মুক্তিযুদ্ধের চেতনা রক্ষার শপথ ন্যাপ-কমিউনিস্ট পার্টি-ছাত্র ইউনিয়নের গেরিলা যোদ্ধাদের

প্রতিবেদক, রাজনীতি ডটকম

মুক্তিযুদ্ধে ন্যাপ-কমিউনিস্ট পার্টি-ছাত্র ইউনিয়ন বিশেষ গেরিলা বাহিনী ও মুক্তিযোদ্ধাদের এবং শহীদ পরিবারের এক মিলনমেলা আজ ঢাকায় কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার চত্বরে অনুষ্ঠিত হয়েছে। এ সময় তারা শপথ নিলেন মুক্তিযুদ্ধের চেতনা রক্ষার।

ন্যাপ-কমিউনিস্ট পার্টি-ছাত্র ইউনিয়ন বিশেষ গেরিলাবাহিনী সমন্বয় কমিটি আয়োজিত এই মিলনমেলাটি বেলা ১১টায় জাতীয় পতাকা উত্তোলন ও জাতীয় সংগীত পরিবেশনার মধ্যদিয়ে শুরু হয়ে বিকেল ৪ টায় অনুষ্ঠান শেষ হয়।

শুরুতে স্বাগত বক্তৃতা ও মুক্তিযোদ্ধাদের পক্ষ থেকে ঘোষণাপত্র পাঠ করেন ন্যাপ-কমিউনিস্ট পার্টি-ছাত্র ইউনিয়ন বিশেষ গেরিলা বাহিনীর কমান্ডার, বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির সাবেক সভাপতি মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম। দিনব্যাপী অনুষ্ঠানে মুক্তিযোদ্ধারা মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিচারণ, সংগীত পরিবেশন ও বক্তৃতা করেন।

গেরিলা কমান্ডার ও কমিউনিস্ট পার্টির সাবেক সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা মনজুরুল আহসান খান, চট্টগ্রাম অঞ্চলের কমান্ডার ও কমিউনিস্ট পার্টির সাবেক সভাপতি মো. শাহ আলম, খুলনা আঞ্চলিক কমান্ডার ও ঐক্য ন্যাপের সভাপতি অ্যাড. এস এম এ সবুর, লক্ষ্মী চক্রবর্তী, কামরুজ্জামান ননী, আনোয়ারুল হক, অধ্যক্ষ আবু হোসেন, অ্যাড. মন্টু ঘোষ, ডা. তপন বসু, আবু মোহাম্মদ জুলফিকারসহ অন্যান্য মুক্তিযোদ্ধা স্মৃতিচারণ ও বক্তৃতা করেন।

ঘোষণাপত্রে মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম বলেন, একাত্তরের মহান মুক্তিযুদ্ধের ৫৪ বছর অতিক্রান্ত হতে চলেছে। এদেশের জনগণসেদিন অস্ত্র হাতে তুলে নিয়ে অকুতোভয় মরণপণ এক ঐতিহাহিক সশস্ত্র যুদ্ধে হানাদার পাকিস্তানি বাহিনীকে পরাজিত করে অভূতপূর্ব বিজয় অর্জন করেছিল। ৯ মাসের সেই জনযুদ্ধ ছিল বহু যুগ ধরে জনগণের রক্তে-ঘামে চলতে থা থাকা গণতন্ত্র, জাতীয় মুক্তি, শোষণ-মুক্তির তথা দেশবাসীর ‘মুক্তি সংগ্রামের’ শীর্ষ অধ্যায়। সেদিনের সে বিজয় ছিল এ যাবৎকালের ইতিহাসের বিচারে দেশবাসীর শ্রেষ্ঠ অর্জন। জাতিগতভাবে সব ধরনের রাজনৈতিক অর্থনৈতিক, সামাজিক শোষণ-আধিপত্যের অবসান ঘটিয়ে জাতীয় আত্মঅধিকার প্রতিষ্ঠা করা, তার পাশাপাশি সমাজ-অর্থনীতিতে শ্রেণিগত শোষণ-বৈষম্য দূর করার লক্ষ্যে সমাজতন্ত্র অভিমুখী আর্থ-সামাজিক ব্যবস্থা নির্মাণের পথে অগ্রসর হওয়া, জনগণের পূর্ণ গণতান্ত্রিক অধিকারের নিশ্চয়তাসহ গণতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থা ‘মুক্তিসংগ্রামের’ পর্ব ও নয় মাসের ‘মুক্তিযুদ্ধের’ মর্মবাণী।

তাকে কেন্দ্র করে জনগণের স্বপ্ন-বিজয়ের পর ৫৪ বছর পার হয়ে গেলেও মুক্তিযুদ্ধের সেই মর্মবাণী বাণী ও প্রত্যাশা আজও পূরণ হয়নি। বরঞ্চ আজ তার সিংহভাগ হাতছাড়া হয়ে গেছে। তদুপুরি মুক্তিযুদ্ধের বিরোধিতাকারী অপশক্তি আজ ঔদ্ধত্যপূর্ণ ঘোষণা দিয়ে মুক্তিযুদ্ধকে, জাতির অপার পার সম্মান ও গৌরবের সুদীর্ঘ গণসংগ্রাম ও মহান জনযুদ্ধের চিহ্নকে সরাসরি খামচে ধরে ইতিহাসের পাতা থেকে মুছে ফেলতে অভিযানে নেমেছে। বিজয়ের পর স্বাধীন দেশকে মুক্তিযুদ্ধের নির্দেশিত পথে এগিয়ে নিতে শাসককূলের ব্যর্থতার সুযোগ নিয়ে তারা এহেন রাষ্ট্রদ্রোহী তৎপরতায় লিপ্ত হয়েছে। এই সময়কালের শাসকদলগুলো তাদের সংকীর্ণ দলীয়, শ্রেণিগত, ব্যক্তিগত স্বার্থে মুক্তিযুদ্ধের ন্যারেটিভ অর্থাৎ বয়ানকে ইচ্ছামতো বিকৃত করে ঘৃণ্য অপকর্ম-অপরাধ সংগঠিত করেছে।

লাখো শহীদের পবিত্র রক্তে রঞ্জিত মুক্তিযুদ্ধের বিরুদ্ধে চরম ডানপন্থী ও সাম্প্রদায়িক অপশক্তির আক্রমণ প্রতিহত করতে হবে। তার পাশাপাশি মুক্তিযুদ্ধের মধ্য দিয়ে সৃষ্টি হওয়া জনগণের স্বপ্ন, প্রত্যাশা পুনরুদ্ধার করতে হবে। সেজন্য, শাসকশ্রেণি তার শ্রেণিগত স্বার্থে যে করে মুক্তিযুদ্ধকে কলঙ্কিত করার ও জনগণের মনস্তত্বে তাকে হেয় করার যে প্রকল্প কার্যকরভাবে রুখতে হবে। বিকৃত কৃত বয়ান তৈরি নিয়েছে তাদের প্রতিহত করতে হবে।

একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধ ছিল একটি জনযুদ্ধ। এই যুদ্ধ ও তাতে অর্জিত বিজয় কেবল সেনাবাহিনীর-মুক্তিবাহিনীর, অথবা কোনো একক নেতার বা দলের নির্মাণ ছিল না। বরং এটা ছিল কয়েক দশক ধরে বিভিন্ন নেতা ও দলের নেতৃত্বে সামগ্রিকভাবে জনগণের সক্রিয় অংশগ্রহণ, সমর্থন ও আত্মত্যাগে গড়ে ওঠা এক সার্বজনীন সশস্ত্র রাজনৈতিক সংগ্রাম। যার চূড়ান্ত পর্ব ছিল সশস্ত্র জনযুদ্ধের অধ্যায়। এ দেশের জনগণের অনন্য সংগ্রাম, ত্যাগ, ঐক্য ও শক্তিই ছিল মুক্তিযুদ্ধে বিজয়ের প্রধান নিয়ামক শক্তি। আমাদের মুক্তিযুদ্ধ পাকিস্তানকে দ্বিখণ্ডিত করে শুধু একটি নতুন দেশ, একটি নতুন পতাকা অর্জনের লক্ষ্যে পরিচালিত কোন ‘বিচ্ছিন্নতাবাদী’ আন্দোলন ছিল না। মুক্তিযুদ্ধে আপামর জনগণের লক্ষ্য ও স্বপ্ন ছিল একটি নতুন গণতান্ত্রিক, অসাম্প্রদায়িক ও সমাজতান্ত্রিক রাষ্ট্র ও সমাজ প্রতিষ্ঠা করা।

ইতিহাসের প্রকৃত মহানায়ক ও প্রধান কারিগর হলো ‘জনগণ’। কিন্তু ইতিহাস নির্মাণে ব্যাক্তির ভূমিকাকেও অগ্রাহ্য করা যায় না। নেতৃত্বের ভূমিকা ছাড়া ইতিহাস তার গন্তব্যে পৌঁছাতে পারে না। তাই, আমাদের মুক্তিযুদ্ধে ও তার পটভূমি নির্মাণের নেতৃত্ব দানের কাজে যেমন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমানের অবদান রয়েছে, তেমনই রয়েছে মওলানা ভাসানী, কমরেড মণি সিংহ, অধ্যাপক মোজাফফর আহম্মদ, শেরেবাংলা এ কে ফজলুল হক, হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী, প্রমুখ অগণিত নেতার ভূমিকা ও অবদান। তারা প্রত্যেকেই মুক্তিযুদ্ধে এবং তার পটভূমি রচনার বিভিন্ন পর্বে অনন্য ভূমিকা ও অবদান রেখে তিলে-তিলে মুক্তিযুদ্ধের পথ রচনা সম্ভব করেছে। কখনো-কখনো আওয়ামী লীগ নীতিনিষ্ঠতা-একাগ্রতা হারিয়ে আপসের পথ নিলেও এসব নেতারা কেউ কেউ নীতিতে অটল থেকে মুক্তিযুদ্ধের পটভূমি রচনার সংগ্রামকে একক শক্তিতে এগিয়ে নিয়েছেন। কমিউনিস্ট পার্টি, ন্যাপ, ছাত্র ইউনিয়ন তথা এদেশের বামপন্থি শক্তি ইতিহাস নির্মাণে সেরূপ অনন্য, ও ক্ষেত্রবিশেষে নিয়ামক ভূমিকা পালন করেছে।

আওয়ামী লীগ রাষ্ট্রক্ষমতা চিরস্থায়ীভাবে মহান মুক্তিযুদ্ধকে দলীয় পারিবারিক অর্জন হিসাবে যে ন্যারেটিভ দাঁড় করিয়েছে তা থেকে মুক্তিযুদ্ধকে মুক্ত করতে হবে। এই বিকৃত ন্যারেটিভের বাইরে এসে তার জায়গায় মুক্তিযুদ্ধের প্রকৃত ন্যারেটিভ সামনে আনতে হবে। তাছাড়া মুক্তিযুদ্ধের অর্জনগুলো মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে আর সামনে অগ্রসর করা সম্ভব হবে না।

এজন্য, একদিকে যেমন মুক্তিযুদ্ধবিরোধী প্রতিক্রিয়াশীল শক্তির ঔদ্ধত্বপূর্ণ আক্রমণ সর্বশক্তি দিয়ে প্রতিহত করতে হবে, তেমনি একইসঙ্গে মুক্তিযুদ্ধ সম্পর্কে একপেশে ও নানাভাবে বিকৃত আওয়ামী ন্যারেটিভকে খণ্ডন করে শ্রমিক-কৃষক-জনতার দৃষ্টিকোণ থেকে মুক্তিযুদ্ধের বস্তুনিষ্ঠ নিজস্ব ন্যারেটি আজ সামনে আনতে হবে।

মুক্তিযুদ্ধের বস্তুনিষ্ঠ ইতিহাস ও চেতনার আলোকে সেই গণমুক্তির সংগ্রামকে সামনে এগিয়ে নিতে হবে।

ad
ad

রাজনীতি থেকে আরও পড়ুন

শহীদ বুদ্ধিজীবীদের প্রতি তারেক রহমানের শ্রদ্ধা

তারেক রহমান লেখেন, ‘১৪ ডিসেম্বর মূলত জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তানদের স্মরণ। শহীদ বুদ্ধিজীবীরা দেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ হয়ে দেশবাসীর পাশে দাঁড়িয়েছিলেন। তারা অন্যায়ের প্রতিবাদ করেছিলেন, স্বাধীনতার পক্ষে কলম ধরেছিলেন। তাদের জীবন ও কর্ম আজও আমাদের অনুপ্রাণিত করে।’

৭ ঘণ্টা আগে

রিজভীকে প্রকাশ্যে ক্ষমা চাওয়ার আহ্বান সাদিক কায়েমের

নিজের ফেসবুক অ্যাকাউন্টে দেওয়া এক বিবৃতিতে সাদিক কায়েম বলেন, আওয়ামী লীগ-সমর্থিত একটি প্রোপাগান্ডা সেলের মাধ্যমে প্রচারিত এআই-তৈরি ছবিকে সত্য ধরে নিয়ে তার বিরুদ্ধে অপতথ্য ছড়ানো হয়েছে।

৭ ঘণ্টা আগে

হাদির ওপর হামলার মাস্টারপ্লান ধীরে ধীরে পরিষ্কার হয়ে যাচ্ছে: রিজভী

ঢাকা–৮ আসনের স্বতন্ত্র প্রার্থী ও ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র শরিফ ওসমান হাদির ওপর হামলার পেছনে একটি সুপরিকল্পিত ষড়যন্ত্র রয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব অ্যাডভোকেট রুহুল কবির রিজভী।

৮ ঘণ্টা আগে

যার অপেক্ষায় বাংলাদেশ, তিনি ফিরছেন: আমীর খসরু

বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের দেশে প্রত্যাবর্তনে জাতীয় রাজনীতিতে নতুন গতি ও উদ্দীপনা সৃষ্টি হবে বলে মন্তব্য করেছেন দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী। তিনি বলেন, এই প্রত্যাবর্তনকে সামনে রেখে বিএনপির নেতা-কর্মীদের আগাম জাতীয় নির্বাচনের জন্য সম্পূর্ণ প্রস্তুত থাকতে হবে।

৮ ঘণ্টা আগে