আফগানিস্তান সফরে মামুনুল হক, দেখবেন নারী ও মানবাধিকার পরিস্থিতি

বিবিসি বাংলা
আফগানিস্তানের রাজধানী কাবুলে তালেবান নেতার সঙ্গে বৈঠকে বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের আমির মামুনুল হক। ছবি: খেলাফত মজলিস

আফগানিস্তান সফরে গেছেন বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের আমির ও হেফাজতে ইসলামের যুগ্ম মহাসচিব মামুনুল হকসহ সাত জন। খেলাফত মজলিস বলছে, দলীয় কোনো সফর নয় এটি। তবে সফরে বিশেষভাবে আফগানিস্তানে মানবাধিকার ও নারী অধিকার বিষয়ে পশ্চিমা মহলে যে সমালোচনা রয়েছে, সে প্রসঙ্গে বাস্তব অবস্থান সরাসরি পরিদর্শন করবেন সফরকারীরা।

গতকাল বুধবার (১৭ সেপ্টেম্বর) সকালে আফগানিস্তানের রাজধানী কাবুলে পৌঁছান মামুনুল হক ও তার সফরসঙ্গীরা। তারা হলেন— হেফাজতে ইসলামের নায়েবে আমির মাওলানা আব্দুল হামিদ (মধুপুরের পীর) ও মাওলানা আব্দুল আউয়াল, ময়মনসিংহ বড় মসজিদের খতিব মাওলানা আব্দুল হক, বারিধারা মাদরাসার সিনিয়র মুহাদ্দিস মাওলানা হাবিবুল্লাহ মাহমুদ কাসেমী, জমিয়ত নেতা মাওলানা মনির হোসাইন কাসেমী ও ময়মনসিংহের স্থানীয় আলেম মাওলানা মাহবুবুর রহমান।

এক বিজ্ঞপ্তিতে মামুনুলের দল খেলাফত মজলিস বলেছে, এটি দলীয় কোনো সফর নয়। ‘ইমারাতে ইসলামিয়া’ বা তালেবান সরকারের আমন্ত্রণে সফরকারী দলটি আফগানিস্তানে গেছে। কাবুলে তাদের তালেবান সরকারের প্রধান বিচারপতি, একাধিক মন্ত্রী ও উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাদের সঙ্গে সাক্ষাৎ ও মতবিনিময় করার কথা রয়েছে।

ওই বিজ্ঞপ্তিতেই আফগানিস্তানে মানবাধিকার ও নারী অধিকার নিয়ে পশ্চিমা বিশ্বের সমালোচনার বিপরীতে বাস্তব চিত্র সফরকারী দলের পরিদর্শনের প্রসঙ্গ উল্লেখ আছে।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে খেলাফত মজলিসের মহাসচিব মাওলানা জালালুদ্দীন আহমদ বলেন, সেখানে নারী অধিকার লুণ্ঠন বা হরণ হচ্ছে কি না, এটা বাস্তবে দেখল তারা। অনেক সময় একটা বিষয়ে বিভ্রান্তিকর ধারণা থাকে। এক শ্রেণির লোক প্রচার করে যে নারীদের ঘরে আটকে রাখে। তারা জেনে আসতে পারবেন যে প্রকৃতপক্ষে বিষয়টি সত্য কি না।

এদিকে খেলাফত মজলিসের আমির ও তার প্রতিনিধি দল এমন এক সময়ে এই সফর করছেন, যখন বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকায় তার দল বিক্ষোভ কর্মসূচি পালন করছে। বৃহস্পতিবারই দলটি জুলাই সনদ বাস্তবায়নসহ পাঁচ দাবিতে ঢাকায় বিক্ষোভ মিছিল করেছে। শুক্রবার তাদের বিক্ষোভ মিছিল হবে দেশের সব বিভাগীয় শহরে।

রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের কেউ কেউ বিস্ময় প্রকাশ করে বলছেন, এখন পর্যন্ত বাংলাদেশের কোনো রাজনৈতিক দলের নেতাদের আফগানিস্তানে যাওয়ার নজির নেই। এই প্রথম কোনো দলের নেতাদের আফগানিস্তান সফরের কথা শুনছেন তারা।

খেলাফতের মহাসচিব মাওলানা জালালুদ্দীন আহমদ বলেন, সফরটি দলীয় কোনো সফর নয়, বরং ওলামা সমাজের সফর। সফরে দলের আমির মামুনুল হক থাকলেও রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব নন, এমন অনেকেও আছেন। এর আগে ২০০১ সালেও ‘ওলামা সমাজ’ আফগানিস্তান সফর করেছেন বলে দাবি করেন তিনি।

তালেবানদের সঙ্গে খেলাফত মজলিসের সম্পর্ক

রাশিয়া ছাড়া বিশ্বের অন্য কোনো দেশ তালেবান সরকারকে আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতি দেয়নি। কয়েকটি দেশ অবশ্য অর্থনৈতিক লেনদেন করছে। বাংলাদেশের কোনো দূতাবাসও নেই আফগানিস্তানে। উজবেকিস্তানের বাংলাদেশ দূতাবাস সমদূরবর্তী মিশন হিসেবে আফগানিস্তানে কাজ করে থাকে। তবে বাংলাদেশে আফগানিস্তানের দূতাবাস আছে।

আফগানিস্তানে ২০২১ সালে ক্ষমতায় ফেরার পর ক্ষমতাসীন তালেবান দেশটির নারীদের বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়া নিষিদ্ধ করে। প্রাইভেট টিউশন কেন্দ্রগুলোর প্রতি আদেশ দেয়, যেন তারা কোন ছাত্রীকে পাঠদান না করে। এসব প্রেক্ষাপটে দেশটির তালেবান সরকারের সঙ্গে বাংলাদেশের একটি রাজনৈতিক দলের কী বা কেমন সম্পর্ক, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।

খেলাফত মজলিস এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ সফরের উদ্দেশ্য সম্পর্কে জানিয়েছিল, সফরের সময় দুই দেশের আলেমদের মধ্যকার সম্পর্কান্নয়নসহ কূটনৈতিক সম্পর্ক জোরদার, ব্যবসা-বাণিজ্য, চিকিৎসা ও শিক্ষা খাতে পারস্পরিক সহযোগিতা বাড়ানোর বিষয়গুলোকে প্রতিনিধি দল আলোচনায় অগ্রাধিকার দেওয়া হবে।

সফরে খেলাফতের আমির মামুনুল হকসহ সাত সদস্যের দলটি মধ্য এশিয়ার আরও কয়েকটি দেশ সফর করবে বলে জানানো হয়েছে। দলটি জানিয়েছে, গত ১৪ সেপ্টেম্বর আমির মামুনুল হকসহ প্রতিনিধি দল ওমরাহ পালনের উদ্দেশ্যে সৌদি আরব যান। সেখানে তারা ওমরাহ আদায় শেষে বুধবার সকালে দুবাই হয়ে কাবুলে পৌঁছান।

দলটির মহাসচিব জালালুদ্দীন আহমদ বলেন, বাংলাদেশের আলেম সমাজের পক্ষ থেকে আলোচনা ও সম্পর্কোন্নয়নের জন্য এ সফর অনুষ্ঠিত হচ্ছে। যারা গেছেন, তাদের মধ্যে এমন লোকও আছেন যে রাজনীতি করেন না।

বৃহস্পতিবার ঢাকায় কর্মসূচি পালন করেছে খেলাফত মজলিস। শুক্রবার বিভাগীয় শহরে রয়েছে তাদের কর্মসূচি। এসব কর্মসূচিতে দলের আমির মামুনুল হকের অনুপস্থিতির বিষয়ে জানতে চাইলে জালালুদ্দীন বলেন, এই সফরের প্রক্রিয়া অনেক আগে থেকেই চলে আসছিল, কর্মসূচি পরে নির্ধারণ করা হয়েছে।

২০০১ সালেও বাংলাদেশের ওলামা সমাজ (ধর্মীয় ব্যক্তিত্বরা) আফগানিস্তান সফর করেছিলেন বলে দাবি জালালুদ্দীনের। তিনি জানান, ওই সফরে অংশ নেওয়া কেউই এখন বেঁচে নেই। আগের সেই সফরটি যখন হয়েছিল বলে জানানো হচ্ছে ওই সময় মোল্লা ওমরের নেতৃত্বে তালেবান সরকার আফগানিস্তানের ক্ষমতা দখল করেছিল।

খেলাফত মজলিস বাংলাদেশের মহাসচিবের দাবি, তালেবান সরকারকে অনেক দেশ স্বীকৃতি না দিলেও সমর্থন রয়েছে। সে কারণেই দুটি মুসলিম দেশের মধ্যে ব্যবসায়িক, অর্থনৈতিকসহ নানা ক্ষেত্রে সম্পর্ক উন্নয়নের জন্যই ওলামা সমাজের এই সফর করছেন।

আফগানিস্তানের ক্ষমতায় থাকা তালেবানদের সঙ্গে খেলাফতে মজলিস বাংলাদেশের কোনো সম্পর্ক রয়েছে কি না— এমন প্রশ্নে সে সম্ভাবনা নাকচ করে দেন দলটির মহাসচিব জালালুদ্দীন আহমদ। বলেন, এ পর্যন্ত কারও সঙ্গে কোনোদিন দেখা হয়নি, যোগাযোগ হয়নি, কথাও হয়নি।

‘বাংলাদেশে শরিয়াপন্থি কট্টর মডেল বাস্তবায়ন সম্ভব না’

রাজনৈতিক বিশ্লেষক ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষক অধ্যাপক ড. সাব্বির আহমেদের ধারণা, খেলাফত মজলিস হয়তো ইসলামি শাসনের মডেল নিয়ে ধারণা পেতে আফগানিস্তান সফর করছে। বাংলাদেশে এই মডেল কীভাবে কাজে লাগানো যায়, সে বিষয়ে পথ খুঁজতে চাইতে পারে দলটি।

অধ্যাপক সাব্বির বলেন, ফরমালি যেটা বিভিন্ন সোর্স থেকে শুনি বা জানি, আফগানিস্তানের ইসলামি শাসনের মডেল নিয়ে বাংলাদেশের এক শ্রেণির মানুষের মধ্যে আগ্রহ তৈরি হয়েছে। তারা ওই সম্পর্কে একটা ধারণা নেওয়ার জন্য হয়তো আফগানিস্তানে গেছে। তারা হয়তো একটা ওয়ে আউট দেখতে চাচ্ছে যে ইসলামি শাসনের মডেলটা কী। সেই মডেলটা হয়তো তারা বাংলাদেশে কাজে লাগাতে চাইতে পারে, আমি যতদূর বুঝি।

আফগানিস্তানে তালেবান সরকারের মডেল অনেক বেশি রিজিড ও শরিয়াপন্থি, অর্থাৎ খুব একটা লিবারেল না। এ ধরনের মডেল দলটি বাংলাদেশে বাস্তবায়ন করতে পারবে না বলেও মন্তব্য অধ্যাপক সাব্বিরের। খেলাফত মজলিসের নেতারা সফর শেষে দেশে ফিরে কী জানান সে পর্যন্ত অপেক্ষা করতে চান তিনি।

অধ্যাপক সাব্বির বলেন, যদি কোনো দেশে কোরআন ও সুন্নাহ বা শরিয়াহ রাষ্ট্র কায়েম হয়, তখন সেখানে শরিয়াহ আইন বাস্তবায়নের প্রশ্ন আসে। আমাদের দেশে এই আইন বাস্তবায়ন করার প্রশ্ন নেই, যেহেতু ইসলামিক সরকার নাই। আফগানিস্তানের শাসন ও সরকার ব্যবস্থা একরকম, বাংলাদেশের শাসন ও সরকার ব্যবস্থা ভিন্ন রকম। অতএব কেউ চাইলেও সেটা প্রয়োগ করতে পারবে না।

ad
ad

রাজনীতি থেকে আরও পড়ুন

বিএনপি দেশে রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা চায়: আমীর খসরু

আমীর খসরু বলেন, অনেকে অনেক কিছু চাইবে, সব জায়গায় ঐকমত্য হবে না। তবে যারা গণতন্ত্রে বিশ্বাস করে তাদের অবশ্যই জনগণের কাছে যেতে হবে। জনগণের প্রতি আস্থা না থাকলে পরাজিত শক্তির উত্থানের সুযোগ থাকবে।

৯ ঘণ্টা আগে

'তরুণরা ফাঁকা বুলি চায় না, চায় বাস্তব সুযোগ'

তারেক রহমান বলেন, আগামী ফেব্রুয়ারি মাসে অনুষ্ঠিতব্য জাতীয় নির্বাচনকে সামনে রেখে আমাদের অন্যতম দায়িত্ব হলো দেশের প্রতিটি ভোটারের আস্থা নিশ্চিত করা। সেই লক্ষ্যে, আজকের ও আগামী দিনের তরুণ প্রজন্মের আশা-আকাঙ্ক্ষার প্রতিফলন ঘটাতে একটি গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক দল হিসেবে বিএনপি ছুটে যাচ্ছে তৃণমূল থেকে শুরু

১১ ঘণ্টা আগে

‘বিএনপির ৭ হাজারের বেশি সদস্য পদচ্যুত-বহিষ্কার’

১২ ঘণ্টা আগে

নর্থ সাউথ ভার্সিটির নিষিদ্ধ ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদকসহ গ্রেপ্তার ৭

১২ ঘণ্টা আগে