরুত্ব দিয়ে আমাদের রাজনৈতিক কর্মকৌশল পরিচালনা করতে পারলে আমরা জনগণের আস্থা অর্জন করতে সক্ষম হব। এ যাত্রায় আমরা জাতীয় যুবশক্তি থেকে তরুণদের নিয়ে একটি গতিশীল ও সৃজনশীল প্ল্যাটফর্ম গড়ে তোলার কাজ করে যাচ্ছি।’

এনসিপি শ্রমিকদের কণ্ঠস্বর হতে চায় জানিয়ে আরেক সহযোগী সংগঠন জাতীয় শ্রমিক শক্তির কেন্দ্রীয় সংগঠক ফারজানা আক্তার বৃষ্টি রাজনীতি ডটকমকে বলেন, ‘দেশব্যাপী শ্রমজীবী মানুষের অধিকার আদায়, ন্যায্য মজুরি নিশ্চিত করা ও কর্মক্ষেত্রে বিশেষ করে নারী শ্রমিকদের নিরাপত্তা ও সম্মানজনক অবস্থান প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে এনসিপি জাতীয় শ্রমিক শক্তি গঠন করেছে।’

তিনি আরও বলেন, ‘বাংলাদেশের শ্রমজীবী শ্রেণি, বিশেষ করে প্রান্তিক পর্যায়ের শ্রমিকরা যেভাবে উপেক্ষিত থেকে গেছে, তাদের হয়ে সরব হওয়ার দায় আমরা নিচ্ছি। শ্রমিক শক্তির মাধ্যমে এনসিপি এমন একটি রাজনীতি দাঁড় করাতে চায়, যেখানে শ্রমিক-জনতার ঐক্য, মর্যাদা, সংগ্রাম ও মুক্তির পথ রচিত হয়। শ্রমজীবী নারীরা যে একদিকে শ্রমের, অন্যদিকে লিঙ্গের ভিত্তিতে দ্বিগুণ শোষণের শিকার, সেই বাস্তবতাও এনসিপির শ্রম রাজনীতির বিবেচনায় রয়েছে।’

দেশে দীর্ঘদিন ধরে যে একটি গ্রহণযোগ্য ও কার্যকর বিকল্পের অভাব ছিল, সব সীমাবদ্ধতার মধ্যেও এনসিপি সেখানে একটি বিশ্বাসযোগ্য নতুন রাজনৈতিক শক্তি হিসেবে সামনে এসেছে বলে মনে করেন দলটির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম আহ্বায়ক সামান্তা শারমিন। সাংগঠনিকভাবে আরও জনসম্পৃক্ত হয়ে সামনে এগিয়ে যাওয়ার কথা বলেন তিনি।

সামান্তা রাজনীতি ডটকমকে বলেন, ‘জুলাই পদযাত্রার মাধ্যমে আমরা এনসিপিকে নিয়ে গেছি প্রান্তিক মানুষের কাছে। মানুষের দুঃখ, ক্ষোভ ও প্রত্যাশার সঙ্গে নিজেদের সংযুক্ত করেছি। জুলাই হত্যাকাণ্ডের বিচার নিশ্চিত করা ও দীর্ঘদিনের অবহেলিত সংস্কার প্রক্রিয়াকে এগিয়ে নিতে আমরা প্রতিশ্রুতিশীল। অল্প সময়ের মধ্যেই এনসিপি কেবল রাজনৈতিক কাঠামো দাঁড় করায়নি, বরং নিবন্ধনের কার্যক্রম ও মাঠপর্যায়ের জনসম্পৃক্ততা দুই ক্ষেত্রেই গুরুত্বপূর্ণ অগ্রগতি অর্জন করেছে।’

সাম্প্রতিক শিক্ষকদের ন্যায্য দাবির আন্দোলনে এনসিপির সুস্পষ্ট ও দৃঢ় ভূমিকা ছিল জানিয়ে সামান্তা শারমিন বলেন, ‘আমরা শুরু থেকেই তাদের সঙ্গে থেকেছি। কারণ আমরা মনে করি, ন্যায্যতার প্রশ্নে পক্ষ নেওয়া রাজনীতির মৌলিক দায়িত্বের অংশ। আন্দোলনের সফল পরিণতির পরে শিক্ষকসমাজের পক্ষ থেকে এনসিপিকে যে ধন্যবাদ জানানো হয়েছে, তা আমাদের দায়িত্ববোধের স্বীকৃতি হিসেবেই দেখছি। এভাবেই আমরা জনগণের পাশে থেকে, জনগণের মধ্যে থেকে তাদের প্রত্যাশা পূরণে কাজ করছি। সামনেও এভাবেই কাজ করে যেতে চাই।’

ad
ad

রাজনীতি থেকে আরও পড়ুন

'১৮ কোটি মানুষের প্রত্যাশা সুষ্ঠু-নিরপেক্ষ নির্বাচন'

ড. মঈন খান আরও বলেন, ২৫ বছর আগে বিএনপি সরকার থাকাকালে আমি লক্ষ্য করেছিলাম-তারেক রহমান বাংলাদেশের রাজনীতিতে নতুন ধারা সৃষ্টি করেছিলেন। তিনি কেবল ঘরে বসে রাজনীতি করেননি, তৃণমূল পর্যায়ে গিয়ে জনগণের সঙ্গে সংযোগ গড়ে তুলেছিলেন। আজও তিনি লন্ডনে থেকেও দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলের শিক্ষার্থীদের সঙ্গে ভার্চুয়া

৭ ঘণ্টা আগে

জুলাই সনদ যেন প্রতারণার বস্তু না হয়: এনসিপি

এনসিপির সদস্যসচিব বলেন, ‘কমিশন জুলাই সনদ বাস্তবায়নের ব্যাপারে যে আন্তরিকতার জায়গা থেকে জুলাই সনদ বাস্তবায়ন আদেশ প্রস্তুত করার কর্মসূচি হাতে নিয়েছে, সেটাকে আমরা সাধুবাদ জানাই। কিন্তু সেটাও যেন কোনোভাবে জুলাই ঘোষণাপত্রের মতো করে কোনো দলের চাপে পড়ে একটা কাগুজে দলিল হিসেবে জাতির কাছে বাস্তবায়ন পরি

১০ ঘণ্টা আগে

ফ্যাসিস্ট আ.লীগের প্রত্যাবর্তন বন্ধে ঐক্যবদ্ধ থাকুন: সালাহউদ্দিন

সালাহউদ্দিন আহমদ বলেন, দুই চার কলাম লেখার জন্য আমাকে প্রায় সাড়ে নয় বছর নির্বাসনে থাকতে হয়েছে। আয়না ঘরে থাকতে হয়, নির্যাতনে কারাগারে থাকতে হয়েছে। কিন্তু কখনো সংগ্রামের পথ থেকে পিছিয়ে যাইনি।

১১ ঘণ্টা আগে

সব দলকেই নির্বাচনে অংশ নেওয়ার আহ্বান মির্জা ফখরুলের

বিএনপি মহাসচিব বলেন, ২৬ সালের ফেব্রুয়ারির মধ্যে নির্বাচনের তারিখ ঘোষণা হয়েছে। সংস্কার সনদে স্বাক্ষরিত দলগুলোর ঐক্যের মাধ্যমে আমরা একটি গ্রহণযোগ্য, অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের পরিবেশ সৃষ্টি করতে চাই। গণতন্ত্রের পুনরুদ্ধারে সবাইকে নির্বাচনে অংশগ্রহণের আহ্বান জানাচ্ছি।

১১ ঘণ্টা আগে