ডেস্ক, রাজনীতি ডটকম
গত বছরের ১৪ জুলাই তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কোটা সংস্কারের দাবিতে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের ‘রাজাকারের সন্তান’ আখ্যা দিলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (ঢাবি) অগ্নিগর্ভ হয়ে ওঠে। ক্ষোভে ফেটে পড়েন শিক্ষার্থীরা। সেদিন ঢাবির প্রথম মিছিল থেকে শুরু করে রাত পর্যন্ত ছাত্রলীগ নেতাদের ক্যাম্পাস ও হল থেকে তাড়িয়ে দেয়া এবং শ্বাসরুদ্ধকর কাঁদানে গ্যাস ও সরকারি বাহিনীর হুমকি-ধমকিকে পাশ কাটিয়ে একদল নারী শিক্ষার্থী আন্দোলনে অনড় থাকে।
কোটা সংস্কার আন্দোলন নিয়ে বাংলাদেশ সংবাদ সংস্থার (বাসস) সঙ্গে কথা বলেছেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক উমামা ফাতেমা, গণঅভ্যুত্থানে যার বিশেষ ভূমিকা ছিল।
চট্টগ্রামে জন্ম নেওয়া উমামা ফাতেমা ইস্পাহানি পাবলিক স্কুল অ্যান্ড কলেজ থেকে এইচএসসি পাশ করেন। পরে তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হন এবং বর্তমানে কবি সুফিয়া কামাল হলের আবাসিক ছাত্রী হিসেবে জৈব রসায়ন এবং আণবিক জীববিজ্ঞানে বিভাগে পড়াশোনা করছেন। উমামা জুলাই বিপ্লবকালে নারীদের সংগঠিত করেছেন। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার বাংলাদেশ ছাত্র ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্বও পালন করেন।
উমামা মনে করেন, বিক্ষোভে সামনের সারিতে থাকা বিদ্রোহী নারীরাই আন্দোলনকে একটি সফল বিপ্লবে পরিণত করেছিল।
আন্দোলনে যুক্ত হওয়া নিয়ে উমামা বলেন, 'আন্দোলন শুরু হয়েছিল ৫ জুন থেকে, হাইকোর্টের একটা রায়কে কেন্দ্র করে। সেই রায়কে প্রত্যাখ্যান করে সেদিন বিকেলেই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাধারণ ছাত্ররা সেন্ট্রাল লাইব্রেরির সামনে থেকে একটি প্রতিবাদী মিছিল বের করে। আমার এই আন্দোলনে যুক্ত হওয়া মূলত ছাত্র সংগঠনের জায়গা থেকে, যেহেতু আমি বাংলাদেশ ছাত্র ফেডারেশন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সদস্যসচিব ছিলাম। সময়ের সাথে সাথে আন্দোলনে ছাত্রদের সম্পৃক্ততা বাড়তে থাকে। এর ধারাবাহিকতায় ৯ জুন রাজু ভাস্কর্যে একটি প্রোগ্রাম ছিল। সেদিন মিছিলে প্রচুর শিক্ষার্থী জমায়েত হয়েছিল। মিছিলে নারীদের অংশগ্রহণ ছিল উল্লেখযোগ্য পরিমাণে।'
তিনি বলেন, পহেলা জুলাই থেকে নতুন করে আবার আন্দোলনটা গতি পায়। তখন আমরা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন হলের মেয়েদের সাথে সমন্বয় শুরু করি। প্রাথমিকভাবে আমি এই আন্দোলনে ছাত্র সংগঠনের একজন প্রতিনিধি হিসেবে যুক্ত হলেও পরে সে পরিচয়ে আর আবদ্ধ থাকিনি। আমি তখন বিভিন্ন ফোরামের লোকজনকে একসাথে যুক্ত করে কোটা সংস্কারের দাবিতে তাদেরকে মাঠে নামানোর দায়িত্বটা পালন করেছি।'
উমামা বলেন, ২০১৮ সালে যখন প্রথম কোটা সংস্কার আন্দোলনটি হয়, তখন সুফিয়া কামাল হলের ছাত্রলীগের প্রেসিডেন্ট ছিলেন ইশরাত জাহান এশা। তিনি তখন হলের মেয়েদের নানাভাবে অপদস্থ করতে থাকেন যাতে মেয়েরা আন্দোলনে যুক্ত না হয়। কিন্তু পরবর্তী সময়ে মেয়েরা তাকে জুতার মালা পরিয়ে হল থেকে বের করে দেয়। এসব ঘটনার কারণে সুফিয়া কামাল হলে ছাত্রলীগ কখনই শক্তিশালী হয়ে দাঁড়াতে পারেনি।
'দ্বিতীয়বারের মতো যখন এই কোটা সংস্কার আন্দোলন শুরু হয়, তখন ছাত্রলীগ ছেলেদের হলগুলোর গেট আটকে দেয় যাতে তারা আন্দোলনে অংশগ্রহণ করতে না পারে। তখন আমরা মেয়েদের হল থেকে মিছিল নিয়ে গিয়ে হলপাড়ার ছেলেদেরকে বের করে নিয়ে আসতাম। তখন আমাদের দিকে ছাত্রলীগের লোকজন পাথর, লাঠি ও জুতা ছুড়ে মারত।'
উমামা বলেন, জুলাইয়ের ১৪ তারিখের আগ পর্যন্ত মেয়েরা আন্দোলনে স্বতঃস্ফূর্তভাবে অংশগ্রহণ করেছিল। মিছিলগুলোতে প্রায় অর্ধেকের বেশি থাকতো নারী। তারা শহরের বিভিন্ন জায়গা ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থেকে আসতো । ব্লকেড কর্মসূচির ক্ষেত্রেও একইভাবে মেয়েরা অংশগ্রহণ করেছিল। মেয়েদের একটা বিরাট অংশ পুরো শাহবাগ চত্বরটা দখল করে থাকতো। আবার আমাদের সুফিয়া কামাল হলের মেয়েরা হল থেকে গুলিস্তানের জিরো পয়েন্টে গিয়ে ব্লকেড কর্মসূচি পালন করত।
'পরে ১৪ জুলাই, বঙ্গভবনে স্মারকলিপি দিয়ে আসার পরে বিকেলে ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আমাদের রাজাকারের নাতিপুতি আখ্যা দিলে মেয়েরাই সর্বপ্রথম ক্ষোভে ফেটে পড়ে এবং রাতের বেলা মিছিল নিয়ে বের হয়ে আসে। ১৫ জুলাই আমাদের একটি গ্রুপ যখন হলপাড়ায় মিছিল নিয়ে যায় তখন ছাত্রলীগের সন্ত্রাসীরা আমাদের ওপর চড়াও হয়। একপ র্যায়ে ক্যাম্পাসের বিভিন্ন প্রবেশপথ দিয়ে ছাত্রলীগের ভাড়াটে গুণ্ডারা ভেতরে প্রবেশ করে নারী-পুরুষ নির্বিচারে মারতে থেকে। সেদিন মূলত মেয়েদের টার্গেট করে মারা হয় আন্দোলনকারীদের মনোবল ভেঙে দেয়ার জন্য।'
তিনই বলনে, ১৬ জুলাই রাতের বেলা রোকেয়া হলের ছাত্রীরা ছাত্রলীগের সভাপতি আতিকা বিনতে হোসাইনকে হল থেকে বের করে দেয়। বিষয়টি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে অন্যান্য হলেও সাধারণ ছাত্র ও আন্দোলনকারীরা ছাত্রলীগ নেতাদেরকে হলছাড়া করে। এক্ষেত্রে প্রথম মেয়েদের পাঁচটি হলই ছাত্রলীগ মুক্ত হয়। এরপর সকাল ১০টা নাগাদ ছেলেদের হলগুলোও ছাত্রলীগ মুক্ত হয়ে যায়। এরই মধ্যে আবু সাঈদসহ সারা দেশের বিভিন্ন জায়গায় পুলিশের হামলায় বেশ কয়েকজন আন্দোলনকারী শহীদ হন।
ইন্টারনেট বন্ধের সময় উমামা ফাতেমার সাথে অনেক সাংবাদিকের যোগাযোগ হতো। '২০ তারিখে প্রথম যখন আব্দুল কাদের নয় দফা ঘোষণা করে সেটা কিছু পত্রিকায় ছাপা হয়। তারপর আমরা ৫২ জন সমন্বয়কের নামে একটা বিবৃতি দিয়েছিলাম। কিন্তু এটা কোনো নিউজ মিডিয়াতে তখন প্রচার করতে পারিনি। এর মাধ্যমে আমরা একটা জিনিস বুঝাতে চেয়েছিলাম যে, আমরা আন্দোলন চালিয়ে যাব এবং আমরা কোনোভাবেই সরকারের সাথে আলোচনার টেবিলে বসবো না।'
আন্দোলনে জড়িত থাকার কারণে উমামা ও তার পরিবারকে রাজনৈতিক চাপ ও হুমকির সম্মুখীন হতে হয়েছে। 'একদিন শেখ হাসিনার এক এমপি কল দিয়ে আমাকে বুঝানোর চেষ্টা করেছে, যাতে আমি আন্দোলন না করি। এনএসআই ও ডিবি থেকে কল দিয়ে বলে যে, আপনার বাড়ি কই, আপনি কোথায় পড়েন? এসব ফোন ছিল আমার জন্য মেন্টাল প্রেশার। এগুলোকে আমি খুব বড় একটা সমস্যা হিসেবে দেখিনি। খুব চিন্তা হতো যখন শুনেছি যে, আমাদের বাড়ির আশেপাশে পুলিশের পিকআপ ভ্যানে করে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অনেকে ঘুরঘুর করছে। আমাকে বিভিন্ন মহল থেকে কল দিয়ে আলোচনার টেবিলে বসার অফার দিতো। এই অফারকারীদের মধ্যে ছিল গোয়েন্দা সংস্থার মানুষজন ও সাংবাদিক। তারা বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন তথ্য দিয়ে আমাকে বিভ্রান্ত করার চেষ্টা করেছে। প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে আমাকে আমার পরিবারকে হুমকি দিয়েছে।'
জুলাই অভ্যুত্থানে নারীদের ভূমিকা নিয়ে উমামা বলেন, 'আন্দোলনের গতিপথ বন্ধ করার জন্য প্রথম দিন থেকেই নারীদের লক্ষ্যবস্তু করা হয়েছিল। ১৫ জুলাই ছাত্রলীগ ইচ্ছাকৃতভাবে ঢাবি ক্যাম্পাসে বিক্ষোভকারীদের মনস্তত্ত্বকে কাজে লাগানোর জন্য নারীদের মারধর করে। রক্তাক্ত মুখের মেয়েটির ছবি দেশব্যাপী আইকনিক হয়ে ওঠে, যা আরও বেশি মানুষের অংশগ্রহণকে টেনে আনে। এরপর, আমরা দেখলাম, পুলিশকে তার সঙ্গীদের ধরে নিয়ে যেতে বাধা দেওয়ার জন্য নারী একা দাঁড়িয়ে গেছেন। এটি এমন এক চিত্র যা আমাদের নারীদের সাহসিকতার পরিচয় দেয়। আন্দোলনের সময় আমরা দেখি বোনেরা রাস্তায় ভাইয়ের কফিন বহন করছে।'
'ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের নারী শিক্ষকরা আন্দোলনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিলেন। তারা আমাদের সহযোগিতা করেছেন এবং তৎকালীন সরকারের বিভিন্ন কর্মকাণ্ডের বৈধতা নিয়ে সরাসরি প্রশ্ন তুলেছিলেন। এই আন্দোলনে নারীরাই সবার আগে ছাত্রলীগ নেতাদের হল থেকে বের করেছিল। মেয়েরাই হলপাড়ায় মিছিল করে তাদের আটকে পড়া ভাইদের রাস্তায় নামিয়ে আনে। এখানে আমি নারীদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাচ্ছি না বা পুরুষদের সাথে তুলনা করছি না, বরং আমি কেবল বলছি আমরা কী করেছি এবং আমাদের অবদান কী ছিল। বিক্ষোভে সামনের সারিতে থাকা বিদ্রোহী নারীরাই আন্দোলনকে একটি সফল বিপ্লবে পরিণত করেছিল। এই আন্দোলনে নারীরা পিছিয়ে ছিল না বরং সম্মুখসারিতে থেকেই লড়াই করেছিল,' যোগ করেন উমামা।
গত বছরের ১৪ জুলাই তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কোটা সংস্কারের দাবিতে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের ‘রাজাকারের সন্তান’ আখ্যা দিলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (ঢাবি) অগ্নিগর্ভ হয়ে ওঠে। ক্ষোভে ফেটে পড়েন শিক্ষার্থীরা। সেদিন ঢাবির প্রথম মিছিল থেকে শুরু করে রাত পর্যন্ত ছাত্রলীগ নেতাদের ক্যাম্পাস ও হল থেকে তাড়িয়ে দেয়া এবং শ্বাসরুদ্ধকর কাঁদানে গ্যাস ও সরকারি বাহিনীর হুমকি-ধমকিকে পাশ কাটিয়ে একদল নারী শিক্ষার্থী আন্দোলনে অনড় থাকে।
কোটা সংস্কার আন্দোলন নিয়ে বাংলাদেশ সংবাদ সংস্থার (বাসস) সঙ্গে কথা বলেছেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক উমামা ফাতেমা, গণঅভ্যুত্থানে যার বিশেষ ভূমিকা ছিল।
চট্টগ্রামে জন্ম নেওয়া উমামা ফাতেমা ইস্পাহানি পাবলিক স্কুল অ্যান্ড কলেজ থেকে এইচএসসি পাশ করেন। পরে তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হন এবং বর্তমানে কবি সুফিয়া কামাল হলের আবাসিক ছাত্রী হিসেবে জৈব রসায়ন এবং আণবিক জীববিজ্ঞানে বিভাগে পড়াশোনা করছেন। উমামা জুলাই বিপ্লবকালে নারীদের সংগঠিত করেছেন। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার বাংলাদেশ ছাত্র ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্বও পালন করেন।
উমামা মনে করেন, বিক্ষোভে সামনের সারিতে থাকা বিদ্রোহী নারীরাই আন্দোলনকে একটি সফল বিপ্লবে পরিণত করেছিল।
আন্দোলনে যুক্ত হওয়া নিয়ে উমামা বলেন, 'আন্দোলন শুরু হয়েছিল ৫ জুন থেকে, হাইকোর্টের একটা রায়কে কেন্দ্র করে। সেই রায়কে প্রত্যাখ্যান করে সেদিন বিকেলেই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাধারণ ছাত্ররা সেন্ট্রাল লাইব্রেরির সামনে থেকে একটি প্রতিবাদী মিছিল বের করে। আমার এই আন্দোলনে যুক্ত হওয়া মূলত ছাত্র সংগঠনের জায়গা থেকে, যেহেতু আমি বাংলাদেশ ছাত্র ফেডারেশন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সদস্যসচিব ছিলাম। সময়ের সাথে সাথে আন্দোলনে ছাত্রদের সম্পৃক্ততা বাড়তে থাকে। এর ধারাবাহিকতায় ৯ জুন রাজু ভাস্কর্যে একটি প্রোগ্রাম ছিল। সেদিন মিছিলে প্রচুর শিক্ষার্থী জমায়েত হয়েছিল। মিছিলে নারীদের অংশগ্রহণ ছিল উল্লেখযোগ্য পরিমাণে।'
তিনি বলেন, পহেলা জুলাই থেকে নতুন করে আবার আন্দোলনটা গতি পায়। তখন আমরা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন হলের মেয়েদের সাথে সমন্বয় শুরু করি। প্রাথমিকভাবে আমি এই আন্দোলনে ছাত্র সংগঠনের একজন প্রতিনিধি হিসেবে যুক্ত হলেও পরে সে পরিচয়ে আর আবদ্ধ থাকিনি। আমি তখন বিভিন্ন ফোরামের লোকজনকে একসাথে যুক্ত করে কোটা সংস্কারের দাবিতে তাদেরকে মাঠে নামানোর দায়িত্বটা পালন করেছি।'
উমামা বলেন, ২০১৮ সালে যখন প্রথম কোটা সংস্কার আন্দোলনটি হয়, তখন সুফিয়া কামাল হলের ছাত্রলীগের প্রেসিডেন্ট ছিলেন ইশরাত জাহান এশা। তিনি তখন হলের মেয়েদের নানাভাবে অপদস্থ করতে থাকেন যাতে মেয়েরা আন্দোলনে যুক্ত না হয়। কিন্তু পরবর্তী সময়ে মেয়েরা তাকে জুতার মালা পরিয়ে হল থেকে বের করে দেয়। এসব ঘটনার কারণে সুফিয়া কামাল হলে ছাত্রলীগ কখনই শক্তিশালী হয়ে দাঁড়াতে পারেনি।
'দ্বিতীয়বারের মতো যখন এই কোটা সংস্কার আন্দোলন শুরু হয়, তখন ছাত্রলীগ ছেলেদের হলগুলোর গেট আটকে দেয় যাতে তারা আন্দোলনে অংশগ্রহণ করতে না পারে। তখন আমরা মেয়েদের হল থেকে মিছিল নিয়ে গিয়ে হলপাড়ার ছেলেদেরকে বের করে নিয়ে আসতাম। তখন আমাদের দিকে ছাত্রলীগের লোকজন পাথর, লাঠি ও জুতা ছুড়ে মারত।'
উমামা বলেন, জুলাইয়ের ১৪ তারিখের আগ পর্যন্ত মেয়েরা আন্দোলনে স্বতঃস্ফূর্তভাবে অংশগ্রহণ করেছিল। মিছিলগুলোতে প্রায় অর্ধেকের বেশি থাকতো নারী। তারা শহরের বিভিন্ন জায়গা ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থেকে আসতো । ব্লকেড কর্মসূচির ক্ষেত্রেও একইভাবে মেয়েরা অংশগ্রহণ করেছিল। মেয়েদের একটা বিরাট অংশ পুরো শাহবাগ চত্বরটা দখল করে থাকতো। আবার আমাদের সুফিয়া কামাল হলের মেয়েরা হল থেকে গুলিস্তানের জিরো পয়েন্টে গিয়ে ব্লকেড কর্মসূচি পালন করত।
'পরে ১৪ জুলাই, বঙ্গভবনে স্মারকলিপি দিয়ে আসার পরে বিকেলে ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আমাদের রাজাকারের নাতিপুতি আখ্যা দিলে মেয়েরাই সর্বপ্রথম ক্ষোভে ফেটে পড়ে এবং রাতের বেলা মিছিল নিয়ে বের হয়ে আসে। ১৫ জুলাই আমাদের একটি গ্রুপ যখন হলপাড়ায় মিছিল নিয়ে যায় তখন ছাত্রলীগের সন্ত্রাসীরা আমাদের ওপর চড়াও হয়। একপ র্যায়ে ক্যাম্পাসের বিভিন্ন প্রবেশপথ দিয়ে ছাত্রলীগের ভাড়াটে গুণ্ডারা ভেতরে প্রবেশ করে নারী-পুরুষ নির্বিচারে মারতে থেকে। সেদিন মূলত মেয়েদের টার্গেট করে মারা হয় আন্দোলনকারীদের মনোবল ভেঙে দেয়ার জন্য।'
তিনই বলনে, ১৬ জুলাই রাতের বেলা রোকেয়া হলের ছাত্রীরা ছাত্রলীগের সভাপতি আতিকা বিনতে হোসাইনকে হল থেকে বের করে দেয়। বিষয়টি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে অন্যান্য হলেও সাধারণ ছাত্র ও আন্দোলনকারীরা ছাত্রলীগ নেতাদেরকে হলছাড়া করে। এক্ষেত্রে প্রথম মেয়েদের পাঁচটি হলই ছাত্রলীগ মুক্ত হয়। এরপর সকাল ১০টা নাগাদ ছেলেদের হলগুলোও ছাত্রলীগ মুক্ত হয়ে যায়। এরই মধ্যে আবু সাঈদসহ সারা দেশের বিভিন্ন জায়গায় পুলিশের হামলায় বেশ কয়েকজন আন্দোলনকারী শহীদ হন।
ইন্টারনেট বন্ধের সময় উমামা ফাতেমার সাথে অনেক সাংবাদিকের যোগাযোগ হতো। '২০ তারিখে প্রথম যখন আব্দুল কাদের নয় দফা ঘোষণা করে সেটা কিছু পত্রিকায় ছাপা হয়। তারপর আমরা ৫২ জন সমন্বয়কের নামে একটা বিবৃতি দিয়েছিলাম। কিন্তু এটা কোনো নিউজ মিডিয়াতে তখন প্রচার করতে পারিনি। এর মাধ্যমে আমরা একটা জিনিস বুঝাতে চেয়েছিলাম যে, আমরা আন্দোলন চালিয়ে যাব এবং আমরা কোনোভাবেই সরকারের সাথে আলোচনার টেবিলে বসবো না।'
আন্দোলনে জড়িত থাকার কারণে উমামা ও তার পরিবারকে রাজনৈতিক চাপ ও হুমকির সম্মুখীন হতে হয়েছে। 'একদিন শেখ হাসিনার এক এমপি কল দিয়ে আমাকে বুঝানোর চেষ্টা করেছে, যাতে আমি আন্দোলন না করি। এনএসআই ও ডিবি থেকে কল দিয়ে বলে যে, আপনার বাড়ি কই, আপনি কোথায় পড়েন? এসব ফোন ছিল আমার জন্য মেন্টাল প্রেশার। এগুলোকে আমি খুব বড় একটা সমস্যা হিসেবে দেখিনি। খুব চিন্তা হতো যখন শুনেছি যে, আমাদের বাড়ির আশেপাশে পুলিশের পিকআপ ভ্যানে করে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অনেকে ঘুরঘুর করছে। আমাকে বিভিন্ন মহল থেকে কল দিয়ে আলোচনার টেবিলে বসার অফার দিতো। এই অফারকারীদের মধ্যে ছিল গোয়েন্দা সংস্থার মানুষজন ও সাংবাদিক। তারা বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন তথ্য দিয়ে আমাকে বিভ্রান্ত করার চেষ্টা করেছে। প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে আমাকে আমার পরিবারকে হুমকি দিয়েছে।'
জুলাই অভ্যুত্থানে নারীদের ভূমিকা নিয়ে উমামা বলেন, 'আন্দোলনের গতিপথ বন্ধ করার জন্য প্রথম দিন থেকেই নারীদের লক্ষ্যবস্তু করা হয়েছিল। ১৫ জুলাই ছাত্রলীগ ইচ্ছাকৃতভাবে ঢাবি ক্যাম্পাসে বিক্ষোভকারীদের মনস্তত্ত্বকে কাজে লাগানোর জন্য নারীদের মারধর করে। রক্তাক্ত মুখের মেয়েটির ছবি দেশব্যাপী আইকনিক হয়ে ওঠে, যা আরও বেশি মানুষের অংশগ্রহণকে টেনে আনে। এরপর, আমরা দেখলাম, পুলিশকে তার সঙ্গীদের ধরে নিয়ে যেতে বাধা দেওয়ার জন্য নারী একা দাঁড়িয়ে গেছেন। এটি এমন এক চিত্র যা আমাদের নারীদের সাহসিকতার পরিচয় দেয়। আন্দোলনের সময় আমরা দেখি বোনেরা রাস্তায় ভাইয়ের কফিন বহন করছে।'
'ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের নারী শিক্ষকরা আন্দোলনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিলেন। তারা আমাদের সহযোগিতা করেছেন এবং তৎকালীন সরকারের বিভিন্ন কর্মকাণ্ডের বৈধতা নিয়ে সরাসরি প্রশ্ন তুলেছিলেন। এই আন্দোলনে নারীরাই সবার আগে ছাত্রলীগ নেতাদের হল থেকে বের করেছিল। মেয়েরাই হলপাড়ায় মিছিল করে তাদের আটকে পড়া ভাইদের রাস্তায় নামিয়ে আনে। এখানে আমি নারীদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাচ্ছি না বা পুরুষদের সাথে তুলনা করছি না, বরং আমি কেবল বলছি আমরা কী করেছি এবং আমাদের অবদান কী ছিল। বিক্ষোভে সামনের সারিতে থাকা বিদ্রোহী নারীরাই আন্দোলনকে একটি সফল বিপ্লবে পরিণত করেছিল। এই আন্দোলনে নারীরা পিছিয়ে ছিল না বরং সম্মুখসারিতে থেকেই লড়াই করেছিল,' যোগ করেন উমামা।
এই পাথর ছোট হলে হয়তো আপনি টেরও পাবেন না। কিন্তু যখন পাথরটা বড় হতে থাকে কিংবা কিডনির ভেতর থেকে ইউরেটারে (প্রস্রাবের পথ) নেমে যায়, তখন অসহ্য যন্ত্রণা শুরু হয়। অনেক সময় এই যন্ত্রণা এতটাই তীব্র হয় যে রোগী ব্যথায় ছটফট করতে থাকে, মেঝেতে গড়াগড়ি দেয়, ঠিক মতো দাঁড়াতে বা বসতে পারে না।
১৪ ঘণ্টা আগেগত বছরের জুলাই গণঅভ্যুত্থানে দেশের নারীরা গৌরবময় ভূমিকা রেখেছেন৷ তারা রাজপথে লড়াই করেছেন৷ মিছিলের সামনে থেকে নেতৃত্ব দিয়েছেন, জীবন দিয়েছেনও অনেকে৷ কিন্তু সেই নারীরা যে বৈষম্যহীন সমাজের স্বপ্ন দেখেছিলেন তা এখন হতাশায় পরিণত হয়েছে৷
১৭ ঘণ্টা আগেদক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোতে, বিশেষ করে ভারত ও পাকিস্তানে আমকে কেন্দ্র করে কূটনীতি ও পরস্পরের মধ্যে বাণিজ্য প্রতিযোগিতা অবশ্য নতুন কিছু নয়। দিল্লি ও ইসলামাবাদ দীর্ঘদিন ধরেই নিজেদের সেরা জাতের আম বিশ্বনেতাদের উপহার দিয়ে আসছে।
১ দিন আগেগ্রামীণফোন, রবি, বাংলালিংক কিংবা টেলিটক—স্বয়ংক্রিয়ভাবে এই ইন্টারনেট সুবিধা উপভোগ করতে পারবেন।
২ দিন আগে